ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জননিরাপত্তাহীন কর্মসূচি চাই না

লীনা পারভীন | প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ০৩ আগস্ট ২০২৩

আবারও উত্তাল হতে শুরু করেছে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনের আর মাত্র চার/পাঁচ মাস বাকি। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন। এবারের সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একনাগাড়ে ক্ষমতায় আছে ১৪ বছর ধরে। বিএনপির মতো ক্ষমতামুখী বড় রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে আছে এই পুরোটা সময়। এবারও যদি তারা নির্বাচনে না আসে বা নিদেনপক্ষে দলকে বাঁচানোর কোনো প্রকার কার্যক্রম না দেখায় তাহলে দলের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা আছে। নেতাকর্মীরা অনেকেই দলবদল করে ক্ষমতাসীন দলে ভিড় করেছেন। যারা আছেন তারাও হতাশায় ভুগছেন।

কর্মসূচি, পাল্টা-কর্মসূচি চলছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই নিজেদের সেরাটা দেখাতে চাচ্ছে। মিছিলের বা কর্মী-সমর্থকদের জমায়েতের মাধ্যমে শোডাউন পুরোনো হিসাব। ভোটের হিসাবে আওয়মী লীগ বিএনপি’র ভোটের পার্সেন্টিজ কারও চেয়ে কম নয়। যতটা ওঠানামা করে সেটাই হয়ে যায় নির্ধারণী বিষয়।

২০০৮ সালের পর মূলত বিএনপি আর তেমনভাবে নির্বাচনে আসেনি। ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কট করেছিল। এরপরের আর কোনো নির্বাচনেই বিএনপি দল হিসেবে অংশ নেয়নি। সব হিসাব নিকাশ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনকে যদি আমরা উদাহরণ হিসেবে ধরে নেই তাহলে সেখানে দেখা যায় মোট ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অতীতের সব হিসাব পেছনে ফেলে মোট ৮৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। সর্বাধিক ভোট কাস্টের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসীন হয় যাকে বলা হয় ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাক্সে ভোট পড়েছিল ৪৮ শতাংশ আর বিএনপি পেয়েছিল ৩২ শতাংশ। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ৪০.৯৭ শতাংশ আর আওয়ামী লীগ ৪০.১৩ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, হিসাব বলছে আওয়ামী লীগের ভোটার সংখ্যা সবসময়ই ৪০ শতাংশ আশেপাশেই ছিল, যা বরং বেড়েছে আর বিএনপির কমেছে।

এতো হিসাব দেওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে দেশের মোট জনসংখ্যার যে বিশাল অংশ ভোটাধিকার প্রয়োগের যোগ্য যারা প্রায় কাছাকাছি পরিমাণে দুটি দলের মাঝে ভাগ হয়ে আছে। কেউ কারও চেয়ে কম নয় এ শক্তি বা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় দলগুলো। কিন্তু আমরা ভোটাররা কী পাচ্ছি এই শোডাউনের মাধ্যমে?

২০১৩-১৪ সালের রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কথা আমরা ভুলে যাইনি। সে সময় নির্বাচনের আগে ও পরের বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধনে দেশজুড়ে যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সেটি কি আবারও ঘটবে এবার? আমরা কি আবারও তেমনি এক আতঙ্কিত পরিবেশের মাঝে পড়তে যাচ্ছি? এমন আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ বিশেষ করে বিএনপি’র কর্মসূচি মানেই সেখানে বাসে আগুন দেওয়া, পুলিশের ওপর হামলা, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, লাঠি দিয়ে হামলা ইত্যাদি ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

২৯ তারিখে রাজধানীর প্রবেশমুখে বিএনপির ডাকা অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ২৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এসেছে। পুলিশের উপরেও হামলা হয়েছে এমন ভিডিও বা সংবাদও এসেছে। ২৮ তারিখে আওয়ামী লীগ ও বিএন পি উভয় দলই সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর থেকেই চলতে থাকে জনমনে আতঙ্ক ও আশঙ্কা। ২৮ তারিখে রাস্তায় বের হয়ে দেখা যায় সন্ধ্যার পর অবিশ্বাস্যভাবে সব রাস্তা ফাঁকা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাস্তা ফাঁকা থাকবে এটা ঢাকায় বাস করা একজন নাগরিক কখনও স্বপ্নেও দেখার সাহস করবে না। সেদিন মতিঝিল থেকে ধানমন্ডিতে আসতে সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিট। অকল্পনীয়। ২/৩ ঘণ্টার রাস্তা ২০ মিনিটে কেমন করে হয়?

পরদিনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে মানুষ অতিমাত্রায় সতর্ক হয়ে বাস্তায় গাড়ি বের করেনি। সন্ধ্যার আগেই হয়তো বাসায় ফিরে গেছে সবাই। একান্ত কাজ না থাকলে কেউ বের হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সমাবেশকে কেন্দ্র করে কী কী হতে পারে এমন আশঙ্কার পোস্টও দিয়েছে।

এই যে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অস্বাভাবিক আচরণ এটা হয়েছে আগের অভিজ্ঞতা থেকেই। তাই আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন তারা যাই করুক অন্তুত জনজীবনে যেন এর বিরূপ প্রভাব না আসে। আর কোনো মায়ের কোল খালি চাই না আমরা। আর কোনো গাড়িতে আগুন দিয়ে জীবনকে পঙ্গু যেন না করা হয়। পুলিশও এদেশেরই নাগরিক। যে পুলিশকে আপনারা মারছেন তারও পরিবার আছে। তারও জীবনের মায়া আছে। কোনোভাবেই আপনাদের অধিকার আসে না পুলিশের ওপর হামলা করার।

প্রশাসনকে যেমন সতর্ক হতে হবে তেমনি রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও সাবধান হতে হবে যেন তাদের ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো আতঙ্ক নেমে না আসে। এরাইতো ভোটার। এদের ভোটের জন্যই আপনাদের এতো কষ্ট। তাহলে কেন আপনি এদেরই আগুনে পুড়িয়ে মারছেন?

বিএনপির নেতাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রইলো আপনাদের অতীত কর্মকাণ্ড আমাদের সাথে আপনাদের বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ দেয়। ২০০১ সালে আপনারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন কিন্তু আস্থা আপনারা রাখতে পারেননি। আপনাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমাদেরকে বিষিয়ে দিয়েছিল। আমরা সাধারণ নাগরিকেরা আর কোনো সন্ত্রাসী দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না।

লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন