ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

এআইয়ের কারণে প্রেজেন্টাররা কি চাকরি হারাবেন?

ফুরকানুল আলম | প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ২৩ জুলাই ২০২৩

ভারতে তুমুল জনপ্রিয় রোবট সিনেমার গল্পে নিজের ক্লোন রোবট তৈরি করেন বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করা সুপার স্টার রজনীকান্ত। ঘটনা পরম্পরায় সেই রোবট নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। ভালোবেসে ফেলে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করা ঐশ্বরিয়া রায়কে। ম্যানুপুলেশনের কারণে এক পর্যায়ে হয়ে ওঠে ধ্বংসাত্মক। যাতে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে মানব সমাজ। যদিও উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের রীতি অনুযায়ী ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ তত্ত্ব মেনে রোবটকে হারিয়ে দেয় মানব মস্তিষ্ক। শঙ্কা কাটে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স- এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বাস্তব জীবনেই নতুন এক শঙ্কায় কোটি কোটি মানুষ। এই বুঝি গেলো রুটি-রুজি। এমন ধারণায় ধর্মঘট পর্যন্ত করেছেন হলিউডের চিত্রনাট্যকার ও কলাকুশলীদের সংগঠন। যাতে থমকে গেছে সিনেমা-টিভি সিরিজসহ নানান প্রকল্প। শিল্পীরা তাদের পারিশ্রমিক ও কাজের নিশ্চয়তা চেয়ে রাজপথে সমাবেশও করেছেন।

চীন, কুয়েত, ভারতের পথ ধরে বাংলাদেশেও এআই টুলস ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে সংবাদ পাঠিকা। গত ১৯ জুলাই যাকে উপস্থাপন করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল২৪. তার নাম দেওয়া হয়, অপরাজিতা। যাকে নিয়ে মূলধারার গণামধ্যমতো বটেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সামনে আসছে, সেটি হলো মানব সংবাদ পাঠক-পাঠিকাদের দিন তবে কি ফুরিয়ে এলো। এমন শঙ্কা দর্শক থেকে খোদ সংবাদ পাঠক-পাঠিকাদেরও। পক্ষে-বিপক্ষে ফুলকি ছুটছে নানান যুক্তি-তর্কের।

আমার ধারণা ও তীব্র বিশ্বাস, এআইয়ের এই প্রযুক্তির কারণে নিউজ অ্যাংকারদের কাজের সুযোগ আরও বাড়ছে। যা হবে বহুমাত্রিক। আমরা চাই বা না চাই, চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যুগে প্রবেশ করেছি। যেখানকার বড় পরিবর্তনের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ। বাংলাদেশে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের লিফট চলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়।

একাধিক লিফট ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই প্রযুক্তির ওপর। যাতে স্ক্রিনে কাঙ্ক্ষিৎত তলার নম্বরে টাচ করলেই কোন লিফটে উঠতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। বিভিন্ন তলায় যেতে লিফটের ভেতরে কোনো বাটন থাকে না। আমাদের স্মার্ট মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের আলো কতটুকু প্রয়োজন, সেটিও প্রয়োজনমাফিক কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় এআই। এমন কত শত সুবিধা দিচ্ছে এই প্রযুক্তি।

সাংবাদিকতায় কম্পিউটার ব্যবহারের যুগ সন্ধিক্ষণে চাকরি জীবনের শুরু আমার। হাতে লেখার বদলে নিজের ক্রিপ্ট সরাসরি কম্পিউটারে টাইপ করতে হয়, ধীরে ধীরে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছিল তখন। বর্ষীয়ান ও নাম করা অনেক সাংবাদিককে দেখেছি কম্পিউটার ভীতিতে আতঙ্কগ্রস্ত হতে। তাদের কাছে কম্পিউটার যেন ভিনগ্রহের ভৌতিক কোনো প্রাণী। আরেক দলের ছিল অস্বস্তি। কারণ, কোনো স্ক্রিপ্ট মাথায় এলে দ্রুত তা লিখে ফেলতে না পারলে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। তাদের কাছে কম্পিউটারের চেয়ে হাতে লিখে এ কাজটি করা অনেক আয়েশের। অথচ দুপক্ষই বুঝতে পারছিল না, অজস্র জটিল কাজ সহজেই করা যায় এই যন্ত্রে।

পত্রিকার সাংবাদিকরা কম্পিউটার শেখায় একটি গ্রুপ অবশ্য চাকরি হারিয়েছে। তারা হলেন টাইপ করার পেশায় যারা ছিলেন। সাংবাদিকদের হাতে লেখা স্ক্রিপ্ট কম্পিউটারে কম্পোজ করতেন তারা। যাদের না ছিল ভাষা জ্ঞান, না ছিল সাংবাদিকতার ন্যূনতম হাতেখড়ি। এখন এআইয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। অসাংবাদিক সংবাদ পাঠক-পাঠিকাদের দিন শেষ হতে চলেছে। মেকআপ করে তোতাপাখির মতো দেখে দেখে রিডিং পড়ার জন্য আগামীতে আর মানব সংবাদ পাঠকের প্রয়োজন পড়বে না।

লেখক: নিউজ এডিটর, চ্যানেল২৪।

এইচআর/ফারুক/এমএস