ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

স্মার্ট জনশক্তি ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন

ড. হাসিনুর রহমান খান | প্রকাশিত: ১০:১২ এএম, ০৭ জুলাই ২০২৩

যে কোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ| দেশের মানুষের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন| তবে যে দেশের জনসংখ্যার আকার বিদ্যমান সব ধরনের সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি, সেখানে উন্নয়নের শ্লতগতি কিংবা গতিহীন উন্নয়ন দেখা মেলে| সম্পদের আকারের তুলনায় জনসংখ্যার আকার ব্যাপক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সম্প্রতি যে উন্নয়নের গতি বজায় রেখেছে তা অনেককেই বিস্মিত করে তুলছে| এরপরও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের জনসংখ্যাকে কতটা প্রস্তুত করতে হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অর্থাৎ ডিজিটাল, শারীরিক এবং জীব বিজ্ঞানের সিস্টেমের সমন্বিতকরণ দ্বারা চলমান প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে বোঝায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, স্বয়ংচলিতকরণ, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এবং বিগ ডেটা ইত্যাদি বিষয়ের বিশেষ উন্নয়ন শিল্পের প্রসার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সাধিত করে। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ওপর ভর করে প্রথম থেকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব মূলত সংগঠিত হলেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাথমিক ভিত্তি বলে ধরে না হয়|

দেশে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক হলেও সবমিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক, মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সাইন সম্পর্কিত উচ্চ শিক্ষার এবং গবেষণার সুযোগ রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা খুব বেশি নেই| যাদের রয়েছে তাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও আবার অনেক ডিসিপ্লিনের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় অনেক কম| ব্যাপক চাহিদা থাকায়, গ্রাজুয়েটসরা বের হয়ে বেশিরভাগই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, কেউ কেউ দেশের মধ্যে আকর্ষণীয় চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন|

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় এই সব শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদের ব্যাপকভাবে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারছি না| পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে ব্যাপক ভিত্তিক আলোড়ন তৈরি ছাড়া এক্ষেত্রে সফলতা আসবে বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না| দেশের জনসংখ্যা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান|

অর্থনৈতিক পরিবর্তন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবটি অর্থনীতিতে সম্পর্কিত মূল্যবান পরিবর্তন আনে, যা বিভিন্ন প্রযুক্তির আবিষ্কার, কারিগরি বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাস্তবিকতা, ডিজিটাল ও জৈবিক বিজ্ঞানের সমন্বিত আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। এই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং এর যথাযথ প্রায়োগ্রিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কাজের সুবিধা, চাকরি সৃষ্টি এবং অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হয়। ফলে দ্রুত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এবং দরকারি মানব সম্পদকে আকর্ষণ করতে পারে| ফলে স্থানীয়ভাবে অথবা আন্তর্জাতিকভাবে চাকরির সুযোগ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারা তৈরি হয়। এ অবধারিত অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য জনসংখ্যার মধ্যে দক্ষ দরকারি মানবসম্পদ তৈরি করা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে|

শ্রম বাজারের পরিবর্তন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কারিগরি বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শ্রম বাজারে লক্ষিত পরিবর্তন এনে দেয়। রুটিন এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এমন সব কাজগুলো রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মেশিন লার্নিং দখলে নেয়। এই পরিবর্তনের ফলে মানুষ এ সব কাজ হারায়| ফলে বেকারত্ব সৃষ্টি হতে পারে| এই মানুষগুলোর জন্য পর্যাপ্ত কারিগরি শিক্ষা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং পুনর্বাসনের প্রয়োজন হতে পারে। একই সময়ে, প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে, যা দেশের বিদ্যমান জনশক্তির সংজ্ঞায়িত রূপ পরিবর্তন করতে পারে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তিনির্ভর কলকারখানা ও শিল্পের যে নতুন ধারার কর্মসংস্থানের বৈচিত্র্যতা দেখা দেবে সে ব্যাপারে এখনই প্রাক জরিপ চালিয়ে মানবসম্পদের চাহিদার পরিমান নিরূপণ করা দরকার| আর এই প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ সঠিকভাবে সংস্থান দিতে পারে এমন সব প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতাও সাথে সাথে তৈরি করা দরকার।

জনসংখ্যা পরিবর্তন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবটি জনসংখ্যা পরিবর্তনেও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা পরামর্শ ও জীবনের মান উন্নতি হতে পারে। এ কারণে মৃত্যুর হার কমে যেতে পারে এবং জীবনযাপনের সময়কাল বৃদ্ধি পায় বা মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পায়। ফলে জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়| তাছাড়াও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে প্রজনন স্বাস্থ্য এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও প্রভাবিত হতে পারে। বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জনসংখ্যার নতুন অভিঘাতের সৃষ্টি হতে পারে যদি বয়স্ক জনসংখ্যা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়| জনসংখ্যার তরুণ অংশটি প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে, ফলে জনসংখ্যার মধ্যে জনশক্তির আকার এবং বয়সভিত্তিক চাহিদারও পরিবর্তন ঘটবে|

নগরায়ণ: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সাধারণত নগরায়ণ সৃষ্টি করে, যা প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল সংযোগের ফলে শিল্পের উন্নয়নের জন্য অবধারিতভাবে আসে। আধা শহর শহরে কিংবা গ্রাম শহরে পরিণত হতে পারে| নগরায়ণের কারণে প্রয়োজনীয় নাগরিক অবকাঠামো ও সুযোগ সুবিধা না থাকলে তা জনসংখ্যার জন্য তেমন সুফল বয়ে আনে না| জনসাস্থ্য রক্ষার বিপরীতে কাজ করে| শহরের মানুষের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্পদ পরিচালনা, জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক সেবা সরবরাহের মতো বিষয়গুলোর গুরুত্ব সামনে চলে আসে।

প্রযুক্তি অনুসরণ এবং অ্যাক্সেস: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবটি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির অ্যাক্সেসকে সহজ করে দেয়। এই পরিবর্তনের ফলে জনসংখ্যার আগ্রহ এবং অনুসরণ বাড়ে। বিশেষ করে তরুণ জনসংখ্যার আগ্রহ থাকে সবার উপরে| আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত কাজ করার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং জ্ঞানের আবশ্যকতা বৃদ্ধি পায়। ওই সম্পর্কিত গবেষণা এবং পড়াশোনার চাহিদাও ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে|

শিক্ষার উন্নয়ন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং জনসংখ্যার সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো শিক্ষার উন্নয়ন। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন পেশা সৃষ্টি করতে পারে এমন ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন জোরালো হয়। নতুন পেশা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেশাগত প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব বাড়তে থাকবে।

এছাড়া বিদ্যমান উচ্চশিক্ষায় সম্প্রসারণ করে নতুন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে সৃজনশীল মানবসম্পদ তৈরি করার সুযোগ বাড়বে। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে একরকম আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যা দেশের শিক্ষার উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা পালন করে।

বাণিজ্য এবং আর্থিক উন্নয়ন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং জনসংখ্যা পরিবর্তন আর্থিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমিয়ে দিতে পারে, বাণিজ্যিক কার্যক্রম সহজ করে এবং আর্থিক সম্পদ উন্নয়নে সাহায্য করে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা অনেক। প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা উৎপাদন পদ্ধতি এবং বাজারের প্রচার-প্রসারের নতুন মাধ্যম প্রয়োগ করা হয়। ই-কমার্স, মোবাইল মার্কেটিং, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, ভার্চুয়াল ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দিক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। যে কোনো একটি মাত্রার বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত নীতি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বিষয়ে এবং শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এই পরিবর্তনের ফলে জনসংখ্যার সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বিষয়ে নতুন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি হবে।

কর্মসংস্থান ও কর্মসংস্থান উন্নয়ন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ও কর্মসংস্থানের উন্নয়নে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজন ক্ষেত্রে তৈরি করবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, যেমন- রোবটিক্স, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, বারকোড প্রযুক্তি ইত্যাদি। একদিকে, এটি নতুন সুযোগ তৈরি করবে যার মাধ্যমে এমার্জিং প্রযুক্তিতে দক্ষতা প্রয়োজন হবে।

অন্যদিকে ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান ও নতুন উদ্ভাবনী নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করবে। সুতরাং, কর্মসংস্থান উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কর্মপদ্ধতি যেমন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী দক্ষতায় উন্নতি করা এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম সরবরাহ করা যাতে মানুষকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ করে তোলা যায়।

সামাজিক পরিবর্তন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও জনসংখ্যার পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের গতিবিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে মানব সমাজে পরিবর্তন আসে, যেমন ডিজিটাল সমাজের উদ্ভব, সোশ্যাল মিডিয়া ও নেটওয়ার্কিং সাইটের প্রভাব, ডিজিটাল যোগাযোগের প্রভাব ইত্যাদি। এছাড়া নতুন পেশা সৃষ্টি হয়েছে, যেমন কম্পিউটার প্রোগ্রামার, ডিজিটাল মার্কেটার, ইথিক্যাল হ্যাকার, ব্লগার ইত্যাদি।

এভাবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও জনসংখ্যা পরিবর্তন একইসাথে যুক্তিসংযোগ রাখে এবং তাদের মধ্যে একটি নিকট সম্পর্ক রয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং প্রযুক্তির প্রচুর উপস্থিতি দ্বারা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ সুবিধা সম্ভব হচ্ছে, যা ভৌগোলিক বিভেদ ভেঙে নিজেকে বিভিন্ন পেশাদারি পরিবেশেজুড়ে দিচ্ছে, যার মাধ্যমে মানুষদের অভিযোগ করা, সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবাদ্বারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামাজিক দূরত্বগুলো মিটাতে পারছে।

মানবসম্পদের পরিবর্তন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে মানবসম্পদের চাহিদা ও বিনিয়োগ পরিবর্তিত হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে বোর্ডব্যান্ড, ইন্টারনেট সংযোগ, ক্লাউড কম্পিউটিং, এআই, মেশিন লার্নিং ইত্যাদির ব্যবহারে দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন হচ্ছে। মানবসম্পদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি এবং টেকনিক্যাল স্কিলের উন্নয়নের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন করা দরকার হবে।

সামরিক সংস্থান ও সুরক্ষা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে সামরিক সংস্থান ও সুরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়েছে। উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা সুরক্ষা প্রশিক্ষণ, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধবিমান, নিউক্লিয়ার সুরক্ষা, সাইবার সুরক্ষা ইত্যাদি এর উন্নয়ন করা হচ্ছে। এছাড়া সুরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ, জাতি ও গ্রুপের মধ্যে সহযোগিতা এবং তদন্ত প্রসারিত হচ্ছে।

বাজার প্রসারের সুযোগ: উন্নয়নশীল দেশের বেশি জনসংখ্যা থেকে বিপণন ও বাজার প্রসার করা যায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি মূল লক্ষ্য হলো প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা প্রদান করা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রয়োগ এবং উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বাজার প্রসার করা সহজ হয়ে উঠেছে। অত্যন্ত সহজেই বাজারপ্রসারণের জন্য ব্যবসা করার জন্য মার্কেটপ্লেস ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবাগুলো উন্নত হয়ে ওঠার ফলে সমাজের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে সমাজের মধ্যে সামঞ্জস্য এবং সমতা বৃদ্ধি পায়, যেটি অজানা বা অপরিচিত সেক্টরে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি করে। উন্নয়নশীল দেশের বেশি জনসংখ্যাকে দ্রুত সহায়তা করতে পারে এমন উন্নত প্রযুক্তি এবং নতুন পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের জন্য বিপণন প্রসার ঘটাতে হবে। এটি নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আর্থিক উন্নয়ন পথে দেশকে সহায়তা করে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অর্থনীতিক পরিবর্তন, শ্রম বাজারের পরিবর্তন, জনসংখ্যা পরিবর্তন, নগরায়ণ, প্রযুক্তি অনুসরণের মাধ্যমে সম্ভব হয়। তাই যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের বিদ্যমান জনসংখ্যার মধ্যে উন্নত স্মার্ট জনশক্তি থাকলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। একইভাবে তা এখন থেকে দেড় যুগ পরে উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ তৈরিতেও অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে|

লেখক: অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/ফারুক/এমএস