ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জাতিসংঘের অনুমোদনের অপেক্ষায় একাত্তরের গণহত্যা

ফারাজী আজমল হোসেন | প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ২৮ জুন ২০২৩

এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করে। এটা ছিল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা। এ সময় দুই লাখেরও বেশি নারী সম্ভ্রম হারান এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। হাজার হাজার পাক-সামরিক শিবিরে বাংলাদেশি নারীদের নগ্ন করে রাখা হয়েছিল।

পাক বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ কোন অংশে নাৎসী বাহিনীর গণহত্যার চেয়ে কম ছিল না। পার্থক্য এটুকুই নাৎসীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল, অপরদিকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসরদের ৫০ বছরেও বিচার হয়নি। মানবতাবিরোধী এই অপরাধে স্থানীয় পাকিস্তানপন্থি গোষ্ঠীগুলো ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর তারা আবারও সমহিমায় আবির্ভূত হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধার সৃষ্টি করে।

বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান ছিল। এটা ঠিক ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। যাদের বিরুদ্ধে খুন, গুম, ধর্ষণ বা অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি কেবল তারাই এ সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসে। অবশিষ্টদের বিচার চালু ছিল। কিন্তু পরে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল জিয়া সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে দালাল আইন বাতিল করেন। থেমে যায় যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের জারি করা আইনগুলো একের পর এক অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে রহিত করা হয়। সবশেষে ১৯৭৬ সালে অধ্যাদেশ জারি করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাদি তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সদ্য স্বাধীন দেশকে অস্থিতিশীল করার তৎপর হয়ে ওঠে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ঘাতক চক্রটি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং পরে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। এই চক্রটি গত ৫০ বছরে দেশের প্রভূত ক্ষতিসাধন করেছে, এরা রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভঙ্গুর করেছে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ব্যানারে দুবার ক্ষমতায় আসীন হয়েছে।

সেনা ছাউনিতে আত্মপ্রকাশ ঘটা বিএনপি নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক দলটির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিশ্বের অন্যান্য স্বৈরশাসকের মতো তিনিও তার সামরিক শাসনকে গণতান্ত্রিক রূপদানের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সব শক্তিকে ওই দলে আশ্রয় দেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান কুশীলব এবং সুবিধাভোগী। জেনারেল জিয়া ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে তারই সেনা সহকর্মীদের হাতে খুন হন।

খুনি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বে আছেন স্বৈরশাসক জিয়ার বিধবা পত্মী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাদের বড় ছেলে লন্ডনে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত তারেক রহমান। খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং শেখ হাসিনার বদান্যতায় গত দু’বছর নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন। অপরদিকে তার লন্ডনপ্রবাসী ছেলে তারেক রহমান যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

১৯৯০ সালে আরেক স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদের পতন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক শাসনের অবসানের পর স্বৈরাচারের উত্তরাধিকার ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিএনপির পুনরুত্থান ঘটে। ’৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয়লাভ করে। নির্বাচনকালে দেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলায় বিএনপির কোন সংগঠন ছিল না। এমনকি নির্বাচনে দাঁড় করানোর মতো প্রার্থী সংকট ছিল তাদের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতদের কেউ কেউ সেদিন ভোল পাল্টে বিএনপির মনোনয়ন গ্রহণ করেন।

নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। এই জয়ের নেপথ্য কাহিনি পরে জানা যায়। সেদিন স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিএনপিতে ভেড়ে। উদ্দেশ্য একটাই- মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। কারণ তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে একাত্তরের গণহত্যার বিচার হবে এবং অপরাধীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে।

খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বে দলটি দুবার পাঁচ বছরের মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০১-২০০৬) ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি পাকিস্তানপন্থি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। ওই হামলায় তারেক রহমান সরাসরি জড়িত ছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। পরে দিল্লিতে প্রবাসে থাকাকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি দলের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ১৯৮০ সালের মে মাসে ঢাকায় ফেরেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তার দল বিজয়ী হয় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের কারচুপির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় এবং বিএনপি-জামায়াত, জোট সরকার গঠন করে।

এরপর তারা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারা বুঝতে পেরেছিল এদেশের মানুষ আবারও শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে। এবার দায়িত্ব পেলে শেখ হাসিনা কেবল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করবে। অতএব, বাঁচতে হলে শেখ হাসিনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ সময় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক আয়ামী লীগ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। হামলায় শেখ হাসিনা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭৫ সালের পর এটি ছিল তার জীবননাশের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। দুঃখজনক হলেও সত্য, খালেদা জিয়ার সরকার (২০০১-২০০৬) বা সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৬-২০০৮) গ্রেনেড হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর একটানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন। এদিকে ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চিকিৎসার নাম করে তারেক রহমান দেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেয়। তিনি একা নন তার সাথে প্রধান যন্ত্রকারীরাও দেশ ছাড়ে।

২০১৮ সালে, বাংলাদেশের একটি আদালত ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার জন্য ৩৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাদের অর্ধেকই এখন পর্যন্ত পলাতক। মামলায় তারেকসহ ১৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারেক এবং তার সহযোগীদের কেউ কেউ ব্রিটিশ সরকারের ‘আতিথেয়তা’ গ্রহণ করায় তাদের শাস্তি কার্যকর করা যাচ্ছে না। তারেক এখন ব্রিটিশ আইনের আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

হাস্যকর বিএনপি শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস চালায়। অথচ এই দলটি গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করার দায়ে অভিযুক্ত। তাছাড়া দলটির বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষে কাজ করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে বিএনপির শাসনামল নজিরবিহীন সহিংসতা ও জঙ্গি তৎপরতার জন্য পরিচিত ছিল।

বিএনপি-জামায়াত সরকার আন্তঃসীমান্ত সহিংসতার পৃষ্ঠপোষকতা করে আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট করেছে। তারা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৪ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে ১০ ট্রাক অস্ত্র সরবরাহ করার চেষ্টা চালায়। অবশ্য আন্তর্জাতিক চাপে তারা অস্ত্রের ওই চালান বাজেয়াপ্ত করতে বাধ্য হয়।

বিএনপির শাসনামলের সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বৌদ্ধ এবং দেশের অন্যত্র হিন্দুরা ছিল পাকিস্তনি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তনপন্থি সরকারগুলো একই ঐতিহ্য লালন করতে থাকে। জোরপূর্বক ধর্মান্তর, হত্যা এবং সংখ্যালঘু নারীদের ধর্ষণ তাদের জন্য একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে কারণে সংখ্যালঘুদের মধ্যে নতুন করে দেশত্যাগের হিড়িক পড়ে।
গত ৫০ বছরে, বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হার ১৭ থেকে ৯ ভাগে নেমে এসেছে। এর প্রায় পুরোটাই জিয়াউর রহমান (১৯৭৭-১৯৮১) এবং তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপির (১৯৯১-১৯৯৬, ২০০১-২০০৬) ১৫ বছরের শাসনামলে ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল বারকাতের গবেষণায় এ ঘটনার সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার রিপোর্টে দেখা যায়, বিএনপি শাসনামলে সংখখ্যালঘু হিন্দুদের দেশত্যাগের প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী গণহত্যা চালানোর পর আর কখনই সংগঠিত হতে পারেনি। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঘটনার পর পরই তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ঘোষণা করে। ফলে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তাদের আশ্রয় নেওয়ার পথ রুদ্ধ হয় এবং দোষীদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। বাংলাদেশে সেটা হয়নি। বরং জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া একাত্তরের কিছু কুখ্যাত খুনি ও ধর্ষককে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনো প্রশ্ন তোলেনি। এ যুদ্ধাপরাধের দায়ে নাগরিকত্ব হারানো কুখ্যাত অপরাধীদের নাগরিকত্ব দিতে বিএনপি সরকার কুণ্ঠাবোধ করেনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর ঘাতক এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ২০০২ সালের ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে তিনি হেরে গেলে এই বিচার প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ে।

পরে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ঢাকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় ঘোষণা ত্বরান্বিত হয়। এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লবি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের কারও কারও মতে এ ধরনের বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কেউবা আইনি প্রক্রিয়ার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিচার বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।

এ ব্যাপারে এগিয়ে ছিল যুদ্ধাপরাধীদের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। এ ব্যাপারে সেদিনের বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান ছিলেন সবচেয়ে বেশি সরব। যদিও পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বারবার তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশিদের ওপর চরম অন্যায় করা হয়েছে। এই ইমরান খানই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে মারমুখী হন। তিনি কাদের মোল্লাকে শহীদ হিসেবে বর্ণনা করেন। এভাবেই সেদিন তারা ১৯৭১ সালের গণহত্যার দায় স্বীকার করে।

এই মুহূর্তে তারেক রহমান এবং তার সহযোগীরা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বিদেশি লবিস্ট নিয়োগে ব্যস্ত। কোন্ শক্তি এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়ছে তা অনুমান করা কঠিন কোনো বিষয় নয়। পাকিস্তনপন্থি বাংলাদেশিরা তাদের প্রভুদের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এটি চিরতরে বন্ধ করার একমাত্র বিকল্প হচ্ছে ১৯৭১ সালের অপরাধকে গণহত্যা হিসাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (বিএএসইউজি), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করে এমন কয়েকটি প্রবাসী সংগঠনের সক্রিয় সমর্থন নিয়ে জাতিসংঘে ১৯৭১ সালে পরিচালিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের দাবি উত্থাপন করেছে।

এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৩তম অধিবেশনে আলোচনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। আশা করা যায়, জাতিসংঘ এবং নীতি-নির্ধারক দেশগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় ঘটবে এবং তারা প্রস্তাবটি পাসে সম্মত হবেন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন