ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আন্তর্জাতিক বিশ্বেও অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

তাপস হালদার | প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ২৪ মে ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অতি সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে টানা ১৫ দিনের সফর করেছেন। এই সফরগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্বের তিন প্রভাবশালী মোড়ল প্রধানমন্ত্রীকে কীভাবে গ্রহণ করে তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। তিনটি সফরের প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও প্রতিটি সফরই ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে প্রতিটি সফরই বাংলাদেশ বাজিমাত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে (২৫-২৮ এপ্রিল) চারদিনের জাপান সফর করেন। নানা কারণে বাংলাদেশের কাছে জাপান গুরুত্বপূর্ণ। জাপান বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক সাহায্যদাতা ও এশিয়ার মধ্যে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে আছে দীর্ঘদিনের আন্তরিকপূর্ণ সম্পর্ক। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে নিঃস্বার্থ ভাবে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল জাপান। গত পাঁচ দশকই সে বন্ধুত্ব বজায় রাখলেও বর্তমান সরকারের সময়ে বন্ধুত্বের ভিন্ন মাত্রা পায়। এমন বন্ধুত্ব কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরল।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটি ষষ্ঠবারের মতো জাপান সফর। ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯ সালে তিনি জাপান সফর করেছিলেন। প্রতিটি সফরেই বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কে গতি এসেছে। নানাবিধ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলায় সাতজন জাপানি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল, যারা মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন অনেকেই আশংকা করেছিল জাপান মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নেবে। একশ্রেণির লোকে তো খুশিতে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু জাপান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শতভাগ আস্থা রেখে তাদের কাজ শুধু অব্যাহতই রাখেনি বরং আরও নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে।

দুই দেশের মধ্যে দ্রুততম সময়ে ইকোনমিক পার্টনারশিপ চুক্তি সম্পন্ন, বিগ-বি প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিজ কো-অপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালুকরণ, বাণিজ্য, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো প্যাসিফিক, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ কৃষি, শুল্ক, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা, শিল্পোন্নয়ন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং গণপরিবহন মেট্রোরেল বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এসব বিষয়ে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বর্তমানে জাপানি বিনিয়োগে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, ঢাকার এমআরটি লাইনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান।

জাপানি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই চীনের বাইরে বিকল্প দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারত ও ভিয়েতনামে বিনিয়োগ শুরু করেছে।আগ্রহের তালিকায় বাংলাদেশও আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার খুব প্রয়োজন ছিল। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিনিয়োগকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যার কারণে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আগ্রহ ও আস্থা বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক পৌঁছে গেছে এক নতুন উচ্চতায়। দুই প্রধানমন্ত্রীই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, দু-দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যাপক অংশীদারিত্ব থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে সফরের দ্বিতীয় অংশে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরে গত ১ মে ‘বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব’ বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক।সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি চিত্র প্রদর্শন উদ্বোধন ও বাঙালি সংস্কৃতির একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বাংলাদেশের আগামীদিনের উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা চিত্রকর্ম সদরদপ্তরে প্রদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী এবারের সফরে বিশ্বব্যাংকের সাথে দুই দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে একসাথে এত পরিমাণ ডলারের ঋণ চুক্তি কোন একটি দেশের সাথে এটাই প্রথম। এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে বিশ্বব্যাংক পরবর্তী চার বছরে নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় প্রতি বছর ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

বিশ্বব্যাংক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিরল সম্মানে সম্মানিত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে বাংলাদেশের তো নয়ই, অন্য কোনো দেশের সরকার প্রধানের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেনি। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শেখ হাসিনার সাথে ছবি টুইট করে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সাথে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশীদারত্বের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে পেরে আমি আনন্দিত। দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী পদ্ধতি থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে।'

সফরের শেষাংশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যুক্তরাজ্য গমন করেন। ধারাবাহিক সফর গুলোতে এত সাফল্যের পরও সবকিছু ছাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাক্ষাৎ পর্বটি রাজনীতির আলোচনায় ঝড় তুলেছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন,‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’ এছাড়া তিনি আরো বলেন, আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ে আপনার ভক্ত। আপনি আমার দুই মেয়ের জন্য মহান অনুপ্রেরণা।

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী যখন এই ভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তখন একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের গর্বে বুক ভরে যায়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে সম্মানিত করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ঠিক একান্ন বছর পর একই ভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সম্মানিত করলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে বিশ্বের ১৩০ দেশের রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধান ব্রিটেনে উপস্থিত হলেও প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মাত্র সাতজন সরকার প্রধানের সাথে বৈঠক করেছেন। এতেই প্রমাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায় কতটা মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে।

অতি সম্প্রতি ছয়টি দেশের কূটনীতিকদের (রাষ্ট্রদূত) বাড়তি নিরাপত্তা (পুলিশ এসকর্ট) প্রত্যাহার করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করায় রাজনীতিবিদসহ এক শ্রেণির সুশীলরা দেশে আতংকের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র সবার সাথে বন্ধুত্ব,কারো সাথে বৈরিতা নয়। এখানে প্রতিটি দেশই সমান সুযোগ পাবে। যে প্রেক্ষাপটে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সে পরিস্থিতি আর এখন নেই। তাই বাড়তি সুবিধা প্রত্যাহার হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এসব নিয়ে জল ঘোলা করে লাভ নেই। যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছেন,তারা জানেন না এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ। এসব ঠুনকো অজুহাতে কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে খারাপ সম্পর্ক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ, সাহায্য নির্ভরতা থেকে কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, এগারো লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দান, বৈশ্বিক মহামারি সত্ত্বেও অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, কোভিড পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ভিক্ষুকের জাতির কোন মর্যাদা নেই।’

বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ। এজন্যই বিশ্বব্যাংকে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন,‘আমরা ভিক্ষা চাই না, বিশ্বব্যাংকের সাথে পার্টনার হিসেবে কাজ করতে চাই।’ বিশ্বসম্প্রদায়ও বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাংলাদেশের উন্নয়নের কারিগর হিসেবে বিশ্বমঞ্চে দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/জেআইএম