ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মে দিবসের ভাবনা

কত দূর এগোলো শ্রমিক

এমএম নাজমুল হাসান | প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

আগামীকাল ১ মে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টির বেশি দেশ ১ মে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। দিনটি আজও শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। শ্রমিকদের যতটুকু দাবি-দাওয়া আদায় হয়েছে তা এই মহান দিবসের হাত ধরে।

শ্রমিকদের বিপ্লবের এতো বছর পরও কি শ্রমিকরা তাদের নায্য হিস্যা বুঝে পাচ্ছে? শ্রমিকরা কি তাদের কর্মস্থলে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ, সঠিক কর্মঘণ্টা কিংবা অধিক কর্মঘণ্টার জন্য বাড়তি কোনো মজুরি পাচ্ছে? বন্ধ হয়েছে কি সেই অভিশপ্ত শিশুশ্রম?

মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমের বিনিময় ফলানো পণ্য কিংবা উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশ কি বুঝে পাচ্ছেন শ্রমিক। নাকি তাদের শ্রমকে পুঁজি করে একদল মুনাফাখোর মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা মালিকপক্ষ সুবিধা নিয়ে আরও ফুলে ফেঁপে যাচ্ছে।

মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবে যে মে দিবস পালিত হয়, মালিক- শ্রমিক সেই দূরত্ব, শোষণের মনোভাব কি আজও প্রতীয়মান! শ্রমের সঙ্গে যারা প্রতারণা করে সেই শোষক কিংবা মালিক পক্ষ কি শ্রমিকদের সঙ্গে নিজেদের এখনও আলাদা করে রেখেছে নাকি সম্প্রীতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিক সংগঠনসমূহ। উন্নত রাষ্ট্রসমূহে শ্রমিকরা কাজের উপযুক্ত পরিবেশ ও মজুরি পেলেও উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশসমূহ এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি সেসব সুযোগ সুবিধা। উন্নয়নশীল দেশসমূহের অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় আন্তর্জাতিক শ্রম নীতি মানা হয় না। এমনকি ন্যায্য মজুরিও পরিশোধ করা হয় না। তাছাড়া কাজের পরিবেশও অনুকূলে নয়, এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।

স্মরণ করতে হয় প্রায় ১৫০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাককরমিক রিপার ওয়ার্কস কারখানার শ্রমিকদের সেই বিপ্লবের কথা। তখন শিকাগো ছিল শিল্পায়িত শহর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে শিকাগোতে আসতেন। এ সময় শিল্পকারখানার মালিকরা নামমাত্র মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করাতেন।

এমনকি যেসব শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা শ্রমঘণ্টার দাবি জানাতো তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। ক্রমে শ্রমিকদের মনে প্রতিবাদের দানা বাঁধতে থাকে। এরইমধ্যে শিকাগো, নিউইর্য়কসহ বিভিন্ন স্টেটে শ্রমিকরা আন্দোলন করতে থাকেন। ১৮৮৪ সালের অক্টোবরে ‘ফেডারেশন অব ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নস ’ ৮ ঘণ্টা শ্রমঘণ্টার জন্য আালোচনা করেন।

একপর্যায়ে ১৮৮৬ সালের ১ মে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের পরামর্শে ৮ ঘণ্টা শ্রমঘণ্টার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। এ সময় আন্দোলন স্তিমিত করতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাত এক লোক বোমা ছুড়লে শিকাগোর ম্যাককরমিক রিপার ওয়ার্কস কারখানার সামনে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে সাত পুলিশ ও চার শ্রমিক নিহত হন। এঘটনায় শ্রমিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং পরের দিন হে মার্কেটের সামনে হাজার হাজার শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নিতে একত্রিত হয়। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এরপর ১৮৮৯ সালে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘোষণা করে ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর ওয়ার্কাস অ্যান্ড সোশালিস্টস।’ ১৯১৬ সালে আমেরিকা ৮ ঘণ্টা কাজের আইনি স্বীকৃতি দিলেও সরকারিভাবে ঘোষণা দেয় ১৯১৭ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় নিকোলাস পতনের ৪ দিন পর।

মে দিবসের তাৎপর্য কি শুধু দিবস পালন, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, সভা-সেমিনারে আবদ্ধ নাকি শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও শ্রমিকের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দীর্ঘ দিন করোনা মহামারিতে জর্জরিত বিশ্ব এখনও মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতিসহ জীবন ও জীবিকার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র। দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাওয়া বাংলাদেশও এর প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত। তবুও বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগে দেশ অর্থনৈতিক মন্দাসহ অন্য বিষয়ে উতরে গেছে।

রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর পূর্বে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপে টালমাটাল ছিল বিশ্ব অর্থনীতি। সেসময় দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক শিল্পখাত হুমকির মুখে পড়ে। এই শিল্পের কারখানার মালিকদের সরকার মোটা অঙ্কের প্রণোদনা দিয়ে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করে। তারপরও অনেক কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বকেয়া বেতন না দেওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই করা, জোর করে কাজ করানোর।

এতবছর পর কি বলা যায়, শ্রমিকদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে? কতদূর এগিয়েছে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে? পরিবর্তন তো হয়েছে, তবে হাতে গোনার মতো।

শ্রমিকের রক্তস্নাত দিবস একদিন যথার্থই তাদের কল্যাণে নিবেদিত হবে। এবারের মহান মে দিবসকে সামনে রেখে সে প্রত্যয় ব্যক্ত করি।

লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।

এইচআর/জেআইএম