দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার খোঁজে
গত সপ্তাহে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক উন্নয়ন তৎপরতা তথা সাফল্যকে হেয় করে দেখার অপপ্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। উপরন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও বেশ কিছু সংস্থার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।
তবে দৈনিক পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগকে সরল করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’- এখানে কোনো অজুহাত হিসেবে দাঁড়ানোর কথা নয়। এজন্য স্বাধীনতা দিবসের প্রতিবেদন নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত প্রথম আলোর সাংবাদিক মো. সামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূলভিত্তি যেমন বাক-স্বাধীনতার ওপর প্রতিষ্ঠিত, তেমনি বাক-অসংযম গণতন্ত্রের মূলোচ্ছেদকারী।
২৭ মার্চ (২০২৩) প্রকাশিত একাত্তর টিভির ‘স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর সেই ছবি পুরোটাই ভুয়া’ শিরোনামে সংবাদে জানানো হয়েছে, দৈনিক প্রথম আলোর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভাইরাল হওয়া খবরের ছবি ছিল, ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে এক শিশু। নাম জাকির হোসেন। শিশুটির উদ্ধৃতি ছিল এমন- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’
জাকির নামটি ভুল ছিল। আসলে সাত বছরের সবুজ নামে ওই শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ছবি তুলেছেন বলে দাবি ওই শিশু ও তার পরিবারের। সাভারের কুরগাঁও পাড়ায় সবুজের বাড়ি। তার মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সবুজের নাম কীভাবে জাকির হোসেন হলো, আর প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানকে কেন দিনমজুর বলা হলো তাতে তিনি অবাক হয়েছেন। রাজমিস্ত্রি বাবা আর মা’র আয়ে সংসার চলে। অন্যদিকে ছোট সবুজ কেমন করে জানলো বাজারের দ্রব্যমূল্যের খবর-সেটাও বিস্ময়কর। স্বাধীনতা দিবসে এমন খবরকে ১৯৭৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে জাল পরানো বাসন্তীর ছবির মতোই চক্রান্ত বলা হচ্ছে বিশিষ্টজনদের দৃষ্টিকোণ থেকে।
উল্লেখ্য, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় মহান স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের নামে একজন শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়, যে বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে উক্ত মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যায়নি। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুকে তার দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের বক্তব্য না নেওয়া, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থি। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সাথে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এসব রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
একটি বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বলেছেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ কোনো কোনো মহল প্রচার করছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশ করায় সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যদিও বাস্তবতা হলো, প্রকৃতপক্ষে অসৎ উদ্দেশে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে একজন শিশুকে সংবাদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জাল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। উক্ত বাসন্তীকে যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাজানো হয়েছিল তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত সংবাদপত্র ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে সামরিক স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।’
প্রথম আলোর প্রতিবেদক সামসুজ্জামান শামস সম্পর্কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে শামস এবং অন্য অভিযুক্তরা ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে এমন মিথ্যা এবং মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে অপরাধের চেষ্টা করেছে বা সমর্থন করেছে।’ প্রকৃতপক্ষে এর আগেও দ্রব্যমূল্য নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। এমনকি দিনমজুর, রিকশাওয়ালাদের ভাষ্যে তাদের ভাষা প্রকাশ করেছে। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে আগের মতোই বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে- তা স্পষ্ট। কারণ দিবসটা ছিল আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
এ দিবসে সরাসরি স্বাধীনতাকে শিশুর মুখ দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক। একটা বাচ্চা ফুল হাতে উদাস নেত্রে স্মৃতিসৌধে শহীদের দুয়ারে ফরিয়াদ করছে- এভাবে মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে- এটা অপরাধ। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে কি না মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে এ সত্য প্রকাশের জন্য ছলচাতুরি বা ‘প্রিপেয়ার্ড ক্যান্ডিডে’র দরকার হয় না। আর একজন দিনমজুর সরাসরি স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলবে সেটা কতটা বাস্তব তা পত্রিকা পাঠক মাত্রই বুঝতে সক্ষম।
ছবিটা যে তৈরি করা সেটা পরিষ্কার। তাই এটা অপরাধ। স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দরিদ্র মানুষের অনুভূতি খুঁজতে যাওয়াকে সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অসংখ্য বিশিষ্টজন। স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাওয়া একটা পুরোনো প্রজেক্ট। এর পিছনের ইতিহাস অনেক গভীরে নিহিত। ১৯৭২-৭৫ জুড়ে সেই চেষ্টাই ছিল। ‘প্রথম আলো এই প্রজেক্টের বর্তমান ফেইজের একজন ডিরেক্টর’- এভাবেই লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন একজন কবি।
অতীতে প্রথম আলো একাধিক মিথ্যা ছবি বা সংবাদ প্রকাশ করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন মিথ্যা সিঁদুর পরিয়ে ছবি ছাপিয়েছে। প্রথম আলোর সম্পাদক এর আগে কতবার মাফ চেয়েছেন তা সবারই জানা। প্রথম আলো সম্পাদক মাইনাস টু ফর্মুলার একজন কারিগর। মাইনাস টু ঘটনার সবটাই সবাই মনে রেখেছেন আশা করি। জনগণ সেদিন তার তৎপরতাকে মেনে নিতে পারেনি। মূসা ইস্যুতে মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে জাতিকে বোকা বানিয়েছিল তারা। তারা নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিজেরাই নষ্ট করেছে।
মনে রাখতে হবে, দ্রব্যমূল্য নিয়ে অন্য পত্রিকাগুলো সিরিজ রিপোর্ট করছে। কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তবে বাধা দেওয়া হবে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করলে। সরকার আর রাষ্ট্র এক নয়। রাষ্ট্র আমাদের জীবনে সবসময়ই সত্য। এ কারণে রাষ্ট্র আর তার সংবিধানকে মিথ্যা প্রমাণের স্বাধীনতা চাওয়া হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা স্বাভাবিক।
কেউ কেউ ‘গুরুতর হুমকির মধ্যে মুক্ত চিন্তা’ বলে উপসম্পাদকীয় লিখছেন। কিন্তু সাংবাদিক দোষ করলে, তারা অপরাধী হলে যে গৃহীত ব্যবস্থা যৌক্তিক এটা বলছেন না। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা যে প্রয়োজন এটা স্বীকার করার মানসিকতা থাকাও জরুরি। ১৭৮৯ সালে Declaration of the Rights of man- এ বলা হয়েছে- No one should be called to account for his opinions so long as their manifestation does not upset public order as established by law.
জনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত না করলে কাউকে তার মতামতের জন্য জবাবদিহি করতে বলা উচিত নয়। ১৭৯১ সালের French constitution-এ বাক স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু প্রণীত ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানেও ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’র কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাকস্বাধীনতা ও মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতার যে মৌলিক অধিকার প্রদত্ত হয়েছে তা নানাবিধ কারণে যুক্তিসংগত বাধানিষেধের অধীন।
আসলে চিন্তা ও বিবেক সম্বন্ধে রাষ্ট্র কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ করবে না সত্য কিন্তু প্রয়োজন মতো নিয়ন্ত্রণ করবে চিন্তা ও বিবেকের প্রকাশকে। সংবাদক্ষেত্রে স্বাধীনতার অধিকার আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধের অধীন। এগুলো হলো- রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্বার্থে, জনশৃঙ্খলার স্বার্থে, শালীনতার স্বার্থে, নৈতিকতার স্বার্থে, আদালত অবমাননা সম্পর্কে, মানহানি সম্পর্কে এবং অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে প্রভৃতি। প্রথম আলোর উক্ত সাংবাদিক সংবিধানের এসব ধারার দ্বারা অপরাধী হিসেবে গণ্য হলে তার শাস্তি পাওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা।
লেখাবাহুল্য, করোনা উত্তরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করছেন বিশ্বের অনেকেই। উন্নয়নের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখতে সরকার সচেষ্ট এটাও এখন দৃশ্যমান। অবশ্য একথা সত্য প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি আইনের শাসন পরিপন্থি কাজ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সব সময় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রিত ও সতর্ক। যেসব ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে সে ধরনের কাজ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরত থাকতে সচেষ্ট। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান যখন সাংবাদিকদের বলেছেন শামসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কারণ তার প্রতিবেদন ‘মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’- তখন পুলিশি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণটা স্বাভাবিক।
লেখাবাহুল্য, সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। এ কারণে জানুয়ারি ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০২২ এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোট ১৩৮টি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে মোট ২৮০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারের তরফ থেকে এক দুজন হলেও অধিকাংশেরই বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো হয়েছিল। মনে রাখা দরকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সরকারের সমালোচনা করে চলেছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য যা অর্জন করেছেন তার অসম্মান করা।
মূলত একটি শিশুর হাতে ১০ টাকা ঘুস দিয়ে তার নাম করে একটা সংবাদ পরিবেশন করা তাও আবার স্বাধীনতা দিবসে এবং যা দেশের জন্য ক্ষতিকর- তা সত্যিই নিন্দনীয়। এটা যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অবাককাণ্ড হচ্ছে, বিদেশিদের তরফ থেকে অপরাধীদের পক্ষ নেওয়ার ঘটনা। সাংবাদিক হলেই সব অপরাধ মাফ, আর অপরাধী ধরলে হিরো হয়ে যাওয়া-এই বাস্তবতা দুঃখজনক।
মহান স্বাধীনতার অবমাননা করা, শিশুকে ঘুস দিয়ে অপব্যবহার করা, শিশুর জীবনকে শঙ্কিত করে দেওয়া- এটা অমার্জনীয় অপরাধ। ক্লাস ওয়ানে পড়া একটা শিশুকে ব্যবহার করে নিউজ আইটেম বানিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে যারা, তারা জঘন্য অপরাধ করেছে। এ জঘন্য অপরাধের জন্য তাদের গ্রেফতার করলে বিদেশিরা ঝাঁপ দিয়ে পড়ে কেন-সেটা আমাদের বোধগম্য হয় নয়। যেসব দেশ বিবৃতি দিয়েছে সেসব দেশে কোনো একটি শিশুকে যদি এভাবে এক্সপ্লয়েট করা হতো তারা কি করতো? কি ব্যবস্থা নিতো? তাদের কাছে জানতে চাওয়া হোক।
জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালে এক মেয়াদ এবং ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোও যখন নাস্তানাবুদ অবস্থার সম্মুখীন, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ যখন দেউলিয়া অবস্থায় পতিত, এমন পরিস্থিতিতেও শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবিলা করে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উক্ত সংবাদপত্রসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কারণ দায়িত্বশীল সাংবাদিকরা দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা ও সাফল্যের সহযাত্রী।
লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ। [email protected]
এইচআর/ফারুক/জেআইএম