ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আমার বইমেলা

মেলা হয় শেষ থেকে যায় রেশ

ডা. পলাশ বসু | প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলাকে আমরা লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকের মিলনমেলা হিসেবে দেখতে এবং ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মেলাকে কেন্দ্র করে এই যে মনস্তাত্ত্বিক আবহ তৈরি হয় এ সময়ে এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সেই মনস্তত্ত্বের সাথে মিলে মিশে যুক্ত হয় আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক আবেগ।

পাশাপাশি বইপ্রকাশ এবং তার বিক্রয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক পরিক্রমাও। ফলে অমর একুশে বইমেলা তার শুরুর পরিসর থেকে এগিয়েছেও বহুদূর। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল এলাকাজুড়ে বইমেলার যে স্থানিক পরিবিস্তার-সেই সত্যকেই যেন সুচারুভাবে তুলে ধরছে।

বইমেলা ঘিরে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিও আছে প্রচুর। কারণ বইমেলার সাথে আমার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে। তখন ১৯৯৭ সাল। গ্রাম থেকে এসে নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছি। সে বছর তো বইমেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে ১৯৯৮ সালে প্রথম শুরু হলো বইমেলায় যাওয়া। তখন চাইলেও অনেক টাকা খরচ করে বই কেনার সুযোগ হতো না। সেটার জন্য মন খারাপ হতো।

এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুবাদে ঢাকা ছাড়তে হলো ২০০০ সালে। ২০০৬ এর শেষে আবারও চাকরিসূত্রে ঢাকায় প্রবেশ করি। তবে, রাজশাহীতে পড়ালেখার সময় শুধু একবারই আমি মেলায় আসতে পারিনি। ফলে বলা যায়, সেই ১৯৯৮ সাল থেকে যে বইমেলায় যাওয়া শুরু হলো এখনও তা অটুট আছে। মেলা শুরু হয়েছে আর আমি মেলায় যাইনি সেটা ঐ একবারই হয়েছে।

মোটা দাগে বলা যায়, বইমেলায় আসার সুবাদে পাঠক হিসেবে এভাবেই মেলার সাথে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে উঠলো। তখনও যেমন পাঠক হিসেবে বই কিনতাম। এখনও কিনি। জাফর ইকবাল স্যারের লেখা যেমন ভালো লাগে মানুষ হিসেবেও তাকে আমার অসাধারণ মনে হয়। মেলায় গিয়ে দূর থেকে স্যারকে দেখি। তারপর ভিড় ঠেলে আস্তে আস্তে স্যারের কাছে পৌঁছতে পারলে গিয়ে অটোগ্রাফ নিয়েছি। ছবিও তুলেছি ২/১ বার।

ভিড় বেশি হলে দূর থেকেই স্যারকে দেখেছি। কাছে যাওয়ার চেষ্টা আর করিনি। ছোটোদের জন্য স্যারের যে ভালোবাসা সেটা রীতিমতো মুগ্ধ করে আমাকে। হতে পারে এই মন্ত্রমুগ্ধতা অবচেতন মনেই আমাকেও ছোটোদের জন্য লিখতে উৎসাহিত করেছে। স্যারের কাছে এ আমার আজীবনের ঋণ।

পাঠক হিসেবে মেলায় যাওয়ার পাশাপাশি এখন লেখালেখির সুবাদে লেখক হিসেবেও যেতে হয়। এ অবধি ছোটোদের জন্য আমার লেখা ৪ টা বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম ছড়াগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১৮ সালে। এবারের বইমেলায় সর্বশেষ ছড়াগ্রন্থ " টুনটুনি ঝুনঝুনি" প্রকাশিত হয়েছে ঝুমঝুমি প্রকাশনী, স্টল ১০৬-১০৭ থেকে।

২০১৮ সাল থেকে লেখালেখির সুবাদে আমার পরিচিত লেখকবৃন্দের বইও আসে মেলায়। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সাথে দেখা হয়। কথা হয়। আড্ডা হয়। ফলে একজন পাঠক এবং লেখক- দ্বৈতসত্তা বিবেচনা রেখেই বলছি- বইমেলা আমার কাছে পবিত্রতম স্থান। পুরো মাসজুড়ে তাই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। মেলা শেষ হয়ে গেলে একটা সাময়িক শূন্যতা এসে ভর করে হৃদয়জুড়ে।

বইমেলার যে বিস্তার সেটা সামনে আরো বাড়বে। তবে, এই জোয়ারে ছাপার বই কতটা মানুষকে আর টানতে পারছে তা নিয়ে বিতর্ক চলমান আছে। কেউ অনলাইন থেকে পিডিএফ খুঁজে বের করে পড়েন। কেউ ছাপার অক্ষরে না পেলে পড়ার শান্তি পান না। আমি এই ২য় দলে। বই অনস্ক্রিনে পড়ে আমি বেশিদূর আগাতে পারিনা। এর কারণ ধৈর্য ধরে রাখতে পারিনা।

মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতে, মানবজীবন দোতলা ঘরের মতো। জীবসত্তা হচ্ছে সেখানে নিচতলার নাম আর মানবসত্তা হচ্ছে এর উপরের তলা। জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা। তাই আসুন বই কিনি, বই পড়ি। জীবসত্তা থেকে নিজেকে মানবসত্তায় উন্নীত করি। যেভাবেই হোক না কেন- ছাপার অক্ষরে বা অনস্ক্রিন হোক বই পড়তে হবে। কারণ বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: চিকিৎসক ও শিক্ষক।

এইচআর/এমএস