ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কি সম্ভব?

ফুরকানুল আলম | প্রকাশিত: ০৯:১৮ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’ অনুমান-আন্দাজে কোনো কথা বলার পর তা বাস্তব হয়ে উঠলে অনেকে বাহাদুরি ফলান। দাবি করেন, তার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে। কথার যৌক্তিকতা নিয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরলেও সেই যুক্তি কতক ভিত্তিহীন আর কিছুটা প্রমাণ শূন্য।

তুরস্কে ভূমিকম্পের পর নেদারল্যান্ডসের অখ্যাত এক ভূতত্ত্ববিদ ফ্রাঙ্ক হুগারবিটের টুইট ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে। ভূমিকম্পের তিনদিন আগে ওই টুইট করেন হুগারবিট। বলেন, তুরস্কের মধ্য দক্ষিণাঞ্চল, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবে। বিষয়টি বাস্তব হলে রাতারাতি গণমাধ্যমের আলোচনায় চলে আসেন তিনি। কীভাবে এমন নিখুঁত পূর্বাভাস দিলেন হুগারবিট? জবাবে তিনি জানান, ওই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ভূকম্পন ও অন্যান্য তথ্য পর্যবেক্ষণ করে এমন পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি।

হুগারবিটের তিন মাস আগে সাইকন ইসেইলি নামের তুরস্কের এক খনি বিশেষজ্ঞ দেশটির দৈনিক সাবাহকে সাক্ষাৎকারে পূর্বাভাস দেন, মারমারা সাগর অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঐতিহ্যবাহী শহর ইস্তাম্বুল। আজিয়ান অঞ্চলেও দেখা যাবে একই দুর্যোগ। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প হলেও এ সব এলাকায় তার তেমন প্রভাব পড়েনি। অর্থাৎ পূর্বাভাস আংশিক ফলেছে।

প্রশ্ন হলো এ সব পূর্ভাবাস কতটুকু যৌক্তিক এবং এর বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতাই বা কতখানি? ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে স্বীকৃত যত মাধ্যম আছে, তা সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ড থেকে মিনিটখানেক আগে জানাতে পারে। যে তথ্যের ভিত্তিতে হুগারবিট ও সাইকন আগাম সতর্কতার কথা বলেছেন তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। এটি অনেকটা বিশ্বকাপ জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা অক্টোপাস পলের মতো।

২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল প্রাণীটি। বিশেষ করে ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন নিয়ে তার পূর্বাভাস সঠিক হয়। নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন।

প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত কিছু মানুষের বিশ্বাস, ভূমিকম্পের আগাম সতর্ক বার্তা দিতে পারে প্রাণীরা। তাদের দাবি, সবার আগে গর্ত ছেড়ে পালায় ইঁদুর। কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাও তাদের পক্ষে যায়। বিশেষ করে ২০১৩ ও ২০১৬-১৭ সালের দুটি গবেষণায় জোর দাবি করা হয়, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে প্রাণীরা। ২০১৩ সালে জার্মানির বিজ্ঞানীরা একটি ফল্ট লাইনে (যে ফাটলে ভূমিকম্প হয়) লাল পিঁপড়ার বাসা নিয়ে গবেষণা করেন। তারা দেখেন, ভূমিকম্পের আগে দিনের চেয়ে রাতে বেশি সক্রিয় থাকে পিঁপড়ার দল।

২০১৬-২০১৭ সালের বিভিন্ন সময় চার মাস ইতালির একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় গবেষণা করেন জার্মানিসহ আন্তর্জাতিক একদল গবেষক। একটি খামারে ৬টি গাভি, ৫টি ভেড়া ও দুটি কুকুরের শরীরে জিপিএস প্রযুক্তিসহ উচ্চ ক্ষমতার সরঞ্জাম লাগিয়ে দেন গবেষকরা, যা প্রতি সেকেন্ডে ৪৮টি মুভমেন্ট ধারণ করতে পারে। ওই সময়ে ১৮ হাজার ভূমিকম্প হয়।

গবেষকরা দেখেন, ৩.৮ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প টের পায় এ সব প্রাণী। যাতে সবার আগে প্রতিক্রিয়া দেখায় কুকুর। এরপর গাভি ও সবশেষে ভেড়া। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল যত কাছে হয়, প্রাণীগুলো তত দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়। যাতে ভূমিকম্পের সর্বনিম্ন এক ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা আগে প্রতিক্রিয়া দেখায় প্রাণীগুলো।

তবে, এসব পর্যবেক্ষণ-গবেষণা সবই প্রাথমিক পর্যায়ের। দালিলিকভাবে শক্তিশালী নয়। প্রাণীরা যে শুধু ভূমিকম্পের আগেই অস্বাভাবিক আচরণ করে, তা কিন্তু নয়। কোনো কারণে ভয় পেলে বা অন্য কোনো সমস্যায়ও অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। তাই এসব আচরণের কোনটি ভূমিকম্পের জন্য আর কোনটি অন্য কারণে তা বোঝা মুশকিল। তারপরও আশা করা হচ্ছে, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় একদিন ভূমিকম্পেরও আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। যাতে বেঁচে যাবে লাখ লাখ প্রাণ।

লেখক: নিউজ এডিটর, চ্যানেল ২৪।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

আরও পড়ুন