লু'র সফর
মানুষ একটি পয়েন্ট নিয়ে ভাবুক শুধু
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে মোমেনকে পাশে রেখে বাংলায় লু বললেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার হবে। লু স্পষ্টতই তাঁর সফরে বাংলাদেশ প্রশ্নে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছেন তা বলাই বাহুল্য।
সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে তথা বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন নীতিকে খানিকটা দমন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কে এক হাত নিতে ডোনাল্ড লু চেষ্টা করেননি। বরং, প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে বন্ধুত্বের শর্ত পূরণে থেকেছেন। যদিও আমার অভিজ্ঞতা বলে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হল, তাঁরা যা বলে ঠিক তার উল্টোটা করে।
বাংলাদেশের মানুষ এখন একটি পয়েন্ট নিয়ে চিন্তার উদ্রেকে ভাসুক। তা হল, পরাক্রমশালী রাষ্ট্র চায়, " ভূ রাজনীতির আদ্যোপান্ত বিচার করে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় শাসক হিসাবে দুর্বল সরকার আসুক। কিংবা, এমন কোন কথিত ক্ষমতাধর কেহ রাষ্ট্র পরিচালনা করুক, যাতে করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়।"
তাই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সবিশেষ পন্থাকে অবলম্বন করতে চাইলে লুর কথায় মেতে ওঠার কিছু নেই, বিশ্বাস করারও কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষকে বুঝতে হবে যে শেখ হাসিনা এখন এই বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একজন রাষ্ট্রনায়ক, তার কাছে দেশের স্বার্থ বড়।
কাজেই পরাক্রমশালী বা আধিপত্যবাদী শক্তিসমূহ খুব করে চাইবে না যে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকুক। কিন্তু, জনগণের দুই ধরনের ভূমিকার মধ্য টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় রয়েছেন। কারণ, তিনি কেবল দেশের সেবা করছেন, যেখানে অন্য সব কিছু তুচ্ছ। কাজেই খালেদা জিয়া মার্কা ব্যক্তিরা অতীতে ক্ষমতায় আসত পরের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে, এটা বুঝতে হবে।
শেখ হাসিনাকে সমর্থন করার মধ্য দিয়েও সাধারণ মানুষের দেশপ্রেম যে প্রতিভাত হতে পারে, এমন দিকটিও এক্কেবারেই নতুন একটি রাজনৈতিক সমীকরণ। বাংলাদেশ তাঁর কাছে নিরাপদ, যেখানে অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো রাজাকারের মত, অর্থাৎ অন্যের সহযোগী হয়ে থাকতে তাঁরা স্বস্তিতে থাকবে, দেশের স্বার্থ উদ্ধারে নয়।
গেল সপ্তাহে লিখে বলেছিলাম যে, বাংলাদেশে কৃত্রিম একটি রাজনৈতিক বিপ্লব করার মহড়া আসন্ন। সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, বিএনপি নামের দলটি ব্যাপক নাশকতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এমন তথ্য রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'র রাজনৈতিক অবস্থানকে কোনমতেই মেনে নিতে পারছেন না মির্জা ফখরুল ইসলামেরা। তাঁরা বলছে, সরকার পক্ষ থেকে যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে লু কোন বক্তব্য রাখেন নি। মির্জা ফখরুল ঠিক বলেননি। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে তাঁকে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, আধিপত্যবাদী শক্তি কিংবা যে শক্তিই বাংলাদেশকে ছবক দিতে চান না কেন, তা আমলেই নিতে চাই না।
'আমল' আপনাদের প্রয়োজন হয়, শেখ হাসিনার নয়, আওয়ামী লীগের নয়। বিদেশি শক্তির ওপর অতি নির্ভরশীলতাই যে কথিত জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, বিএনপি কি তা অনুধাবন করে?
হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশ কিংবা চীন, রাশিয়া,ভারতের সাথে সু সম্পর্ক রেখে অর্থনৈতিক ফায়দা নিতে বন্ধুত্ব ধরে রাখতে চাই। ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সমুন্নত না থাকলেও তাদের সাথে আমাদের একটি আবেগময় সম্পর্ক তো আছে। ভারত একমাত্র দেশ, যাদের সাথে স্বার্থ কে বড় করে দেখাও চলে না। তাঁরা আমাদের পুরোনো বন্ধু, সেই সম্পর্ক ছিল, আছে ও থাকবে।
মার্কিন পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কোন একটি দেশকে জিএসপি সুবিধা প্রদান করা হলে, দেশটি হবে বাংলাদেশ। এমন প্রত্যয় আশা জাগায়, ভাল রাখে। একইভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দিকগুলোর ভাগ্য নির্ধারণে আমরা সারাবিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথেই সু সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে চাইলে অতীতের মত করে হবে না। বহু চড়াই -উতরায় পেরিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে একজন পরীক্ষিত নেতা পেয়েছি। যার নাম শেখ হাসিনা।
গবেষণা ও সত্যান্বেষী মন দাবি করায়, তিনিই বাংলার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শাসক। এখন কোন পরাশক্তি বা অপশক্তি যদি মনে করে থাকে, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের ধুয়া তুলে তাঁকে কাবু করা যাবে, তা ভুল হবে। বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রেণি বুঝতে পেরেছে যে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শেখ হাসিনার বিকল্প চরিত্র নেই।
আর যারা সাধারণ মানুষ, তাঁদেরকে বলছি, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একটি শ্রেণি রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসতে চায়, চাইবে- কিন্তু আমাদেরকে এককাট্টা থেকে দেশের সেবক শেখ হাসিনার জন্য প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। সমস্যা হল, তিনি খুবই দেশপ্রেমিক শাসক। এইজন্য পরাক্রমদের ঘুম নেই, তাদের দরকার দুর্বল রাজা !
লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এইচআর/এমএস