রম্য
বিয়ের ওভারটেক গেমসে চ্যাম্পিয়ন!
অনেক চেষ্টা করেও অফিসের কাজে মন বসাতে পারছিলেন না ফকরুল আবেদীন ওরফে ফকা আবেদীন। যতই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, ততই বেশি করে মনের ধূসর পর্দায় গত রাতের বিয়োগান্তক ঘটনার হৃদয় ফুটো করা দৃশ্যাবলি একের পর এক আছড়ে পড়ছে।
গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাত থেকে দেড়শ টাকা কেজি দরে এক কেজি কমলা কিনে বাসায় গিয়ে দেখেন ১১টার মধ্যে পাঁচটাই পচা। কমলাওয়ালার কামেলিয়াতের জব্বর চোটে মচকে যাওয়া হৃদয় নিয়ে শান্তি-অন্বেষণে বিলকিস বানুর দিকে হাত বাড়াতেই কাঁচা ঘায়ে মরিচ-গুঁড়া ছিটিয়ে বিলকিস বানু গর্জে উঠলো-
: ডোন্ট মুভ; একদম নড়াচড়া করবে না।
: আহ বিলকিস! একটা মানুষ....
: তোমার অই মেয়ে ভুলানো থিওরিতে আর ভুলছি না আমি।
: প্লিজ বিলকিস, প্লিজ! এবারের মতো...; রিকোয়েস্ট।
: উহু। এবার এবার করে ওপারের ডাক এসে গেলো। অতএব, নো প্লিজ। নো রিকোয়েস্ট।
: বিলু। লক্ষ্মী বিলু। এতটা হৃদয়হীনা তুমি হয়ো না। ঘুমহীন চোখে সারারাত আমি ছটফট করি, এটাই কি তুমি চাও?
: কেন চাইব না? পাশের ফ্ল্যাটের ভাবির ঠাটবাট দেখে আমি যে ছটফট করে মরি, তার খোঁজ কে রাখে?
: পাশের ফ্ল্যাট মানে সেন্টুর আম্মা? সে আবার কী করল!
: সেন্টুর আম্মা কিছু করেনি; করেছে সেন্টুর আব্বা।
: বলো কী! কী-কী করেছে?
: দেড় ভরি স্বর্ণ দিয়ে চন্দ্রহার বানিয়ে দিয়েছে ভাবিকে।
: অঃ।
: শুধু তাই না; বলাবলি করছে-এ মাসেই নাকি কক্সবাজার বেড়াতে যাবে আন্ডা-বাচ্চাসহ;
আর তুমি...
: আমি...
: গলির মোড়ের বাসি ফুচকা-হালিম খাওয়াইয়া এমন ভাব দেখাও যেন বিশ্বজয় করেছ! হু!
: দেখ, আমার ওই ফুচকা-হালিমে যে অপার্থিব প্রেম থাকে...
: তোমার অপার্থিব প্রেমের সুধা পান করতে করতে বদ-হজম হয়ে গেছে আমার। অনেক ফ্যাচফ্যাচ করেছ, এবার দয়া করে ঘুমাতে দাও।
: কিন্তু আমার তো ঘুম আসছে না।
: ঘুম না এলে ছাদে চলে যাও। ছাদে গিয়ে আকাশের তারা গুনতে থাক...
সহকর্মী ইন্তাজ মোল্লার ডাকে ফকরুল আবেদীনের মনের পর্দা থেকে বিলকিস বানু অভিনীত জমজমাট অ্যাকশন সমৃদ্ধ নাটকের দৃশ্যপট অন্তর্হিত হলো। দরদি গলায় মোল্লা জানতে চাইলেন-
: কী হয়েছে ভাই সাহেব? সকাল থেকেই দেখছি মুখ কালো করে বসে আছেন।
: না-না, এমনিই।
: বললেই হলো এমনি? আমার চোখকে ফাঁকি? হা-হা ভাই সাহেব। আমার চোখ হলো ওস্তাদের চোখ। বলুন দেখি, কোনো সমাধান দিতে পারি কি না!’
: মোল্লা সাহেব, বিষয়টা পারিবারিক।
: হতেই হবে। পরিবার থাকলেই সমস্যাগুলো পারিবারিক হয়। যার পরিবার নেই, হাঃ হাঃ হঃ! নিশ্চয়ই ভাবির সঙ্গে ঝগড়া?
: ঠিক ঝগড়া না...
: তবে?
: আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন সেন্টুর আব্বা বলে এক ভদ্রলোক। তো সেই সেন্টুর আব্বা...
: বলেন কী সাহেব? পরকীয়া নাকি?
: ধুর মিয়া! কী সব আবোল-তাবোল বকছেন? ওসব কিছু না।
: স্যরি, তাহলে?
: আমার প্রতিবেশী সেই সেন্টুর আব্বা তার বউকে একটার পর একটা গিফট দেন আর অন্যদিকে...
: অন্যদিকে আপনার সংসার রঙ্গমঞ্চে নাটকে ক্লাইমেক্স ততোই ঘনীভূত হয়। ঠিক কি না?
: ঠিক। অই ব্যাটা ঘুসখোরের সাথে পাল্লা দেওয়া কি আমার কর্ম? অথচ আমার স্ত্রী বিলকিস বানু এটা কিছুতেই মানতে রাজি নয়। ওর মুখে এক কথা-কোনো দিক থেকেই আমি সেন্টুর আব্বার সমকক্ষ নই।
: বুঝেছি, ওভারটেক কেইস।
: কী কেইস?
: ওভারটেক ভাই সাহেব ওভারটেক। জগৎজুড়েই চলছে এই ওভারটেকের খেলা আর এই ওভারটেকের ছায়া যখন কোনো রমণী-হৃদয়ে পড়ে কী অবস্থা হয়, তার বড় প্রমাণ তো আপনি নিজে; হাঃ হাঃ হাঃ। শুনেন, এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ঘুস খাওয়ার কোনো উপায় যেহেতু আপনার নেই, তাই সেন্টুর আব্বাকে দৌড়ে হারাতে হলে আপনার সামনে দুইটা পথ খোলা আছে।
: দুইটা পথ?
: হ্যাঁ। পথ নাম্বার ওয়ান-মরে গিয়ে প্রমাণ করা সেন্টুর আব্বা মরণ প্রতিযোগিতায় আপনার কাছে অপমানজনকভাবে হেরে গেছেন।
: আত্মহত্যা করব? আপনি আমাকে জাহান্নামি বানাতে চান?
: ঠিক আছে, ঠিক আছে ভাইসাহেব। হাইওয়ে টু জাহান্নামের যাত্রী হতে যদি আপনার আপত্তি থাকে, তাহলে নেক্সট ওয়ে হচ্ছে বিবাহ।
: বিবাহ!
: হ্যাঁ বিবাহ! আপনি আরও একটা বিবাহ করেন।
: ফাইজলামির একটা সীমা আছে ইন্তাজ সাহেব!
: আহ-হা! আপনি চটছেন কেন?
: চটব না? একটার ভারেই ফালাফালা হয়ে যাচ্ছি। আপনি আরও একজনকে কাঁধে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন?
: আরে! শুনেন ভাইসাহেব; আপনি কোনোদিক দিয়েই সেন্টুর আব্বার সমকক্ষ নন-আপনার স্ত্রীর ছুড়ে দেওয়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এটাই সর্বশেষ পথ। বিবাহ করার পর বউ নিয়ে সোজা বাসায় যাবেন। গিয়ে আপনার স্ত্রীকে বলবেন-কই গো, তোমার অই সেন্টুর আব্বাকে বলো তো আমার মতো আর একটা বিবাহ করতে। হাঃ হাঃ হাঃ! দেখবেন, ওভারটেক গেমসে সেন্টুর আব্বা আপনাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক, রম্যলেখক।
এইচআর/ফারুক/এমএস