উপন্যাসটি পড়ব তবে সত্যটা বলাও শ্রেয়
নিজেদের উপযোগী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভর করে বাংলাদেশকে এখন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়। মানুষের জীবনের গতিপথ সুমসৃণকরত সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে সচেষ্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগী হতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যতীত যদিও এমন প্রতিজ্ঞায় দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নেই। তবে গণতন্ত্র ও মানব উন্নয়ন সূচক এর সম্মিলিত দায় গ্রহণে যেকোন শাসকশ্রেণি কর্তৃক আগ্রহ, সংকট দূরীকরণে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে। বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য সামনের দিনের জন্য এটিই একমাত্র চ্যালেঞ্জ।
‘পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের মতো করে রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনধারা ইত্যাদির ধারণা ও আদর্শ মান তৈরি করেছে। গোটা বিশ্বে সেই মানকেই কার্যকর করতে প্রভাবান্বিত করছে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও সেই মান স্পর্শ করতে চাচ্ছে। কিন্তু চাপা পড়ছে অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন চিন্তা ও চাহিদা। সেখান থেকেই ব্যক্তি জীবনে সংকটের সূচনা’— নিজের উপন্যাস ‘রান অ্যান্ড হাইড’ শীর্ষক মুক্তমত প্রকাশে এভাবেই বলেছেন ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার পঙ্কজ মিশ্র।
মিশ্রের বক্তব্যের মধ্যে বাস্তবঘনিষ্ঠ আবেগের অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে আবেগ থেকে সমাধানের পথ খোঁজা যায় না। কারণ, সংকট তখনই ঘনীভূত, যখন মানুষ তাঁর মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র কর্তৃক অতৃপ্ত থাকে। তখন সরকারের ওপর অহেতুক চাপও বাড়ে। ঠিক সে কারণে বিশ্বসেরা পর্যায়ের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিজেদের উপযোগী শাসনরীতি কায়েম করা দেশের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলেও মানুষ তাঁর জীবনধারায় অর্থনৈতিক চাপমুক্ত প্রেক্ষাপটকে আগে আলিঙ্গন করুক- এমন প্রত্যাশায় যেয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাংলাদেশকে সঠিক রাস্তায় রাখতে পেরেছেন বলে মনে করার সুযোগ আছে।
রাজনীতির যথাযথ মান ধরে রাখার মত পরিবেশ বা ক্ষেত্র বাংলাদেশে এখনো প্রস্তুত হয় নাই। দুঃখ করেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ৮ জানুয়ারীরি বললেন, ‘নষ্ট রাজনীতিকরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে’- ‘রাজনীতিতে ভালো মানুষেরা নেই। আমরা রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করতে পারিনি। রাজনীতিতে এখন আর ভালো মানুষ আসতে চায় না। রাজনীতিতে কোনও শিক্ষিত, সৎ মানুষ আসতে চায় না। ভালো, সৎ ও মেধাবীদের রাজনীতিতে আনতে হবে। তা না হলে রাজনীতি চরিত্রহীন হয়ে যাবে। ভালো মানুষ না আসলে, খারাপ লোক রাজনীতিতে এলে রাজনীতি খারাপ হয়ে যাবে। ’
সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মিথ্যে বলেন নি। তবে রাজনীতির সংস্কৃতি তথা কৃষ্টিবিপ্লব নিয়ে এগোতে চাইলেও বাংলাদেশের মত দেশ প্রস্তুত নেই। এখানে জনশ্রেণিকে সে অর্থে শিক্ষিত করা যায় নি বলেই এখনো বাংলাদেশের অধিবাসীদের মধ্যে একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না। এমন কি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তারা স্বাধীনতাবিরুদ্ধ শক্তিকে ছোট করে প্রত্যাশাও করে। সেই জন্যই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, জনকল্যাণ বা জনস্বার্থ উদ্ধার করেই পরের প্রজন্মের নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষকে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করুক।
আদর্শিক অবস্থান, রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি ফলত ১৯৭১ সালেই হয়েছিল। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে তা প্রতিফলিতও হয়। মানুষের টিকে থাকার জন্য কাঠামোগত প্রায়োগিক নির্দেশনা ও ধারণার ওপর একটি জাতির দাঁড়িয়ে থাকার জন্য অনিবার্য যে সকল বিষয়গুলো রয়েছে, তা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সেরাটা করতে পারছে বলে মনে করার সুযোগ আছে। কিন্তু,হতাশ হতে হচ্ছে।
যখন ময়দানে অন্য কোন রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগের জন্য কিংবা দেশের জন্য সহায়ক, অর্থবহ এবং কার্যকর শক্তি হিসাবে জায়গা করে নিতে পারছেন না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁদেরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে আগ্রহী নয়। এতে করে রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সমকক্ষ পর্যায়ের শক্তির অনুপস্থিতি এক প্রকারের শূন্যতা, যেখানে ক্ষমতাসীন দলটি প্রত্যাশা করে যে, জনস্বার্থে আমাদের কাছাকাছি শক্তির আরো কিছু রাজনৈতিক দল দেশে থাকুক। কিন্তু যাদের কে দেখা যায়, তারা আসলে রাজনৈতিক দল নয়। জাতীয়তাবাদী শক্তির আড়ালে তারা রাজনৈতিক অপশক্তির মত করে।
পঙ্কজ মিশ্রের আলোচিত উপন্যাসটি সংগ্রহ করে পড়ে নেব। তবে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় উগ্রবাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমীকরণ প্রত্যাশী নয়, এমন কোন খবর নেই। যদিও হালে মানুষ ধর্মভিত্তিক সমাজের কট্টরপন্থী প্রতিনিধি হিসেবে জাত চেনাতে চায়, তা আমি ও আমরা বুঝতে পারি। এরপরেও দেশের মুসলিম অধ্যুষিত জনশ্রেণির জন্য দুইটি বড় উৎসব পালনের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সব কিছুকে থামিয়ে দেয়। নববর্ষের মত উৎসব সার্বজনীন হয়ে পড়ায়, বাংলাদেশ অতি অবশ্যই দাবি করতে পারে, দেশটি অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শিক জায়গায় আমরা ধর্ম, বর্ণ এক রেখাতেই আছি। যে রেখার দাগ পুরু হয়ে আমরা সুবর্ণ রেখায় ভর করে ক্রিসমাস, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা আয়োজন করতে পারি একসাথে।
সংকট তাই সামাজিক নিরাপত্তার অন্বেষণে যেয়ে খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশের মধ্যে রয়েছে। তাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই সেই শেখ হাসিনা কাটিয়ে ফেলতে পারবেন। পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের শাসকশ্রেণি সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করেই সভ্যতাকে অতি উঁচুতে নিয়ে যেতে পেরেছেন। প্রযুক্তি আজ পৃথিবীর সব প্রান্তেই বসবাস করে সব কিছুকে সহজ করে দেখাতেও পারছে।
বাংলাদেশ যেমন ২০২২ সালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বলছে, সামনের দিনে বৈশ্বিক মন্দা হলেও আমরা না খেয়ে মরে যাব না। পৃথিবীর অপরাপর নতুন দেশগুলো সেখানে হিমশিম খাচ্ছে। একজন শেখ হাসিনাকে খাদ্য নিরাপত্তার পর পুরো দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যেতে হচ্ছে। রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলে যে পক্ষ মনে করছে যে, শিক্ষিত একটি শ্রেণির এবার বোধ উদয় হবে। কিন্তু, বাস্তবতা হল, রাষ্ট্রগতির যে যান লাল সবুজের বাংলায় পরিভ্রমণ করছে, আশপাশ সব কিছু দেখেই তা চলছে।
প্রয়োজনে মেরামত চলে, তা অপ্রকাশ্যেই থাকে। শেখ হাসিনা খুব সম্ভবত আগামী ছয় বছরের মধ্যে রাজনৈতিক ধারণা, আদর্শ, মান এবং শাসনরীতি ইস্যুতে ক্রেডিবল আলাপচারিতায় যাবেন। দেশবাসীর সাথে, দেশের বিদগ্ধশ্রেণির সাথে। ততদিনে দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই পুরো এশিয়ার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আবির্ভূতও হবে।
লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এইচআর/জেআইএম