ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রাজনীতি

সমাবেশ সংলাপ ও নির্বাচন

এন আই আহমেদ সৈকত | প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২২

রাজনীতির ময়দানে সংলাপ, সমাবেশ ও নির্বাচন খুবই প্রাসঙ্গিক ও প্রাচীন আলোচনা। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে শব্দ তিনটির উত্তাপ বরাবরই বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর হাতে একটি স্মার্ট রাজনীতির প্রেক্ষাপট রচিত হলেও ১৯৭৫ এর আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেই রাজনীতির ধারাবাহিকতা মুখ থুবড়ে পড়ে। জন্ম নেয় বিশৃঙ্খল একটি নয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা। যার ফলশ্রুতিতে দেশের পরবর্তী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জাতীয় নির্বাচনগুলোর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল না লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।

রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতার নিমিত্তে মাঠের লড়াই চালিয়ে গেছে, গণতন্ত্র অর্জনের জন্য নয়। উদাহরণস্বরূপ ১৯৭৭ সালের হ্যাঁ / না ভোট, ৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচন কিংবা ২০০১ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনকে উল্লেখ করা যায়। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান দেশের সংবিধান এবং সেনা বিধান লঙ্ঘন করে এই কাজ করেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ক্যু, পাল্টা ক্যুতে গণতন্ত্র ছিল নির্বাসিত। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে ৮৬ ও '৮৮ সালে দুটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। এই দুই নির্বাচনেও গণতন্ত্র ছিল উপেক্ষিত। ৯০’র আগ পর্যন্ত তো স্বৈরশাসকরাই চালিয়েছে দেশ। দেশের মহামান্য আদালতও সেসব শাসনকালকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

আমরা যদি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি বাক বদল হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যদিও গণতন্ত্রের শত্রুরা সেবারও নানা টালবাহানায় নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য মতে, খালেদা জিয়ার দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন ১১ দিন পিছিয়ে ১৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তারিখকে ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। সেই শুরু এর পর কোনো নির্বাচনেই আর স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের শত্রুরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে। আইন অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে এ নিয়ে উত্তাপ ততই বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক সভা সমাবেশ করে যাচ্ছে।

নির্বাচনকে ঘিরে জনসমাবেশে বিগত শাসকদের মত কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না করে সরকার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গণতন্ত্রের নতুন ভিত রচনা করেছে। যার একক কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার। সরকার চাইছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের। আন্তর্জাতিক মহলও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।

নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সংলাপের ইঙ্গিত দিচ্ছেন কতিপয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক তবে সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অবস্থান বলা যায় অনেকটা স্পষ্ট করেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সদ্য অনুষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করে বলেন, ‘অনেকেই বলেন সংলাপ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। কিন্তু কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া! সাজাপ্রাপ্ত আসামি! যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।

যে খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হবে না, হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ, একশ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহতাআলা এই ধরনের গর্বভরা কথা পছন্দ করে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই ধরনের গর্বভরা কথা বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে।’ সুতরাং শেখ হাসিনার বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন করে নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সংলাপের কোন সম্ভাবনা নেই।

ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন মুখোমুখি। সঠিক ও সুষ্ঠ নির্বাচনে যাদের বিশ্বাস নেই তারা ইভিএম এর মত প্রযুক্তির বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, নির্বাচনে যত এগিয়ে আসছে ততোই বিএনপি বা অপশক্তির দোসরদের বড় আস্তানা নির্মাণকারীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৌড়াদৌড়ি বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাকে তথ্যগত ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন কে প্রভাবিত করার পুরাতন কূটকৌশল শুরু করে দিয়েছে ।

এদিকে অপকৌশল ও অপরাজনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন গুলোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। তার সবগুলো জনসম্মেলনই জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন দল তবুও বিভিন্ন পর্যায়ে সমাবেশের নামে অপ-রাজনৈতিক টোটকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। আজকাল নতুন রূপে উন্থান হওয়া কিছু নব্য বিএনপি বা নালিশ পার্টির সদস্য নিজেরাই হামলা করে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তবে যেকোনো মূল্যেই দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফল করতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি জনগণ আর সেই জনগণ তাদের ভোটিং পাওয়ারের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এমনটাই স্বাভাবিক। স্বাধীনতা বিরোধী কোনো পক্ষ যেন জনগণের সেই অধিকারকে বানচাল করতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যুগে এখন বিশ্ব। চারিদিকে প্রযুক্তির জয়জয়কার। অথচ একটি পক্ষ চাচ্ছে ভোট হবে প্রাচীন পদ্ধতিতে। যারা এখনও এধরনের অবৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনা লালন করে তাদের হাতে দেশ কতটা ভালো থাকবে তা সহজেই অনুমেয়। নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন করতে ইভিএম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত।

বিএনপির মত অগণতান্ত্রিক দলগুলোর জন্য পরামর্শ থাকবে আপনারা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করুন প্রথমে। রাজনীতি অর্থই জনগণের সেবা করা। সেই কাজ বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করা যাবে না। মনে রাখবেন দেশের মানুষ তখনই আপনাদেরকে বেছে নিবে যখন আপনারা তাদের কল্যাণে কাজ করবেন। আপনাদের বিগত আন্দোলনের জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি দেশের সাধারণ মানুষকে ভুগিয়েছে, তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করেছে। তাই তারা আপনাদের সাথে নেই।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অর্জন এদেশের কোটি কোটি জনতার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাকে শক্তিতে পরিণত করে তিনি বিগত দুই দশকে দোর্দণ্ডপ্রতাপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। দেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে তার উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্ম লিখে শেষ করার মত নয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে বাংলাদেশের মানুষের গর্বের প্রতীক হয়ে ওঠা পদ্মা সেতু। তরুণ প্রজন্মের মেট্রোরেল থেকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে টানেল যুগে প্রবেশ।

এক্সপ্রেস ওয়ে, শত শত ফ্লাইওভার, সেতু, শতভাগ বিদ্যুৎ, লাখ লাখ মানুষকে গৃহনির্মাণে করে দেয়া, পুরো বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। করোনাকালীন সমেয় তা দেখিয়েছে চোখে আঙুল দিয়ে। কি করেনি আওয়ামী লীগ সরকার! তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দেশের আপামর জনসাধারণ শেখ হাসিনাকেই বেছে নেবে এ ব্যাপারে আমরা শতভাগ নিশ্চিত। তবে দেশের প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। কেননা পূর্বের ন্যায় স্বাধীনতার শত্রুরা সর্বদা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে ধূলিস্যাৎ করে দেশের মানুষের নির্বাচনী অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন বরাবরই উৎসবের আমেজ বয়ে আনে এদেশের মানুষের হৃদয়ে। দেশদ্রোহী অপশক্তিরা সবসময়ই নির্বাচন ও শেখ হাসিনার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। শেষ সময় পর্যন্ত জনগণের ভালোবাসায় পরাস্ত হয় অস্ত্রের রাজনীতি ও মাফিয়াদের হুংকার। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিশ্রম বিফলে যায় না শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেটার প্রমাণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অব্যাহত থাকুক সে ধারাবাহিকতা। জয় বাংলার নৌকা ছড়িয়ে যাক লাল- সবুজের প্রতিটি প্রান্তরে। জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা।
shadshaikatbd@gmail

এইচআর/জেআইএম