শুভ কামনা মেসি, জয়তু আর্জেন্টিনা
দুই দিন আগে বিশ্বকাপ শুরু হলেও বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে এর আমেজ মূলত শুরু হবে আজ বিকেল ৪ টা থেকে। কারণ এ সময়ে আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে। এদেশের মানুষের বিশ্বকাপ উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস, আনন্দ এবং আবেগ আবর্তিত হয় আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলকে ঘিরে। এ দুই দলের বিজয় প্রত্যাশা করে বের হয় মিছিল। বাসাবাড়ির ছাদে উড়তে থাকে এ দুই দেশের পতাকা। যদিও আমাদের দেশের পতাকা আইনে এভাবে অন্য দেশের পতাকা উড়ানো নিষেধ। সম্ভবত বিশ্বকাপের সময় এ ধরনের পতাকা টানানোর যে রেওয়াজ আমাদের দেশে বহুবছর ধরে চলে আসছে সেটার উদ্দেশ্য যে নিছক বিনোদন; কোনোভাবেই দেশদ্রোহিতা নয় সেটা সবাই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারেন। আর তা পারেন বলেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এ বিষয়টিকে দেশদ্রোহিতা হিসেবে বিবেচনা করেন না। সে কারণেই হয়তো প্রচলিত পতাকা আইন প্রয়োগে তারাও শিথিলতা দেখান।
এবার আবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমাদের ছোটবেলায় ফুটবল মাঠে ম্যারাডোনার যে জাদুকরি ক্ষমতা দেখেছি সেটাই মনে হয় এমন এক সম্মোহনী আবহ তৈরি করে দিয়েছিলো যা আজও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে চলছে। ফলে সেই ১৯৮৬ এ বিশ্বকাপ জেতার পর দীর্ঘ ৩৬ বছরে আর একটা কাপ না জিতলেও আমাদের দেশে আর্জেন্টিনার ভক্ত সংখ্যা তো কমেইনি ; বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটা খুব অবাক করা বিষয়ই বটে। এই যে পছন্দের দল এতটা সময় ধরে বিশ্বকাপ জিততে পারছে না তবুও সেই দলকেই সমর্থন করে চলা— একে কি বলে অভিহিত করা যায়? পাগলামি? অতিরিক্ত আবেগ? যে যেভাবেই দেখুক না কেন, আমি বলি এর নামই ভালোবাসা। আজ বিকেল ৪ টায় সেই ভালোবাসার আবারও বহিঃপ্রকাশ হবে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার জন্য। প্রিয় লিওনেল মেসির জন্য। অগ্রিম শুভেচ্ছা থাকলো প্রিয় দল এবং খেলোয়াড় মেসির জন্য।
এবারের আর্জেন্টিনা দল অনেক গোছানো। সে কারণেই বোধ হয় আর্জেন্টিনা সমর্থকদের প্রত্যাশাও এবার অনেক বেশি। তার প্রমাণ প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা কিছুটা দেখতে পেয়েছি আরব আমিরাতের বিপক্ষে। গোলরক্ষক মার্টিনেজ তো এক কথায় দারুণ ফর্মে আছে। অসাধারণ সেভ করতে দেখেছি সেদিন। আমার অভিজ্ঞাতা বলে যে, আগের বিশ্বকাপগুলোয় আর্জেন্টিনার ফিনিশিংয়ে ঘাটতির কারণে গোল দিতে যেমন কষ্ট হতো তেমনিভাবে গোল খেয়ে গেলে তা শোধ করতেও দারুণ বেগ পেতে হতো। রক্ষণভাগও ছিলো দুর্বল। দেখা যেতো পুরো খেলায় ৬০% সময় বল নিজেদের দখলে থাকলেও হয় ড্র, না হয় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো। এবারের প্রস্তুতি ম্যাচ এবং ২০২১ কোপা আমেরিকা কাপে ওদের নৈপুণ্য দেখে মনে হয়েছে ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা ওরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। রক্ষণভাগও এখন তরতাজা।
এদিকে সর্বশেষ ৩৫ ম্যাচে আর্জেন্টিনা অপরাজিত। আর মাত্র ২ ম্যাচ জিতলে তারা এর আগে করা ইতালির রেকর্ড স্পর্শ করবে। আর যদি ৩ টা ম্যাচ জিততে পারে তাহলে ৩৮ ম্যাচ জিতে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিবে। এদিকে লিওনেল মেসি ৩৫ বছরে পা দিয়েছেন। ফলে ধরে নেয়া হচ্ছে সামনের বিশ্বকাপে তিনি হয়তো আর খেলবেন না। সে হিসেবে মেসির জন্য এটাই হতে যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ। ক্লাব ফুটবলের সব অর্জনই মেসিকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত বছর আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন কোপা আমেরিকা। ২০১৪ সালে উঠেছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনালেও। যদিও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। ফলে মেসির বাকি আছে শুধু বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে তোলা। এবার সেটা অর্জন করতে পারলে তা হবে অনন্য এক অর্জন। আমরাও সর্বান্তকরণে চায়- সেটাই হোক।
হয়তো এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই স্পেনের কোচও বলেছেন তার দল ফাইনাল খেলুক বা না খেলুক তাতে কিছু যায় আসে না। তবু মেসি বিশ্বকাপ জিতুক। মেসির হাতে উঠুক বিশ্বকাপ শিরোপা। আমরাও অধীর আগ্রহে সেদিকেই তাকিয়ে আছি। শুভকামনা মেসি, জয়তু আর্জেন্টিনা।
লেখক: চিকিৎসক।
এইচআর/জেআইএম