ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দেশের অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হুন্ডি

ইয়াহিয়া নয়ন | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। লকডাউনে স্থবির হয়ে যায় গোটা দেশ। এ সময় অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে নানা ধরনের ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনার প্যাকেজ ছাড়ে সরকার।

ছোট বড় সব ব্যবসায় নেমে আসে ধস। সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে রিজার্ভের ওপর নির্ভর করতে হয়।

রিজার্ভের অন্যতম উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দেশে প্রবাসী আয় কমে যায়। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের অস্থিরতা শুরু হয়। করোনার সময় রেকর্ড প্রবাসী আয় দেশে আসে। তাতে ডলারের দাম ধরে রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরপর ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে গত ১৫ মাসে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি বা ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এতে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ডলারে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। রিজার্ভে টান পড়ায় এখন বেসরকারি খাতে কোনো ডলার বিক্রি করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে, প্রবাসী আয় দেশে আসা কমে গেল কেন? করোনার পরে গোটা বিশ্ব উৎপাদন-উন্নয়নের ধারায় ফিরেছে। প্রবাসীদের কর্মঘন্টা বেড়েছে, বেড়েছে আয়। কিন্তু সেই আয় দেশে আসছেনা কেন?

অনুসন্ধানে দেখা দেখা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে প্রকাশ্যে সাইনবোর্ড লাগিয়ে হুন্ডির ব্যবসা করছে বিকাশ ও রকেট। ফলে দেশে আসছে না প্রবাসী আয়, ডলার। ফরে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে দেশের রিজার্ভ। ইউক্রেন যুদ্ধের পর গোটা বিশ্বেই ডলারে যে অস্থিরকা শুরু হয় তারই সুযোগ নিচ্ছে এই প্রকাশ্য হুন্ডি।

বিদ্যমান অবস্থায়, হুন্ডি রোধ করতে হলে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। প্রণোদনা বাড়ালে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়বে। রপ্তানির জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে রেমিট্যান্সে মাত্র আড়াই শতাংশ। প্রণোদনা বাড়ানো গেলে হুন্ডি কমবে।

এ ছাড়া রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউসের উদ্যোগে প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা যেতে পারে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, সৌদি আরব, দুবাই গিয়ে প্রবাসীদের সমস্যাগুলো শুনে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতে হবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্যাংকের অংশীজনরা জানিয়েছেন, দেশে প্রবাসীদের টাকা হুন্ডিতে আসছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। এতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা মার্কিন ডলার বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে সমান্তরালভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়ছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিকাশ ও রকেটের নামে প্রকাশ্যে হুন্ডির ব্যবসা চলছে। এসব বন্ধে বিদেশে কড়া গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন।

অংশীজনদের মতে, প্রবাসীরা ১ কোটি টাকার বেশি বন্ড কিনতে পারেন না। আবার বন্ড নবায়ন হচ্ছে না। প্রবাসী বন্ডের ক্রয়সীমা বা সিলিং ১ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ কোটি করা হলে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে বন্ডে তিন স্তরে বিনিয়োগ সুবিধা প্রয়োজন। আবার আড়াই শতাংশ হারে যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে আরও ১ শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়া হলে রিজার্ভ বাড়বে।

এই ১ শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসীরা যখন দেশে ফিরবেন, তখন দেওয়া হলে সরকার ও প্রবাসী উভয়ে লাভবান হবেন। রেমিট্যান্স না এলে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি বাড়বে। এদিকে হুন্ডিতে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠেছে সব মহলে।

বিদেশে এবং দেশে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে তাদের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। হুন্ডি বন্ধে কড়া নজরদারির বিকল্প নেই। দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রবাসীরা যে অর্থ পাঠান তা যাতে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। হুন্ডি ব্যবসা বন্ধে কড়া আইন প্রণয়নের কথা ভাবা যেতে পারে। হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্র দেশের শত্রু। তারা প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে।

এমএফএস ব্যবহার করে টাকা পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, স্বর্ণপাচার, মাদক পাচারসহ আরো অনেক অবৈধ ব্যবসা করে থাকে। আমাদের অর্থনীতি প্রাণপ্রবাহ হলো প্রবাসী আয়, সেখানে তারা বড় থাবা বসিয়েছে। হুন্ডি আমাদের রিজার্ভের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অর্থনীতির ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন