ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

পাকিস্তানের এজেন্ডায় জেলহত্যা!

প্রকাশিত: ০৮:০৩ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০২২

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ’৭১ পরাজিত শক্তি দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্র স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে এই দেশকে আবারো পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে যে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে তারই ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে জাতীয় চার নেতা যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সেই অবদান কোনোদিন ভোলার নয়।

সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাময় কলঙ্কিত দিন ৩ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায় ঘাতকরা। কেড়ে নেয় বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ চার ঘনিষ্ঠ সহচর, জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানের জীবন।

জাতীয় এই চার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আজীবন রাজনৈতিক সহকর্মী। পাকিস্তানের শোষণ আর শাসনের বেড়াজাল থেকে বাঙালিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীনতার দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী এই চার নেতা। শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, আন্দোলন-সংগ্রামে এই চারজন ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

মূলত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও জেলের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। দুটো হত্যাকাণ্ডের ঘটনাই ছিল রাজনৈতিক। কারাগারের অভ্যন্তরে এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ঘাতকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করা। এই হত্যাকাণ্ডের কারণে যে নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা হাজার বছরেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন, বিভিন্ন দূতাবাসে পদায়ন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তার আসল চেহারা উম্মোচন করেন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকা সত্ত্বেও তাকে দেশে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন জিয়াউর রহমান।

জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুরু হয় হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র , চক্রান্তের রাজনীতি। রাজনীতির আঁকাবাঁকা পথে যার ধারাবাহিকতা এখনো বহমান। এখন পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মনে-প্রাণে মেনে নিতে পারেনি, জয়বাংলা স্লোগান শুনলে যাদের গায়ে জ্বর আসে, লাল সবুজের পতাকার পরিবর্তে এখনো চাঁনতারা পতাকার স্বপ্ন দেখে যারা, যাদের চিন্তা-চেতনা আর ভালোবাসা পেয়ারে পাকিস্তানকে ঘিরে, তারা কি থেমে থাকার পাত্র?

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি বেঁচে না থাকতেন তাহলে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয়ে যেতো অনেক আগেই। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরার পর আবার নতুন করে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখে মুক্তিকামী বাঙালি। হয়তো মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন দুখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটানো আর বিচারহীনতা সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে।

শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কারণেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে কালো আইন ভেদ করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দায়মুক্তি ঘটছে বাঙালির। প্রশ্ন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে কতটা ঝুঁকিতে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা? ঘাতকের বুলেট সবসময় তাক করে বেড়ায় বাঙালির আস্থা, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা শেখ হাসিনাকে। একবার নয় , দুবার নয় ১৮ বার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা চালায় ঘাতকরা। কারণ বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পরও তাদের মিশন বাস্তবায়নে এখনো পাহাড়সম বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে যেনো আর কোনো দিন পাকিস্তানের এজেন্টরা দুঃস্বপ্ন দেখতে না পারে সে লক্ষ্যে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে হবে। তালিকা তৈরি করতে হবে স্বাধীন দেশে লুকিয়ে থাকা বাঙালির ছদ্ম আবরণে পাকিস্তানি টিকটিকিদের।

ভবিষ্যতে যেনো আর ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর আর ২১ আগস্টের মতো নৃশংস ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। আগামী প্রজন্মের কাছে এই খুনি ও তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা যারা বাস্তবায়ন করতে চায় তাদের ঘৃণিত হিসেবে পরিচয় করে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা। তাঁদের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা- যাঁদের ত্যাগ যুগে যুগে আমাদের বলীয়ান করবে শত সংকট মোকাবিলায়, আর অন্ধকারে দেখাবে মুক্তির পথ।

লেখক: ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

এইচআর/ফারুক/এমএস