ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ক্রিকেট

খেলার কথা কথার খেলা

অঘোর মন্ডল | প্রকাশিত: ১১:৩৪ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০২২

প্রকৃত ক্ষমতার ভাষা নির্বাক। ক্ষমতাবানদের মুখ আলগা হয় না। আলটপকা কিছু বলেন না। তারা ভাবলেশহীন থাকতে চান। কাউকে অস্বস্তিতে ফেলতে চান না তারা। আবার নিজেও পড়তে চান না।

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোঁজ-খবর যারা একটু রাখেন তারা কী দেখেন! কি শোনেন? কে ক্ষমতাবান আর কে ক্ষমতাবান না তা বোঝা কঠিন! সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেটের অনেক প্রথা বা ট্র্যাডিশন বদলে গেছে। এক সময় একটা দলের সবচেয়ে ক্ষমতাবান লোক ছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু সময় তার ক্ষমতা খর্ব করেছে। এখন তিনি কী বলবেন, কতোটুকু বলবেন তারও একটা সীমারেখা এঁকে দেয়া থাকে। সেটা সব দেশে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।

তবে মাঝে-মধ্যে মনে হয় কীসের প্রথা? কীসের ট্র্যাডিশন! বাংলাদেশ ক্রিকেটে কেউ কোন প্রথায় বিশ্বাসী নন। কেউ সেটা মানতেও চান না। যার যা বলার কথা নয়, তিনি তা বলছেন। তিনি বলছেন, নিজের ক্ষমতা প্রমাণের জন্য!

গণমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই কথাগুলো সুনামির ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ে। তাদের সেই সব কথাবার্তা পড়ে এবং শুনে মনে হয়, এগুলো হচ্ছে নিজের ক্ষমতাবান ইমেজ তৈরির একটা বিজ্ঞাপনী শক্তি! তারা অবশ্য ভাবতে চান না; ক্রিকেটের সাথে যে আভিজাত্য জড়িয়ে তার স্নিগ্ধতায় ক্রিকেট কর্তাদের অভিজাত একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়। ঐ সব ‘পাওয়ার প্লে’ মার্কা কথাবার্তায় সেই ইমেজের আস্তরণটা খসে পড়তে শুরু করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক প্রভাবশালী পরিচালক যিনি সাবেক অধিনায়কও বটে, তিনি বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে সমালোচনা করলেন আরেক সাবেক অধিনায়কের। যিনি আইসিসির দায়িত্বশীল একটা পদে কাজ করেন। সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে এসব দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন; ‘আমাদের ক্রিকেটাররা কী শুধু খেলাটাই খেলেছেন। খেলাটা থেকে কি তারা কিছু শিখেছেন?’ শিষ্টাচার-ভদ্রতা-সৌজন্যের ঘাটতির কথাই হয়তো তারা বুঝাতে চেয়েছেন।

আসলে আমাদের ক্রিকেটে এখন কথার খেলাটাই বেশি হচ্ছে। গণমাধ্যম, সমাজ মাধ্যম সব জায়গায় সেই ‘কথা’-টাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে! বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটা খুব স্বাস্থ্যকর কিছু না। বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে ঘন্টা পাঁচেক সভা করে বিসিবি সভাপতি তার কথার ইনিংসটা শুরু করেছিলেন দারুণভাবে।‘বলার মত তেমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এরপর গণমাধ্যমের ছোড়া ফুলটসে তিনি বাউন্ডারি লাইনেই ক্যাচ দিলেন! এবং সেটা পাওয়ার হিটিং করতে গিয়ে! বোর্ডের কোন এক সাবেক পরিচালকের কথা ধরে মিডিয়ার ছোড়া প্রশ্নে বিসিবি সভাপতির জবাব; ’তিনি ধারাবাহিকভাবে একই কথা বলে যাচ্ছেন। আমি যদি বলি তিনি মিথ্যা বলেন, তাহলে অনেকে আবার দুঃখ পাবেন। আমি ‘অসহায়’ এটা বলে যদি তিনি মজা পান, তাতে অসুবিধা কী! পাচ্ছে পাক।’

সঙ্গে হাসতে হাসতে যোগ করেন, ‘ওনার পক্ষে এসব কথা বলা মানায় না।’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাক্য; ‘ওনার পক্ষে এসব কথা বলা মানায় না।’ আসলে আমরা বুঝত পারি না কোন কথা বলা উচিত। কিংবা বলা উচিত না। সেটা পারলে বিসিবি সভাপতি নিজে কী আর সভাশেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেন! যে সভায় তার ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পেশাদারিত্ব দেখিয়ে তিনি প্রধান নির্বাহীকে দিয়ে একটা স্টেটমেন্ট ইস্যু করাতে পারতেন। অথবা মিডিয়ার চাহিদা মেটাতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠাতেন মিডিয়ার সামনে। কিন্তু তিনি নিজেই এলেন। আর যা বললেন, সেটা বিসিবির সভাপতি না বললেই ভাল হতো।

বিসিবির সাবেক পরিচালক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন সর্ম্পকে তিনি যা বলেছেন, তাতে তাকে ‘মিথ্যাবাদী’-ই অ্যাখা দেয়া হয়েছে! কিন্তু এই ভদ্রলোক যে কললিস্ট পাঠিয়েছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে একবার নয়, দু’বার নয়, বহুবার বিসিবি সভাপতি নিজে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনকে কল করেছেন। লম্বা সময় ধরে কথা হয়েছে। যে লোকটা ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন (বিসিবি সভাপতির ভাষ্য অনুযায়ী) তাঁকে কেন কল করতে হবে। কথা বলতে হবে!

কী কথা হয়েছে সেটা হয়তো জানা গেলো না। কিন্তু দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে বহুবার সেটা ঐ কললিস্ট প্রমাণ করছে। এই জমানায় দু’জনের কথোপকথন চাইলে শোনাও যেতে পারে। তখন সত্য-মিত্যার হিসেবটা নতুনভাবে মেলাতে হতে পারে। বিষয়টাকে জটিল না করে, এড়িয়ে যেতে পারতেন বিসিবি সভাপতি। আর সব সমালোচনার জবাব বিসিবি সভাপতিকেই দিতে হবে কেন? বাকি পরিচালকরা কী অলংকার!

আসলে ক্রিকেটে ভাল করতে শুধু মাঠে এগারজন যোদ্ধার জীবন বাজি রেখে লড়াই যথেষ্ট নয়। দরকার মাঠের বাইরে খুঁটিনাটি অনেক কিছু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবয়ব হয়ে দাঁড়াছে, এগারজন ক্রিকেটার খেলবেন আর কিছু লোক প্রতিদিন কথা বলবেন! যে কথাগুলো ক্রিকেটীয় শিষ্টাচার, সৌজন্যের সঙ্গে একেবারেই বেমানান!

লেখক: সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলামিস্ট।

এইচআর/জেআইএম