পরিবেশ
চীনে বিশ্বের প্রথম ‘নেট-জিরো’ শিল্প-উদ্যান
প্যারিস জলবায়ুচুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ল বুজে এলাকায়। আর মূল চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল এবং কার্যকর হয় একই বছরের ৪ নভেম্বর। চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৯৫টি দেশ স্বাক্ষর করে (অবশ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এবং জো বাইডেনের আমলে আবার ফিরেও আসে)।
যতদূর জানি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতেই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষেত্রে ‘নেট-জিরো’ ধারণা প্রথম ব্যবহার করা হয়। আর এ ধারণার মূল কথা হচ্ছে: গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ শূন্যের যতো কাছাকাছি সম্ভব নামিয়ে আনতে হবে; বাকি যেটুকু নিঃসরণ হবে, তা সমুদ্র ও বনভূমি শোষণ করে নেবে। আর এভাবেই আমাদের সুন্দর পৃথিবীর পরিবেশ হবে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসমুক্ত, হবে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলমুক্ত।
প্যারিস জলবায়ুচুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এই মর্মে একমত হয়েছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা, প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায়, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সবচেয়ে ভালো) সীমিত রাখতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। আর এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ‘নেট-জিরো’-তে নামিয়ে আনতে হবে।
বলাবাহুল্য, কাজটা সহজ নয়। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট-জিরো’ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব, তবে এর জন্য বিশ্বের জ্বালানিব্যবস্থাকে একেবারে ঢেলে সাজাতে হবে, রূপান্তর করতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বে কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে হবে। এসব জ্বালানির ওপর বিশ্বের বর্তমান নির্ভরশীলতার দিকে তাকালে, ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট-জিরো’ লক্ষ্য অর্জনকে খুবই কঠিন বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
তবে, এই কঠিন লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছে বিশ্বের অন্তত ১৩০টি দেশ। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, এসব দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ‘নেট-জিরো’-তে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীনও অনেকটা একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটি ২০৬০ সালের মধ্যে ‘কার্বন-নিরপেক্ষতা’ অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। অনেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষেত্রে ‘কার্বন-নিরপেক্ষতা’ ও ‘নেট-জিরো’ টার্ম দুটিকে সমার্থক মনে করেন। আবার কেউ কেউ দুটির মধ্যে খানিকটা পার্থক্য আছে বলে রায় দেন।
২০০৬ সালে নিউ অক্সফোর্ড আমেরিকান ডিকশনারি ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ টার্মটিকে ‘ওয়ার্ড অব দি ইয়ার’ আখ্যা দেয় (নামে ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ হলেও, শুধু কার্বন-ডাই-অক্সাইড নয়, সবধরনের গ্রিনহাউস গ্যাসই এর অন্তর্গত)। আর ২০২০ সালে, প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের ৫ বছর পর, জাতিসংঘ মহাসচিব এই মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, জলবায়ুচুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করছে না। তিনি বলেন, কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জিত না-হওয়া পর্যন্ত সকল দেশকে ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ মেনে চলতে হবে।
দৃশ্যত, চীনে ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ চলছে। দেশটি ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে। সবাই জানেন, বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পরিবেশ দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ২০২০ সালে বিশ্বে যত গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়েছিল, তার ২৭ শতাংশের জন্য দায়ী পরিবহন খাত। চীন তাই পরিবহন খাতকে ‘সবুজ খাতে’ পরিণত করতে, নতুন ও দূষণমুক্ত জ্বালানিচালিত যানবাহনের প্রসার ঘটাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নতুন জ্বালানিচালিত যানবাহন তৈরি হচ্ছে চীনে; সবচেয়ে বেশি নতুন জ্বালানিচালিত যানবাহন চলাচলও করছে চীনের রাস্তায়। চীনের বিখ্যাত দ্রুতগতির ট্রেনও চলে দূষণমুক্ত জ্বালানি তথা বিদ্যুতে।
চীনে জ্বালানি হিসেবে গ্রিন হাইড্রোজেন বা সবুজ হাইড্রোজেনের ব্যবহারও ক্রমশ বাড়ছে। সবুজ হাইড্রোজেন হচ্ছে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি। পানির ইলেক্ট্রোলাইসিস বা তড়িদ্বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটি উৎপন্ন হয়। এই জ্বালানি ব্যবহারের সময় বায়ুমণ্ডলে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসৃত হয় না। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সবুজ হাইড্রোজেন উত্পন্নকারী ও ব্যবহারকারী দেশ। ২০২০ সালে চীন ৩ কোটি ৩০ লাখ টন সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করে। ২০১০ সাল থেকে চীনে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন বাড়ছে গড়ে ৬.৮ শতাংশ করে।
বস্তুত, ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সামনে এগুচ্ছে চীন; একে একে বাস্তবায়ন করে চলেছে বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন প্রকল্প। তেমনি একটি প্রকল্প হচ্ছে ‘নেট-জিরো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ বা ‘নেট-জিরো শিল্প-উদ্যান’। চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ার ওর্দোসে (Ordos) গড়ে উঠছে এই উদ্যান। এই শিল্প-উদ্যানে ব্যবহার করা হবে শুধু পরিচ্ছন্ন জ্বালানি তথা বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি, সবুজ হাইড্রোজেন, ইত্যাদি। বলাবাহুল্য, এটি হবে বিশ্বের প্রথম ‘নেট-জিরো শিল্প-উদ্যান’।
চীনের শীর্ষস্থানীয় সবুজ প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘এনভিশন গ্রুপ’ (Envision Group) এই শিল্প-উদ্যান গড়ে তোলার কাজ শুরু করে গত বছরের মাঝামাঝিতে। এক বছর পরে এসে নির্মাণাধীন উদ্যানটি একটি আকার পেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই শিল্প-উদ্যানে একটি বায়ুশক্তি প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে, নির্মিত হয়েছে ব্যাটারি ও হাইড্রোজেন উত্পাদনকেন্দ্র।
নেট-জিরো শিল্প-উদ্যানে উচ্চ শক্তিচালিত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করবে। এনভিশনের ভাষ্য অনুসারে, উদ্যানে নেট-জিরো জ্বালানির নিরাপদ ও স্থিতিশীল সরবরাহের নিশ্চয়তা থাকবে। খরচও তুলনামূলকভাবে কম হবে। আর এ কারণেই ইতোমধ্যেই লুনচি গ্রিন এনার্জি টেকনোলজি, চ্যচিয়াং হুয়াইয়ু কোবাল্ট, এবং শাংহাই হাইড্রোজেন প্রপালশান টেকনোলজি কোম্পানির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান উদ্যানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়বে।
সর্বশেষ উপাত্ত অনুসারে, ওর্দোস মালভূমিতে ২১০২০ কোটি মেট্রিক টন কয়লার মজুত আছে; গ্যাসের মজুত আছে প্রায় ৫০০০০০ কোটি ঘনমিটার। এ কারণেই, বিগত কয়েক দশকে, চীনের এই অঞ্চলটিতে কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক অসংখ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, এসব প্রতিষ্ঠান গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়িয়েছে। এখন নির্মাণাধীন নেট-জিরো শিল্প-উদ্যানটি অঞ্চলের সমৃদ্ধ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্সসমূহ কার্যকরভাবে ব্যবহার করবে এবং অঞ্চলের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত কমিয়ে আনবে।
আশা করা হচ্ছে, ওর্দোসের নেট-জিরো শিল্প-উদ্যান হবে একটি উত্কৃষ্ট মডেল। এ ধরনের আরও অনেক উদ্যান গড়ে উঠবে চীনের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে যেসব স্থানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্সসমূহ সমৃদ্ধ। নেট-জিরো শিল্প-উদ্যান হতে যাচ্ছে নতুন ‘নেট-জিরো শিল্পব্যবস্থা’-র মূল উপাদান। আর এ শিল্পব্যবস্থা চীনকে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনে সাহায্য করবে।
এনভিশন গ্রুপ শুধু চীনে এমন শিল্প-উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী এ ধরনের শিল্প-উদ্যানকে জনপ্রিয় করতে চায় এনভিশন। তাই, প্রতিষ্ঠানটি আগামী এক দশকে বিশ্বব্যাপী এ ধরনের এক শ শিল্প-উদ্যান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বছরে গড়ে ১০০ কোটি টন হ্রাস করা।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, এনভিশন গত জুলাই মাসে স্পেনের সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুসারে, এনভিশন স্পেনে ইউরোপের প্রথম নেট-জিরো শিল্প-উদ্যান গড়ে তুলবে। আর এই প্রজেক্টের আওতায় আরও নির্মিত হবে: বিদ্যুত্চালিত যানবাহনের ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য একটি কারখানা; নবায়নযোগ্য জ্বালানিব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশানের জন্য একটি উন্নয়ন ও উদ্ভাবনকেন্দ্র; ইলোক্ট্রোলাইজার উত্পাদনের জন্য একটি সবুজ হাইড্রোজেন উত্পাদন প্লান্ট; এবং স্মার্ট উইন্ড টার্বাইন অ্যাসেম্বলির জন্য একটি বায়ুশক্তি উত্পাদন প্লান্ট। চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে ওর্দোস প্রজেক্টের কাজ শেষ হবার পরপরই।
শিল্প-উদ্যান গড়ে তোলার এই চুক্তি শুধু স্পেনের জন্য নয়, গোটা ইউরোপের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জন করতে হলে, নতুন নেট-জিরো শিল্পব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে পেতে হবে মুক্তি।
নেট-জিরো শিল্পব্যবস্থা গড়ে তোলার দৌড়ে চীন দৃশ্যত অনেক এগিয়ে আছে। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য চীন এগুচ্ছে পরিকল্পনামাফিক। প্রশ্ন হচ্ছে: ইউরোপ ও আমেরিকা কি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে? এমনকি চীনের সাহায্য নিয়েও? পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ প্রশ্নের হ্যাঁ-সূচক জবাব দেওয়া মুশকিল।
ইউক্রেন সংকটের পর, রাশিয়ার ওপর স্মরণকালের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এখন নিজেই মহাসংকটে আছে ইউরোপ। রুশ জ্বালানির বিকল্প খুঁজতে গিয়ে, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় দেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের উত্পাদন পুনরায় শুরু করার বা কয়লার ব্যবহার বন্ধের প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইউরোপকে তুলনামূলকভাবে বেশি ভোগালেও, যুক্তরাষ্ট্রকেও একেবারে ছেড়ে কথা কয়নি। সম্প্রতি মার্কিন আদালত ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’-এর অধীনে, বিদ্যমান কয়লা ও গ্যাসচালিত পাওয়ার প্লান্টগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে, জাতীয় পরিবেশ রক্ষা ব্যুরো (ইপিএ)-র নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা সীমিত করেছে। এ অবস্থায় ২০৫০ সালের মধ্যে এসব দেশ কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনে সক্ষম হবে কি না বলা সত্যিই মুশকিল।
লেখা শুরু করেছিলাম ভালো তথ্য দিয়ে; শেষও করতে চাই ভালো তথ্য দিয়ে। পৃথিবীর দুই শতাধিক দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করে ছোট্ট দেশ টুভালু। তবে, আসল কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ভুটান, সুরিনাম ও পানামা। এই তিনটি দেশকে একত্রে ডাকা হয় ‘দা হোলি ট্রিনিটি অব নেগেটিভ কার্বনস’। অন্যভাবে বললে, এই তিনটি দেশ ‘কার্বন ঋণাত্মক’ (carbon negative)। এরা আলাদাভাবে যতটুকু করে কার্বন নিঃসরণ করে, তারচেয়ে বেশি করে কার্বন এদের সমুদ্র ও বনভূমি শোষণ করে। এমন দেশের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই মঙ্গল।
লেখক: বার্তাসম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি), বেইজিং।
[email protected]
এইচআর/এমএস