চীন-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক : কিছু সত্য, কিছু উপলব্ধি
বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ার দুই জনবহুল এবং শক্তিশালী দেশ চীন ও ভারতের সুসম্পর্ক চলমান। বলা যায় দুটি দেশের সঙ্গেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে। চীন ও ভারত দুই দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এই মুহূর্তে চীন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোলপাড় তুলেছে তাইওয়ান প্রশ্নে। এতটা উত্তেজনা বিগত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। অথচ এই সময়েও ব্যস্ত চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশ সফরটি বাতিল করেননি। এতেই বোঝা যায় বর্তমান চীন বাংলাদেশকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে।
গত এক দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চীনের নেতাদের আনাগোনা অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সময়ে অসময়ে বাংলাদেশ সফরে চলে আসছেন। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে চীন না চাইতেই টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হচ্ছে, বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোতে বিনীয়োগ করতে। সে সব কথায় পরে আসছি। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে প্রয়োজন মনে করলেই অনুদান, ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকতেও যখন বুঝতে পারছে একটি পণ্য বাংলাদেশের ভীষণ প্রয়োজন তখন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে বাংলাদেশকে আমদানির সুযোগ দিচ্ছে। এ সবই সুখের কথা। কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে কিছু সত্য যা বয়ান করা অতি প্রয়োজন।
পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের সকলের সঙ্গেই সম্পর্ক থাকবে। থাকবে না কেন? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই নীতির কথাই বলেছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার সে নীতির কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু সকলের সঙ্গে সমান সম্পর্ক থাকতে হবে, বা কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা একটু বেশি থাকতে পারবে না এমন কথা কোথাও নাই। বাংলাদেশেও বিগত দিনে সকলের সঙ্গে সমান আচরণ করতে পারেনি। পাবলিক সেন্টিমেন্টের কথা বিবেচনা করে কোনো কোনো দেশের বন্ধত্বের হাত ফিরিয়ে দেওয়ার উদাহরণও আছে।
যা হোক, বাস্তবতা হলো সব রাষ্ট্রকে সমান চোখে দেখতে চেষ্টা করা রীতিমতো অপরাধের সামিল। আমরা অবশ্যই একমত যে প্রতিবেশি দুটি বড় দেশ ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই আমরা সম্পর্ক চাই। আন্তরিক সম্পর্কই চাই। তবে এর মানে এরকম নয় এই দুটি দেশকে সমান চোখে দেখে সংস্কৃতি, আঞ্চলিক রাজনীতি, ইতিহাস সবকিছু ভুলে যেতে হবে। যার যতটা প্রাপ্য তাকে ততটা দেওয়াই সমীচীন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসাবে চীন ও ভারতের একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে বলে এদেশের সচেতন সব মানুষের ধারণা। আজ বাংলাদেশের কেবিনেট, প্রশাসন, বাণিজ্য খাত, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন সর্বত্র এই ধারণার একটি আবহ প্রবেশ করেছে। অনেকটা শ্রীলঙ্কায় যেমন দেখা গিয়েছে। এখন যে কারো প্রশ্ন থাকতে পারে, বাংলাদেশের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের তাহলে কী করা উচিত?
কী করা উচিত তা মোটেই অস্পষ্ট কোনো বিষয় নয়। দুটি দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত, তবে মূল্যবোধ, আত্মপরিচয় বিকিয়ে দিয়ে নয়। একটু পেছনে ফিরে গেলেই এদেশের সঙ্গে এই দুটি দেশের সম্পর্কের আদ্যোপান্ত স্পষ্ট হয়ে দেখা দেবে। আমি অজানা কোনো কথা বলবো না, জানা ইতিহাসই খানিকটা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তারপর যে কেউ বিবেচনা করবেন, বাংলাদেশ সঠিক পথে হাঁটছে কি না। প্রথমে ভারতের কথা বলবো, না চীনের কথা? ভারতের কথাই বলি।
ভারত বাংলাদেশের বন্ধু, কিন্তু অন্য আর দশটি দেশের মত স্বাভাবিক বন্ধু না। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এতটাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে এই দুই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভূগোলসহ যে কোনো ক্ষেত্রেই একটি দেশকে অস্বীকার করলে আরেকটিও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই বাংলাদেশকে পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্ত করতে যে ঝুঁকি ভারত নিয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। নিজ কানে বহুবার শুনেছি, দুষ্ট লোকে মিনমিন করে বলে থাকে, ‘ভারত নিজের প্রয়োজনে, নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। পাকিস্তানকে ভাগ করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।’
এর চাইতে মোনাফেকি কথা, অদূরদর্শী চিন্তা আর কিছু হতে পারে না। এই ধরনের মোনাফেকি যুক্তি বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রবেশ করানো হয়েছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটনের আশেপাশের সময়ে। আজ তার আরো ডালপালা গজিয়েছে। যদি শুধু পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলাই উদ্দেশ্য হবে, তাহলে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান থেকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে ইন্দিরা গান্ধী কেন উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন, কেন উদ্যোগ নিয়েছিলেন? পরাজয়ের কারণে ইয়াহিয়া খান সিএমএলএ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভুট্টোকে দায়িত্ব দেন। ভুট্টো তখন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এদিকে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার উদ্দেশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়ে গিয়েছে। লন্ডনে ভুট্টোর বিমান জ্বালানি নিতে থামলে সেখানেই ইন্দিরা গান্ধী ভুট্টোর কাছ থেকে লায়লা মোজ্ফফরের মাধ্যমে আশ্বস্ত হন যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে না। স্বাধীনতা লাভের সময় কথা ছিল, ভারতের সেনারা বাংলাদেশ থেকে জুন মাসে ফিরতে শুরু করবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরারকালে ইন্দিরা গান্ধীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ভারতীয় সেনারা কবে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে? গান্ধী বলেছিলেন, আপনি যেদিন থেকে চাইবেন। অতএব তিন মাস এগিয়ে ৩১ মার্চ থেকে ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে দেশে ফিরে যেতে শুরু করে।
পরাজিত শক্তি আমেরিকা, চীন এবং এদেশীয় পাকিস্তানী সমর্থকরা এমনিতেই বঙ্গবন্ধু এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি যার পর নাই নাখোশ ছিল। এবং স্বাধীনতালাভের শুরু থেকেই নানা প্রপাগান্ডা ব্যাপকভাবে অত্যন্ত কৌশলে গোটা জনপদে ছড়িয়ে দিতে থাকে। বাংলাদেশে গড়ে ওঠে জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ, যার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়তে থাকে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র, যারা মনে করতো শেখ মুজিব তাদের পেয়ারের পাকিস্তানকে ভেঙে দিয়েছে এবং যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায়, সুতরাং সমাজতান্ত্রিক ব্লকে চলে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশে ভারত ও শেখ মুজিবুর রহমানের ইমেজ খাটো করা একটি বিরাট দায় হয়ে পড়েছিল তাদের জন্য।
শুরুতেই তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর নামে ছড়িয়ে দিতে থাকল, বাংলাদেশ থেকে তারা পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো নিয়ে গেছে। এরচেয়ে হাস্যকর কথা আর কিছু নাই। নিয়াজির লেখাতেই ক্ষোভ আছে, ভারতের আধুনিক অস্ত্রের কাছে তাদের অস্ত্র ছিল বিগত দিনের। কী নিয়েছে ভারত তার হিসাব কিন্তু আজো কেউ দিতে পারেনি। এদেশের লাখে একজন মানুষও তখন অস্ত্র দেখে চিনতো না যে সেটা ভারতীয় অস্ত্র না পাকিস্তানের। ফলে সশস্ত্র ভারতীয় সেনারা যখন ফিরে যায় তখন মানুষ তাদেরকে অস্ত্রসহ-ই ফিরে যেতে দেখে। আর এই প্রোপাগান্ডা জাসদের মুখ থেকে মানুষ খেতে শুরু করে।
এই বাংলাদেশকে দীর্ঘকালের ২৩ বছরের নির্যাতন, অত্যাচার শোষণ থেকে মুক্ত করতে তৎকালীন দরিদ্র ভারতকে দুটি বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়েছিল। একটি আমেরিকার, আরেকটি চীন। দরিদ্র ভারত ১ কোটি বাংলাদেশিকে আশ্রয় দিয়ে ভরণপোষণ করিয়েছে। হিমশিম খেতে হয়েছে ভারতকে। তারপরও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দেশে ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা খাওয়া, নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সমস্ত সুবিধার ব্যবস্থা করেছিল। সে ইতিহাস বলতে গেলে অনেক লম্বা করে বলতে হবে।
সেই যে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছে, আর কোনোদিন এ মুখে ফিরেও তাকায়নি। যদি তাকাতো, ইতিহাস অন্যরকম করে লিখতে হতো। তারপর থেকে আজবধি কোনো কারণে কোনোদিন সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতীয় সেনারা প্রবেশ করেনি, এমনকি ১৮ জন বিএসএফ সীমান্তে নিহত হওয়ার পরও না। ভারতের মতো একটি বৃহত রাষ্ট্রের পেটের ভেতরে থেকেও কোনোদিন বাংলাদেশ কোনো হুমকি অনুভব করেনি। অথচ ভারতবিরোধী সব ধরনের এলিমেন্টস এদেশে ছিল এবং আছে। দুঃখের বিষয় এসব উপলব্দি আমাদের অনেকেরই নেই। ১৯৭২ সালে করা মৈত্রী চুক্তি ভারত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করেছে। ৯৭ সালে সে চুক্তি শেষ হয়।
ভারত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলির, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশে যেই ধর্মের লোক সংখ্যগরিষ্ঠ, সেই দেশে সরকার ওই ধর্মের পক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। পররাষ্ট্রনীতিতেও তার প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে নিয়মিত বিরতিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা হচ্ছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি কোনো বিচ্ছন্ন ঘটনা নয় এবং এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সারাদেশেই এই চিত্র আমরা নিয়মিত বিরতিতে দেখছি। কিন্তু ভারতের বর্তমান সরকার হিন্দু ধর্মের প্রতি স্পর্শকাতর হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়েনি। বিজেপির রাজনীতিবিদরা ভারতের অভ্যন্তরে রাজনীতির স্বার্থে মুখে যাই বলুক না কেন, বাংলাদেশকে এমন কোনো হুমকি বা চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। (গণতন্ত্রের বাহক, সভ্য বিশ্বের ধারক আমেরিকার সঙ্গে মেক্সিকোর সীমান্ত। মেক্সিকোর কাছে শুনে দেখুন চাপ কী জিনিস!)
পক্ষান্তরে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট সংগঠনে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে গত বছর চীন হঠাৎ করেই হুমকী দিল, কোয়াডে যোগদান করলে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! অথচ কোয়াডে বাংলাদেশ যোগ দিতে পারে এমন কোনো সম্ভাবনা বা প্রস্তাবের কথা কখনো শোনা যায়নি। চীন তার আসল চেহারা বের করে ফেলল অনুমানের উপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশ স্বাধীন, স্বার্বভৌম দেশ। কার সঙ্গে যোগ দেবে না দেবে তার পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া অধিকার আছে- নাকি নাই? অনুমান করতে কোনোই কষ্ট হয় না, চীনের ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশে যত বৃদ্ধি পাবে, চীনের হুমকী-ধমকিও ততই গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে।
কে এই চীন? ১৯৭১ সালে চীন কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে রাজনৈতিক বিরোধিতা করে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হয় নাই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী নক্সালিদের উস্কে দিয়ে স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে চীন বিনামূল্যে পাকিস্তানকে ২২৫টি টি-৪৯ ট্যাঙ্ক, ১ স্কোয়াড্রম বোম্বারস, ৪ স্কোয়াড্রন মিগ-১৯ এবং নদীমাতৃক বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে যাতে পাকিস্তান সৈন্যরা পৌঁছতে পারে সে জন্য কয়েক শ’ স্পিডবোট ও নৌকা সরবরাহ করে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে চীন তার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে সমর্থন দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন এক লজ্জাজনক ভূমিকা পালন করেছে। সারা পৃথিবী দেখেছে যে ভারত তার সম্প্রসারণ নীতি বাস্তবায়নে কলকাঠি নেড়েছে। ভারতের সম্প্রসারণ নীতিকে অনেক বছর ধরেই সোভিয়েত ইউনিয়ন প্ররোচনা দিয়ে আসছে।’ যুদ্ধ শেষে চৌ এন লাই বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের পৃথক হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো উপমহাদেশে এক গোলোযোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া, যা ভারতকে ভবিষ্যতে পরাজিত করবে।’
চীনের বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে এতটাই অনীহা ছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ৫মাস পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সুতরাং এ সব কিছু বিবেচনায় আমরা বলতে বাধ্য হই, চীন এলো আর সব মূল্যবোধ ভুলে, সব হিসাব-নিকাশের খাতা বন্ধ করে ভালো কথার উপর স্বাক্ষর করে দিলাম তা যেন না হয়!
৫ ও ৬ আগস্ট, ২০২২, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে পত্রপত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে, চীন বাংলাদেশকে ৯৯ শতাংশ পণ্য বিনা শুল্কে রপ্তানির সুবিধা দিয়েছে। আই ওয়াশ! আগেই চীন বাংলাদেশকে ৯৭ ভাগ রপ্তানির সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৪ শতাংশ আসে চীনের থেকে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করেছে মাত্র ৮৩১ মিলিয়ন ডলার সমমানের পণ্য। পক্ষান্তরে চীন বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে ১৩ হাজার ৬ শত ৩০ মিলিয়ন ডলার সমমানের পণ্য। এটি শুধু অফিসিয়াল হিসাব। সুতরাং বাংলাদেশের পণ্যের চীনে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা কতটা এদেশের জন্য ‘সুবিধা’ এবং কতটা আই ওয়াশ তা বিবেচনায় নিয়ে দেখতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক।
এইচআর/জেআইএম