গৃহহীনদের গৃহদান: ‘শেখ হাসিনা মডেলের’ অন্যতম উপাদান
গত ২১ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ ইটের ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জমির মালিকানা ও ঘর হস্তান্তর করেন। সেই অনুষ্ঠানে কয়েকজন মানুষের বক্তব্য আমাকে দারুণ ভাবে মোহিত করেছে। তারা বলেছেন যে, তারা কখনো কল্পনাও করেননি যে তাদের নিজেদের একটি জমির ওপরে কুঁড়েঘর থাকতে পারে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের জমির মালিকানাসহ পাকা ঘর উপহার হিসেবে দিয়ে তাদের নতুন ভাবে বাঁচার পথ দেখিয়েছেন। তাই তাদের অনেকেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সময় অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমিহীনদের মাঝে ঘর দিয়ে চলেছেন।
‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জন মানুষ নিজের ঠিকানা পেয়েছে। এই বিপুল সংখ্যার মানুষের মধ্যে জমির মালিকানাসহ পাকা ঘর প্রদানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দরিদ্রবান্ধব নীতির প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। কোনো দেশের সরকারপ্রধানের যদি দূরদর্শিতা না থাকে তাহলে সে দেশ কখনই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। স্বাধীনতার পরে ২১ বছর সামরিক শাসনের ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির গতি শ্লথ ছিল। পরে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও ক্ষমতার ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন অগ্রগতি হয়নি। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখার পর থেকে দেশের অগ্রগতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য বিস্ময় হয়ে উঠেছে।
দেশে শুধু পদ্মা সেতু কিংবা মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়নি, দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে বিস্ময়কর ভাবে। একটি দেশের উন্নয়ন তখনই টেকসই হয় যখন সে উন্নয়ন শুরু হয় স্থানীয় পর্যায় থেকে। স্থানীয় পর্যায়ের ছিন্নমূল মানুষ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পর্যন্ত সবার উন্নয়ন হলে সে উন্নয়ন টেকসই হবে। বানভাসি, ভূমিহীন, নদীভাঙনের শিকার জনগোষ্ঠী বা অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের অভিজাত শ্রেণির মানুষের মতো সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর মানুষের জমি কিনে বাড়ি তৈরির সক্ষমতা নেই।
আর এখানেই শেখ হাসিনার চিন্তা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে আলাদা। শেখ হাসিনা একদিকে যেমন দেশে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, তেমনিভাবে দেশের ছিন্নমূল মানুষের জন্য বাসস্থান প্রদানের চিন্তা করেছেন। দেশব্যাপী বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে ভূমিসহ বাড়ি প্রদানের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। যারা কখনো কল্পনাও করেননি যে তাদের একটি কুঁড়েঘর থাকতে পারে, তারাই আজ জমির মালিকানাসহ ইটের বাড়ি পাচ্ছেন। এটি সত্যি আনন্দের একটি বিষয়। এই মানুষগুলো যেভাবে শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, তাদের সেই ভালোবাসা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের উন্নয়নে অধিক পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করবে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এর থেকে প্রমাণ হয় যে জনগণের প্রতি রয়েছে তার অকৃত্রিম ভালোবাসা।
বর্তমান সরকার সফলতার সাথে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কাজ করে চলেছে। এমডিজির মতো এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতি সন্তোষজনক। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ভূমিহীনদের বাড়ি প্রদান সরকারের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করবে। কারণ এ বিষয়টি এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, এটি এসডিজির লক্ষ্য-৫ (জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারীদের ক্ষমতায়ন), লক্ষ্য-১১ (অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপদ অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর জনবসতি গড়ে তোলা এবং লক্ষ্য-১৬ (টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন, সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সব স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিতাপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ) এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। দরিদ্র ভূমিহীন জনগণকে জমির মালিকানাসহ ঘর প্রদানের মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত হবে বিধায় বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় সবসময়ই বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য চেষ্টা করে গেছেন। জীবনের অধিকাংশ সময় কারান্তরীণ থেকেও পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন। তাঁরই নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে তিনি সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকের দল তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। শেখ হাসিনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু যেমন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, তেমনিভাবে শেখ হাসিনাও এই দরিদ্র সহায়-সম্বলহীন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে চলেছেন।
দরিদ্রদের নিয়ে তিনি যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। কারণ এ প্রকল্পের মাধ্যমে একেবারে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে জমির মালিকানাসহ পাকা বাড়ি প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের এইসব উদ্যোগ ‘শেখ হাসিনা মডেল’ নামে ইতোমধ্যে পৃথিবীতে স্বীকৃত হয়েছে। তাঁর আমলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার হার ব্যাপক ভাবে কমেছে বিধায় দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামী দিনে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানরা দরিদ্রদের জীবনের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা মডেলের বিভিন্ন উপাদান অনুসরণ করবেন- একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।
শেখ হাসিনা একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, তেমনিভাবে সমাজে অসমতা এবং বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করে চলেছেন। আমাদের সমাজে উঁচু এবং নিচু স্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য ছিল। সেই বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য গত ১৩ বছরের ওপর সময় ধরে তিনি নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র মানুষদের সহায়তা প্রদান করছেন, ঠিক তেমনিভাবে বাড়ি প্রদানের মাধ্যমে তাদের সম্মানের সাথে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। আবার একইভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন সুলভ মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে পারে সেজন্য ওএমএস’র মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করছে সরকার। সরকারের এসব কার্যক্রম দারিদ্র্য দূরীকরণে শেখ হাসিনা মডেলের অন্তর্ভুক্ত।
দেশে একটি গোষ্ঠী যতই বিরোধিতা করুক না কেন, সাধারণ জনগণের কাছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার ভালোবাসা মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। যারা মিথ্যাচার এবং প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে তাদের সেই মিথ্যাচার এবং প্রোপাগান্ডা মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
গত সাড়ে ১৩ বছরে শেখ হাসিনা যে বিষয়টি প্রমাণ করেছেন সেটি হচ্ছে রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্দেশ্য যদি সৎ থাকে এবং তিনি যদি দূরদর্শী হন, তাহলে দেশের উন্নয়ন অবশ্যই হবে। তিনি যেমন পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করেছেন, তেমনিভাবে দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য গৃহহীনদের ঘর প্রদান করছেন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছেন। এ কারণেই দারিদ্র্য দূরীকরণে শেখ হাসিনা মডেল প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি যা করেছেন তার সবই জনগণের উন্নয়নের জন্য।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর।
এইচআর/ফারুক/এএসএম