ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হতে পারে

ফুরকানুল আলম | প্রকাশিত: ০২:১২ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২২

গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব মস্কোর ওপর বৃষ্টির মতো নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করে। একের পর এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয় রাশিয়া ছাড়তে। যাতে দেশটির অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটের পড়ার শঙ্কার কথা ফলাও করে প্রচার করে আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু তাতে টলেননি ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে রাশিয়ার অবস্থানও বদলায়নি।

ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে রাশিয়ার ওপর প্রায় ১১ হাজার নিষেধাজ্ঞার রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে সুইফট পেমেন্ট ক্লিয়ারিং নেটওয়ার্ক থেকে বেশ কয়েকটি বড় রাশিয়ান ব্যাংককে অপসারণ, বিভিন্ন দেশে রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত, রাশিয়ান তেল আমদানি সীমাবদ্ধ; এবং উচ্চ প্রযুক্তির উপাদান ও মাইক্রোচিপের পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া।

এত ব্যাপক ও কঠিন নিষেধাজ্ঞায় মুখ থুবড়ে পড়ার কথা ছিল রুশ অর্থনীতির। কিন্তু দেখা মিলছে উল্টো চিত্র। ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল। বিনিময় মাধ্যম হিসাবে দ্রুত বাড়ছে এর চাহিদা। কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করলো দেশটি? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পশ্চিমা তাত্ত্বিকরা। তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞাগুলো তাৎক্ষণিক কিছুটা ক্ষতি করলেও তা কাটিয়ে উঠছে মস্কো।

মূলত ২০১৪ সাল থেকেই এ অবস্থার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছিল দেশটি। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর পূর্ব ইউক্রেনে একটি "হাইব্রিড যুদ্ধ" শুরু হয়। সেসময়ের নিষেধাজ্ঞাগুলো সয়ে আমদানি নির্ভরতামুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে দেশটি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত খাদ্যের প্রায় অর্ধেক আমদানি করেতো রাশিয়া। এখন প্রধানতম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটি।

বিশ্বব্যাপী শস্য, গমের অন্যতম রপ্তানিকারক তারা। শুধু খাদ্য পণ্যই নয়, এক সময় বিপুল পরিমাণ আমদানি করা জিনিসপত্র এখন আর আমদানি করতে হয় না রাশিয়াকে। যা তাকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করেছে। তাই বলা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে অনাহারে থাকবে না রুশরা। দুর্ভিক্ষও হবে না। যদিও খাদ্য ও গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর পুতিন সরকারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও, দামবৃদ্ধি আটকানো যায়নি। খাদ্য শস্যসহ শাক-সবজি নিজেরা চাষ করায় এগুলোর বাড়তি দামে রাশিয়া গ্রামের মানুষ তেমন সমস্যায় পড়েনি। কিন্তু বাড়তি দামে অন্যান্য পণ্য তাদেরও কিনতে হচ্ছে।

বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রায় বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ ধরে রেখেছে রাশিয়া। একইসাথে অন্য দেশগুলোকে রুবলে পণ্যের মূল্য শোধে বাধ্য করেছে তারা। চীনের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রেখে জ্বালানির একটি বড় অংশ বিক্রি করছে বেইজিংয়ের কাছে। বিনিময়ে খুচরা পণ্যের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশটি মস্কোকে পণ্য দিয়ে সহায়তা করছে। যাতে রেফ্রিজারেটর, গাড়ি, স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না মস্কোকে।

রাশিয়ার ভেতরে বিক্ষোভ-বিপ্লবের যে স্বপ্ন বুনেছিলো পশ্চিমারা, সেটিও অধরা। বলতে গেলে বুমেরাং ইফেক্ট হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুতিনের জনপ্রিয়তায় ধসের যে ভবিষ্যৎদ্বাণী করা হয়েছিল, সেটি কর্পূরের মতো উড়ে গেছে। রাশিয়া-ভিত্তিক স্বাধীন জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান, লেভাদা সেন্টারের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে উদ্বিগ্ন বেশিরভাগ রুশই মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ছাড় দেয়ার পরিবর্তে বর্তমান নীতিগুলি চালিয়ে যাওয়া উচিত রাশিয়ার।

এছাড়া, ইউক্রেনে হামলাকে সমর্থন করেন বেশিরভাগ রুশ নাগরিক। তবে, স্বৈরাচারী শাসনে এমন তথ্যের যথার্থতা প্রশ্ন আছে। কারণ, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে অনেকেই সঠিক নাও দিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করেন কিছু তাত্ত্বিক। তারা বলছেন, রাশিয়ায় একটি ডি ফ্যাক্টো মার্শাল ল চালু রয়েছে। যুদ্ধের সমালোচনা করলে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয় আছে। যাতে ঠাঁই হতে পারে কারাগারে।

বিশ্বের গমের চাহিদার ২৫ শতাংশ পূরণ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। আশার কথা হলো, কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তি করেছে দেশদুটি। যার মেয়াদ ধরা হয়েছে ৪ মাস বা ১২০ দিন। চুক্তির পরদিনই ওডেসা বন্দরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মাঝে ক্রেমলিনের দাবি, তারা যুদ্ধ জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, শস্যের ভাণ্ডার ও পরিবাহী জাহাজে নয়।

ইউক্রেনও বলছে, বন্দরে শস্যের গুদামসহ পণ্যবাহী কোনো জাহাজে হামলা হয়নি। বন্দরের সামান্য যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি গুরুতর কিছু নয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খাদ্য শস্য রপ্তানিতে বাধা দেবে না তারা। তবে এসব জাহাজে যেন অস্ত্র আনতে না পারে সেটি তল্লাশি করা হবে। রাশিয়ার শর্ত যাই হোক, এখন খাদ্যশস্যের আটকে থাকা চালানগুলো বড় বেশি দরকার বিশ্ববাসীর।

কয়েকদিন আগে রক্ষণাবেক্ষণ ইস্যুতে ১০ দিন ইউরোপে গ্যাস বন্ধ রেখেছিল, রাশিয়া। তাতেই কাহিল অবস্থা হয়ে দেশগুলোর। শঙ্কা জাগে গ্যাস সরবরাহ আর না করার। যাতে ৭টি রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। অবস্থা এমন যেন, ভিক্ষা চাই না, কুত্তা সামলা। এখন আবার ২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ কমানোর কথা বলছে ক্রেমলিন।

তাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার কারণে কানাডায় বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আটকে আছে। শীত মৌসুমের আগে প্রয়োজনীয় গ্যাস মজুত করতে না পারলে, ভয়াবহ বিপদে পড়বে ইউরোপবাসী। যাতে এতদিনের হুংকারের এখন অনেকটাই ক্ষীণ স্বরে অভিযোগ, জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। অবস্থা এমন যেন 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি'। পুতিনের যে অনমনীয় মনোভাব কেঁদেও বাঁচার উপায় হয়তো নেই ইইউর।

লেখক: নিউজ এডিটর, চ্যানেল 24।

এইচআর/জেআইএম