ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাংলাদেশে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি: অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল | প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ১৩ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশে হেপাটোলজির যাত্রা শুরু ১৯৮৯ সালে তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চে দেশের প্রথম হেপাটোলজি বিভাগটি প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে। ভারতের চন্ডিগড়ের ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের হেপাটোলজি বিভাগটির পর এটিই এই উপমহাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম হেপাটোলজি বিভাগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভাগটি একটি স্বতন্ত্র স্পেশিয়ালটি হিসেবে বাংলাদেশে হেপাটোলজির বিকাশে ভূমিকা রেখে আসছে।

হেপাটোলজি বিষয়ে উপমহাদেশের প্রথম পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্স, ডক্টর অব মেডিসিন ইন হেপাটোলজি চালু হয়েছিল এই বিভাগে ১৯৯৫ সালে। এখান থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে বিশেষজ্ঞ হেপাটোলজিস্টরা বর্তমানে দেশের একটি জাতীয় ইনস্টিটিউট, ২০টি সরকারি এবং তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত। পাশাপাশি সরকারি চারটি এবং বেসরকারি আর পাঁটি বিশেষায়িত হাসপাতালেও তারা তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের বাইরে ঘরের পাশে নেপালে এবং সুদূর ক্যানাডায়ও তারা তাদের সেবা প্রদান করছেন।

বাংলাদেশের হেপাটোলজিস্টরা এদেশে প্রথমবারের মতো অনেক কিছু শুরুর জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। আমাদের দুজন লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর এবং অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ন্যাসভ্যাক নামক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের একটি নতুন ইমিউনথেরাপির সহ-উদ্ভাবক। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম ওষুধ হিসেবে ওষুধটির রেসিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির অনুমোদন পেয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ভিত্তিতে ওষুধটি এরই মধ্যে কিউবা, বেলারুশ, নিকারাগুয়া, হুন্ডুরাস ও অ্যাঙ্গোলায় অনুমোদন পেয়েছে এবং জাপানে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের উদ্যোগে এই ওষুধটি একটি বড় ট্রায়াল বর্তমানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায় ন্যাসভ্যাকই একমাত্র ওষুধ, যা ব্যবহারের পাঁচ বছর পরও বেশিরভাগ রোগীরই লিভারে কোনো ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইরাল হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে ন্যাসভ্যাককে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ইমিউনথেরাপি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক চলাকালীন সময় এদেশে লিভার বিশেষজ্ঞরা ন্যাসভ্যাককে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় সফলভাবে রিপারপাজ করেছেন। ন্যাসভ্যাক সহ-উদ্ভাবনের জন্য ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর ও অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল কিউবান একাডেমিক অব সাইন্সেস থেকে ২০১৯ সালে দেশটির সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক সন্মাননা ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’ অর্জন করেন আর বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইসেন্স ২০১৯-এ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে ‘বাস-গোল্ড মেডেল’ পদকে ভূষিত করেন।

মুজিববর্ষে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগে মুজিববর্ষ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে লিভার ফেইলিওর রোগীদের চিকিৎসায় ‘মুজিব প্রটোকল’ বা প্লাজমা এক্সচেঞ্জ চালু করা হয়।

তাছাড়া বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞরা লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় এদেশে প্রথমবারের মতো অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু করেন। পাশাপাশি একিউট এবং একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিওরের চিকিৎসায় লিভার ডায়ালাইসিস এবং লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য হেপাটিক ভেনাস প্রেশার গ্রেডিয়েন্ট মেজারমেন্ট প্রথমবারের মতো শুরু করার কৃতিত্বও তাদেরই। এদেশে লিভার ক্যানসারের রোগীদের জন্য বিশ্বের সর্বাধুনিক লোকোরিজিওনাল থেরাপি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন এবং ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন আর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কনসেপ্ট ইমিউনথেরাপি প্রবর্তনের প্রতিকৃতও তারাই।

বাংলাদেশের হেপাটোলজিস্টরা হেপাটোলজি বিষয়ে কমপক্ষে ছয়টি টেক্সট ও রেফারেন্স বই সম্পাদনা করেছেন, যেগুলো এলসেভিয়ার, ম্যাকমিলান ও জেপির মতন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিকেল পাবলিশিং হাউজ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। নানান লিভার রোগী বিষয়ক এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় গাইডলাইনগুলো প্রণয়নেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোএশিয়ান জার্নাল অব হেপাটোগ্র্যাস্ট্রোএন্টারোলজি জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল হেপাাটোলজির মতো লিভার বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোর এডিটোরিয়াল বোর্ডেও তারা সাফল্যের সাথে কাজ করছেন।

লিভার বিশেষজ্ঞদের এসব অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ৭ জুলাই, ২০২১ এ সংক্রান্ত আদেশটি ডিভিশনটির প্রতিষ্ঠাতা ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের হাতে তুলে দেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডিভিশনটি তার প্রতিষ্ঠাকালীন ম্যানডেটটি বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ডিভিশনটিতে মুজিব প্রটোকল, অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন, লিভার ডায়ালাইসিস, হেপাটিক ভেনাস প্রেশার গ্রেডিয়েন্ট মেজারমেন্ট, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন এবং ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন শুরু হয়েছে। শিগগির ডিভিশনটিতে ট্রান্সপ্লান্ট হেপাটোলজি বিষয়ে ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু হতে যাচ্ছে।

পাশাপাশি ডিভিশনটি ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লিভার রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো প্রবর্তনেও কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ডিভিশনটির সহযোগিতায় সিলেটের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন ও ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন শুরু করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটি জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর এবং তাঁর সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ও নির্দেশ বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে অঙ্গীকারবন্ধ।

(৭ জুলাই, ২০২২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী)।

লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন