হলি আর্টিসান ট্র্যাজেডি: শোক হোক শক্তি
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার শোকাবহ দিন আজ। মর্মান্তিক ওই হামলার পর জঙ্গিবাদের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। দেশব্যাপী জঙ্গিবাদবিরোধী একটি বাতাবরণও তৈরি হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে বেরিয়ে আসে একের পর এক জঙ্গি আস্তানা।
ধরা পড়ে অনেক বিপথগামী। এ অবস্থায় জঙ্গিবাদ দমনে অনেকটা সাফল্য আসে। কিন্তু এখনো সমস্যা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। ফলে জঙ্গি দমনে স্বস্তি এলেও শঙ্কা কাটেনি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত করাই হোক হলি আর্টিসান হামলার আজকের দিনের অঙ্গীকার।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে নয়টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত রেস্তোরায় ৮ থেকে ১০ জন সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে। পরদিন শনিবার সকালে রেস্তোরাঁয় জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত এবং মোট ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন নিহত হন।
ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলার পর নগরীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি থেকে হলি আর্টিসান বেকারি সরিয়ে নিয়ে বসবাস উপযোগী করলেও সেখানে বাড়ির মালিক থাকেন না। এই জঘন্য হামলার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। জঙ্গি দমনে জোরদার অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে জঙ্গিদের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে হবে। দেশকে জঙ্গিমুক্ত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।
জঙ্গিবাদের সমস্যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। বৈশ্বিক এই সমস্যা নিরসনে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে সরকার। এ কারণে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সাফল্য দেখাচ্ছে। কিন্তু পুরোপুরি জঙ্গি নিপাত করা যায়নি। জঙ্গিবাদের পেছনে রয়েছে দেশি বিদেশি নানাচক্রও। জঙ্গিদের অর্থের উৎসব বন্ধ করা জরুরি। বন্ধ করতে হবে অস্ত্রের সরবরাহও।
জঙ্গিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন আরো জোরদার করাটাও এখন সময়ের দাবি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে এটা ঠিক কিন্তু জঙ্গিবাদ শুধু আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয়। তাই প্রয়োজন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ। অভিযানে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে। সক্ষমতা বাড়াতে হবে আরো।
দেখা যাচ্ছে গোটা পরিবারই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে। নারী ও শিশুরাও জঙ্গিবাদের অভিশাপে জড়িয়ে যাচ্ছে পরিবারের কারণে। ধনাঢ্য পরিবারের পাশাপাশি দরিদ্র ও অসহায়দের ভেড়ানো হচ্ছে জঙ্গিবাদে। এ ব্যাপারে গভীর চিন্তাভাবনা করতে হবে। জঙ্গিতৎপরতা নজরে এলেই সেটি বন্ধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেও জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব। আশার কথা হচ্ছে হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। হাইকোর্টে দ্রুত এর শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
বুধবার (২৯ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসানে ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দেন আদালত। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে খালাস দেওয়া হয়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন দুই পুলিশ সদস্যও। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঘোষিত রায়ে মামলার আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন। (সূত্র: জাগো নিউজ, ২৯ জুন ২০২২)
সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হল ২৫ জুন। বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে। জঙ্গিবাদ সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াক এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। কারণ জঙ্গিবাদ উন্নয়ন ও প্রগতির অন্তরায়। এর অভিশাপ থেকে কেউ মুক্ত নয়। তাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর, জাগো নিউজ।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস