আওয়ামী লীগ: অর্জন আর অস্তিত্বে
বিশ্বে সময়ের ডাকে বা চাহিদার প্রয়োজনে অনেক রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটেছে। তবে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর জাতির প্রয়োজনে যেটি করেছে, সেটি সারা বিশ্বে এক অনন্য নজির। ‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-স্বাধীনতা’-এই তিনটি শব্দ অমলিন, অবিনশ্বর, অবিনাশী। ইতিহাসে এই তিনটি শব্দ একই সূত্রে গাঁথা।
বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনও বিরোধী দলে, কখনও সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম আওয়ামী লীগ।
সব পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের হার না মানা নেতৃত্ব। এই দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসবিদিত। স্বভাবতই বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের নির্মাতা আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সময় প্রাপ্তির খাতায় জুন মাসের যোগসূত্র রয়েছে। এবার সেই জুনেই আরেক ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। যে ইতিহাসে আবেগ আর ভালোবাসার মিশ্রণ ঘটেছে।
সেটি হচ্ছে এই জুন মাসেই আর ক’দিন পরই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুটি শুধু যে একটি সেতু তা নয়, এই স্থাপনায় মিশে আছে আমাদের আত্মমর্যাদা। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেখিয়ে দিয়েছেন বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না।
জুন মাসেই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সব ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
যার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরে ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
স্বাধীনতার পর দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম ধারণ করে। কোনো সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের পৃষ্ঠপোষকতায় বা জমিদারদের-ভূস্বামীদের হাতে নয় কিংবা সামরিক জান্তার পৃষ্ঠপোষকতায় বা ক্ষমতার মধুচাকে নয়, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বন্দুকের নলেও নয়; আওয়ামী লীগের জন্ম বাংলার মাটিতে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের বিকাশ ও প্রসার বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিপুত্র শেখ মুজিবের হাতে। বাংলা ও বাঙালির নাড়ির বন্ধন আওয়ামী লীগ।
যুগে যুগে এ সংগঠনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, মহিউদ্দিন আহমেদ (ভারপ্রাপ্ত), সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন, আবদুল মালেক উকিল, বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা (১৭ মে ১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান)।
বাংলার মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। পুরান ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে দলটির জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করে স্বাধীনতার লক্ষ্যে বাঙালির মনন তৈরি করেছিলেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের হয়েই সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অসহযোগ আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতা ঘোষণা, স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। সে কারণেই আজ বাংলাদেশের সব অর্জনের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আর এখন তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেটাও আওয়ামী লীগের হাত ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে।
উন্নয়নের এই মহাসড়কে রয়েছে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী মাতারবাড়ি, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্নফুলী টানেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ।
প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, যা বদলে দিয়েছে দেশের অর্থনীতিকে। এগুলো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার হার না মানা মানসিকতা এবং ম্যাজিক্যাল নেতৃত্বের কারণে।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে যখন বিশ্বব্যাংক সরে যায়, তখন নিজস্ব অর্থায়নে সেই সেতু করে তিনি প্রমাণ করেছেন বাঙালি জাতি অদম্য। কেউ কি ভাবতে পেরেছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হবে? আজ পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচলের অপেক্ষা মাত্র। জুনে যান চলবে পদ্মার বুকে। একজন শেখ হাসিনা আছেন বলেই আজ বাঙালি বড় স্বপ্ন দেখে, সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়।
আজ বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। একটি ঘরও আলোহীন নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে এখন মর্যাদার চোখে দেখা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা ও করোনা মহামারি যেভাবে সামাল দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হয়েছে প্রশংসিত। আজ বিশ্বে তিনি মানবতার নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন প্রায় এক যুগ। এই সময়ে বাংলাদেশকে আজ যে পর্যায়ে তিনি তুলে এনেছেন এই পথ সহজ ছিল না। কণ্টাকাকীর্ণ সেই পথে তিনি দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্ব নিয়ে এগিয়ে গেছেন এবং সফল হয়েছেন। তার আমলে যে বাংলাদেশ বিশ্ব দেখছে, অনেকে সেটা হয়তো ভাবতেও পারেননি।
২০৪১ সালে যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাত ধরে তাও বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ। এই অর্জনও আসবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে। কারণ বাঙালির অর্জন, অস্তিত্বে আওয়ামী লীগ একই সূত্রে গাঁথা।
লেখক: উপ-তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
এইচআর/ফারুক/এএসএম