ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণই হোক লক্ষ্য

মেজর অব. আহমেদ ফেরদৌস | প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ০৮ মে ২০২২

ষড়যন্ত্রকারীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটা বিশেষ দিক হলো, ওরা আপনার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস হারানো কাপুরুষ, অমানুষ, ও সুবিধাবাদী শ্রেণির জাত। এরা সব সরকারের আমলেই আশীর্বাদপুষ্ট লোক হবার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকার অভিনয়ে পটু। অনেকে বলেন এরা মিরপুরের প্রয়াত খালেক এমপি সাহেবের আদর্শের অনুসারী।

একদা এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, আচ্ছা এমপি সাহেব, আপনি তো জা-পা এবং বিএনপি, এই দুই আমলেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর রহস্য কি মাননীয় এমপি মহোদয়?

সেই এমপি সাহেব উত্তরে বলেন, আমিতো ভাই সরকারি এমপি। কীসের দল? যখন যে দল সরকারে থাকবে, তখন সেটাই আমার দল। বিএনপির প্রয়াত এমপি ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেবের ইতিহাস আরও উজ্জ্বল। তিনি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির তথা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা প্রধান তিন তিনটি দলের সর্বোচ্চ পদে আসীন থেকেছেন। পল্টিবাজিতে তার সমকক্ষ এ মুহূর্তে অন্য কারো নাম মনে না আসার জন্য ক্ষমা চাইলাম অগ্রিম। মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে উদাহরণ টানা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ হলেও টানতে বাধ্য হলাম জাতীয় স্বার্থে, কারণ সবার উপরে দেশ- এই মন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই।

কটাক্ষ না করে বলছি, এ ধরনের মানুষের যোগ্যতা নিয়ে আমার আপনার নেই বিন্দুমাত্র সন্দেহ। সন্দেহটা কেবলই একটা জায়গায় ঘুরপাক খায়। তা হলো- এরা কি তবে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের বংশধর? এদের জন্যই কি সমগ্র উপমহাদেশকে বরণ করতে হয়েছে দু'শো বছরের পরাধীনতার কালো টিপ?

আজও এসব মীরজাফর আমার আপনার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। এরা আমার আপনার দেশের ও জাতির এক নম্বর শত্রু। এদের হতে সাবধান। সবচেয়ে এলার্মিং বিষয়টি হলো, এরা যুগ যুগ ধরে আপনার সবচেয়ে নিকটতম বন্ধুরুপী শয়তান হিসাবে আপনাকে একটা স্বর্গীয় ইলিউশন তথা নেশার ঘোরে আচ্ছন্ন রেখে এদের টার্গেট হাসিল করতে চরম একতাবদ্ধ। এরা নিজেদের মধ্যে একতাবদ্ধ। এরা মাইনরিটি বলেই এরা একে অন্যকে সেভ করে চলে। নিজেদের অস্তিত্ব অটুট রাখায় এদের বন্ধন ও একতাবদ্ধ শক্তি প্রয়োগে এরা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের সু-উদাহরণ।

মীরজাফর বলুন আর খন্দকার মোশতাক বলুন, সবই কিন্তু এক রসুনেরই কোয়া। যত শীঘ্রই এসব ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা যাবে, ততই মঙ্গলকর নিজের জন্য, তথা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য।

নিজে বাঁচুন। অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করুন। সমষ্টিগত ভালো থাকায় দেশ বলুন দশ বলুন, সবারই অবস্থা উইন উইন হওয়াটাই কাম্য। দেশের স্বার্থে এরা একতাবদ্ধ হবার ক্ষেত্রে আগুনে ঘি এর সমতুল্য অথবা এক বালতি দুধে এরা এক ফোটা চুনার কু-উদাহরণ।

এদের লয়ালটি বদলে যায় কিছু উচ্ছিষ্ট হাড্ডিগুড্ডি পেলেই। কুকুর খুব ঘেউ ঘেউ করলে আপনি বিয়ে বাড়ির ঝুটা মাংসগুলো ছুঁড়ে দেন। দেখবেন এসব নিমকহারাম ও বেঈমানগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র হায়েনার মতন। ডিসকভারি বা এনিমেল প্ল্যানেট চ্যানেল দেখে থাকলে এদের চেনা উচিৎ আমার আপনার।

আগামী ২০২৩ সনটি বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। জাতীয় নির্বাচনের বছর এটা। ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে বলা হয় ইউনিপোলার শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। রাশিয়া দাবি করে কোল্ড ওয়ার যুদ্ধ অবসানের পর যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধ। কোল্ড ওয়ারের পরে অতি নীরবে চীন রাষ্ট্রের সুপার অর্থনৈতিক উত্থানে যুক্তরাষ্ট্র বেকায়দায় পড়ে যায় যা সমসাময়িক কিছু অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে চীন যুক্তরাষ্ট্রের শীতল যুদ্ধের দৃশ্য অবলোকন করেছে বিশ্ববাসী।

এবছর সেই চীন যখন রাশিয়ার সাথে আনকন্ডিশনাল মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেব্রুয়ারিতে, তখনি বোদ্ধারা আন্দাজ করেছিলো পুতিন প্রশাসন এবার কিছু একটা করবে। হয়েছেও তাই। বিশ্ব এখন বাধ্য দুটি দলে বিভক্ত হতে। এই বিভক্তি আমাদের ঠেলে দিচ্ছে যুদ্ধে যেখানে ক্রমাগত নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের প্রাণের বলিদান হচ্ছে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি মারাত্মক উদাহরণ।

এই চীন-রাশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোভুক্ত দেশের যুদ্ধে মানবতা পরাজিত ও ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিদিন। ওয়ার ক্রিমিনালদের বিচারের আশা না করাই উত্তম, কারণ যারা যুদ্ধে লিপ্ত, প্রত্যেকেরই আছে পারমাণবিক বোমা। ব্যালেন্স অফ পাওয়ারের কারণেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি আজ অব্দি, তবে হতে কতক্ষণ? পারমাণবিক বোমার ব্যবহার বিশ্ববাসী দেখেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে হিরোশিমা নাগাসাকিতে। এক বোমায় জাপানের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। বাধ্য হয় জাপান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বশ্যতা স্বীকারে। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনে আবিস্কৃত পারমাণবিক এবং রাসায়নিক বোমা এতো বেশি মারাত্মক যে, এটির প্রয়োগ হলে পঙ্গুত্ব বরণ করবে বিশ্ববাসী বিধায় যুদ্ধাপরাধীর বিচারের আশা স্রেফ বোকার স্বর্গে বাস করা।

এই যুদ্ধে আমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক লড়াইয়ে আমরা মনে করি পৃথিবী উপহার পাবে আরেকটি সুপার পাওয়ার। বলুন তো সেটি কোন দেশ? সেটি আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত। সীমান্তে কাঁটাতারে ফেলানির লাশ ঝুলে থাকার দৃশ্যটি তাই এতো বেশি সিম্বলিক। ফেলানির গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ আসলে একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি বলে অনেক বিচক্ষণ বোদ্ধারা মত প্রকাশ করেন।

আমাদের প্রতিবেশি ভারত সুপার পাওয়ার যুদ্ধে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষে নিকট ভবিষ্যতে যদি চীন-ভারতের আনকন্ডিশনাল মৈত্রী ঘটে, তবে কি আপনারা আশ্চর্য হবেন? আমি হবো না কিন্তু। আমার কেন জানি মনে হয় এই দুই পরাশক্তির যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান হবে ভারত।

পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণই হোক আমার আপনার চেতনা। তবে হ্যাঁ, ষড়যন্ত্রকারী এসব মানুষরুপী শয়তানগুলো রাষ্ট্রকে এক হতে দেয়নি আগেও, বর্তমানেও মরিয়া কিভাবে বিভেদ সৃষ্টি করা যায় এবং ভবিষ্যতেও যে করবে না, তার নেই কোন গ্যারান্টি।

তাই বাংলাদেশের আগামীর নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর রানওয়ের জন্য চলুন সার্জারি করে ফেলি ক্যান্সাররুপী এসব গুপ্ত ঘাতকগুলোকে।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

এইচআর/এমএস