সাদকাতুল ফিতর আদায় করে নিই
আজ পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশকের অষ্টম দিনের রোজা রাখার তৌফিক আমরা পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় সামনেই আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো, ইনশাল্লাহ।
ঈদুল ফিতর উদযাপনের পূর্বে আমাদের সবাইকে অবশ্যই ফিতরানা আদায় করতে হবে। আমাদের ফিতরানা যদি এখনই আদায় করি তাহলে তা ঈদের আগেই সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের ক্ষেত্রে সহজতর হবে এবং গরীবদের ঈদ আনন্দে কাজে লাগবে।
কেননা ঈদুল ফিতরের ফিতরানা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব এমনকি ঈদের দিন সূর্য উদয়ের পূর্বে ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্যও ফিতরানা দেয়া ওয়াজিব। এ ফিতরানা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা গরীব রোজাদার যেন ফিতরানার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ফিতরানা দেয়া কারও ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটা আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ। এমনকি যে ব্যক্তিকে ফিতরানার সাহায্য দেয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরানা দেয়া কর্তব্য। সকলের অংশগ্রহণের ফলে সাদকাতুল ফিতরের ফাণ্ডটি একটি সাধারণ ফাণ্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হয় তাদের মনে হীনম্মন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না।
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সামর্থ্যবান সবার ওপরই এটা আবশ্যক।’ (বুখারি) হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা পালনকারীর জন্য সাদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন, যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা ও কাজ পরিশুদ্ধকারী এবং অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে এটা আদায় করবে, তা সাদকাতুল ফিতর হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ঈদের সালাতের পর আদায় করবে তা অপরাপর (নফল) সদকা হিসেবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ) ফিতরানা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরীব ভাইদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করি। যাদেরকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরীব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আমরা সবাই জানি, ইসলামে দান-খয়রাতের এবং গরীব অসহায়দের সাহায্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় দানের গুরুত্ব যে কত বেশি তা পবিত্র কুরআন পাঠেই বুঝা যায়। কারণ এ বিষয়টিকে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন।
যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে মার্জনা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)
এই আয়াতে একটি বিষয় আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করেছেন যে, শুধু সুখে থাকলেই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবো তা কিন্তু নয়, সচ্ছল-অসচ্ছল সব অবস্থাতেই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। সব অবস্থায় যদি আমরা খরচ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভালোবাসবেন।
আল্লাহ তাআলা বারংবার আমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, আমরা যেন তার পথে খরচ করি, কিন্তু দেখা যায় আমরা দুনিয়াবী আজে-বাজে কাজে ঠিকই অর্থ সম্পদ ব্যয় করছি অথচ আল্লাহর রাস্তায় দেয়ার ক্ষেত্রে যেন অনিহা প্রকাশ পায়। এর কারণ হলো শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা যোগায় যে, তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাবে আর তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দান করলে সম্পদ কমে না।’ (মুসলিম) তাই একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে কেউ গরীব হবে না বরং তাকে আল্লাহ অনেক গুণ বৃদ্ধি করে তা ফেরৎ দিবেন।
আমরা যদি আল্লাহর জান্নাত লাভ করতে চাই এবং তার শান্তির ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাই তাহলে আমাদেরকে তার পথে খরচ করতে হবে। গরীব অসহায়দেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের কষ্ট দূর করতে হবে। বিশেষ করে দুই বছর মহামারির করোনার কারণে অনেক খেটে খাওয়া এবং দরিদ্ররা অনেক সমস্যায় রয়েছেন, আমাদের উচিত হবে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। তাদেরকেও ঈদ আনন্দে শামিল করে নেয়া আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
এইচআর/এমএস