ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রমজান ও প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ২৭ এপ্রিল ২০২২

আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পবিত্র মাহে রমজানের নাজাতের দশকের রোজা রাখার সৌভাগ্য দিচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ। রমজান আমাদেরকে প্রতিবেশির সাথে উত্তম আচরণ, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা শুধু রমজানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং বছর জুড়ে তা অব্যাহত রাখার নির্দেশ রয়েছে। আমরা ক’জন এমন আছি যারা রমজান বা অন্য সময় আমাদের প্রতিবেশির খোঁজ রাখি? নিজের পরিবারের জন্য অপ্রয়োজনীয় খরচ করছি ঠিকই কিন্তু আমার প্রতিবেশি যে না খেয়ে রাত্রি যাপন করছে তার খেয়াল রাখার সময় কি আমার আছে?

এইতো দু’দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের একটি সংবাদ পড়ে চোখের অশ্রু ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সংবাদের শিরোনামটি এমন ছিল ‘প্রতিবেশিদের বাড়িতে গিয়ে খাবার চায় শিশু দুটি, তাই শিকলে বেঁধে রাখছেন মা–বাবা।’ জানা যায়, ‘দরিদ্র ওই পরিবারের সদস্যদের অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটে। ক্ষুধার জ্বালায় সুমন ও সিমন বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশিদের বাড়িতে গিয়ে খাবার চায়, কখনোবা গোপনে গাছের ফল ছিঁড়ে নিয়ে আসে। এসব কারণে প্রতিবেশিদের কথা শুনতে হয় তাঁদের মা–বাবাকে। তাই সুমনকে ছয় মাস ধরে এবং সিমনকে ১৫ দিন ধরে ঝুপড়ির উঠানে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন মা–বাবা।’

আহা! বুক ফেটে যায় কান্নায়। অবুঝ শিশুরা ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবেশির বাড়িতে যায় খাবারের সন্ধানে আর তাই মা-বাবা তাদেরকে রাখে শিকলে বেঁধে। ঈদ উপলক্ষ্যে সবাই যেখানে নতুন জামা-কাপড় কেনা নিয়ে ব্যস্ত সেখানে এই শিশুরা কাঁদছে দু’মুঠো খাবারের জন্য। এমনই হয়তো অনেক পরিবার আপনার আমার আশপাশে থেকে থাকবে।

রাসুল (সা.) তো সাধারণ দিনগুলোতে অনেক বেশি দান খয়রাত করতেনই আর রমজানে তিনি ঝড়োগতিতে দান করতেন। ফিতরানা, ফিদিয়া প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এই শিক্ষা তিনি (সা.) কেন দিয়েছেন? এজন্যই যে গরীব অসহাদের কষ্ট যেন আমরা দূর করতে পারি।

আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অনুসারে আমরা নামাজ, রোজা, হজ সবই করছি কিন্তু প্রতিবেশির হক সঠিকভাবে আদায় করছি কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশি না খেয়ে থাকে।

আমাদের এই নামাজ, রোজা, হজ কোন কিছুই কাজে আসবে না যদি আমরা আমাদের প্রতিবেশির কষ্ট দূর না করি আর তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াই। খাবার না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় যারা দিনরাত কষ্ট করে কাটায় সেই কষ্ট কেমন তা যেন একজন রোজাদার সারাদিন না খেয়ে উপলব্ধি করতে পারে এজন্য রোজার শিক্ষা আর রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্যর মাঝে আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি গরীবের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা জাগ্রত করাও উদ্দেশ্য।

আত্মীয় এবং প্রতিবেশির সাথে উত্তম আচরণে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ়করণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা এবং প্রতিবেশিদের সাথে ভাল ব্যবহার সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে শরিক করো না, এবং সদয় ব্যবহার কর পিতা মাতার সাথে, আত্মীয় স্বজন এবং এতিম এবং মিসকিন এবং আত্মীয় প্রতিবেশি এবং অনাত্মীয় প্রতিবেশিগণের সাথে এবং সঙ্গী সহচর এবং পথচারীগণের সাথে এবং তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে, তাদের সাথে। আল্লাহ তাদেরকে আদৌ ভালবাসেন না যারা অহংকারী দাম্ভিক।’ (সুরা নিসা: আয়াত ৩৬)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অনেক ফজিলতও রয়েছে, কেননা, আত্মীয়তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা, তাদের খোঁজখবর নেয়া, তাদের কাছে আসা-যাওয়া করা ইবাদতেরই অংশ। যেমন মহানবী (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেয়া কামনা করে, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।’ (বোখারি)

হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মহানবীকে (সা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তখন তিনি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে কোন কিছু শরিক করো না। নামাজ ভাল করে আদায় কর এবং জাকাত দাও আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখ।’ (বোখারি)

অপর দিকে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সম্পর্কে মহানবীর (সা.) ভয়াবহ সতর্ক বাণীও রয়েছে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বোখারি)

ইসলামে যেসকল অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে আত্মীয় এবং প্রতিবেশির অধিকার সম্পর্কে অধিক মাত্রায় তাগিদ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক প্রতিবেশির সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য ঘোষণা করেছেন আর এ ব্যাপারে হাদিসেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জিব্রাইল এসে আমাকে প্রতিবেশির ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। আমার মনে হল হয়তো তিনি প্রতিবেশিকে সম্পদের ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন।’ (মুসলিম)

ইসলাম ধর্মে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, কাফেরদের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে আর আত্মীয় অমুসলিম হলেও তার সঙ্গে সম্পর্ক অমলিন রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

হজরত আসমা বিনতে বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় আমার আম্মা মুশরিক থাকতে একবার আমার কাছে আগমন করলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার আম্মার সাথে সম্পর্ক রাখবো? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, হ্যা, তুমি স্বীয় মাতার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)

ইসলামের অসংখ্য অনুশাসন মেনে চলা সত্ত্বেও কোন লোক মুমিনের কাফেলার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না, যদি সে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী হয় এবং প্রতিবেশিদের সাথে সদাচারী না হয়। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, কোন মুমিন কোনোভাবেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না এবং সেই সাথে তার প্রতিবেশিরও অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। এ শিক্ষা উপেক্ষা করে কারো পক্ষে পূর্ণ মুমিন হওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের আশেপাশে এমন অনেক প্রতিবেশি পাওয়া যাবে যারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন। আসুন না, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে আত্মীয় ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখার এবং প্রতিবেশির সাথে উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

এইচআর/জেআইএম