ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নাজাতের দশক ও নিজেদের ইবাদত

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০২২

আজ নাজাতের দশকের প্রথম রোজা আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তিনি আমাদেরকে সুস্থতার সাথে রমজানের রোজাগুলোর রাখার সৌভাগ্য দান করছেন।

এই শেষ দশকে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অনেকেই এখন ইতিকাফ করছেন। আল্লাহ তাদের ইতিকাফ গ্রহণ করুন। নাজাতের এই দশকে মুমিন-মুত্তাকিদের ইবাদতে আসবে নব উদ্যম। তারা পূর্বের তুলনায় আরো অনেক বেশি নফল ইবাদত আর দান-খয়রাতে রত হবেন। নাজাতের এ দশকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ দয়াময় প্রভুর দরবারে সকাতর প্রার্থনায় হাত উত্তোলন করবেন এবং ফরিয়াদ জানাবেন- তিনি যেন আমাদের সকলকে ক্ষমা করে জাহান্নামের অগ্নি থেকে নাজাত দান করেন।

উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর রেওয়ায়েতে পবিত্র বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে- 'রমজানের শেষ দশকের আগমন ঘটলে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় মনোবলে নিজেকে সংহত করতেন, রাত্রিসমূহে নিজে জাগরণে থাকতেন এবং গৃহের অধিবাসী অন্যদেরও রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকার প্রেরণা জোগাতেন।'

নাজাতের দশকে দোয়া কবুলিয়তের বিশেষ মুহূর্ত সৃষ্টি হয়। রোজাদার একাগ্রতার সঙ্গে তার প্রভুকে ডাকেন এবং তার সন্তুষ্টি কামনা করেন। হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সৎ কর্মশীলতার দিক দিয়ে আল্লাহর দৃষ্টিতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে মহৎ ও প্রিয় আর কোনো দিন নেই।’ (মুসনাদ আহমদ)

মাহে রমজানের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত বড়ই কল্যাণ ও বরকতমণ্ডিত। সে নিতান্তই দুর্ভাগা যে এসব বরকত ও কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখে আর অন্যান্য দিনের মতই রোজার দিনগুলো অতিবাহিত করে।

পবিত্র এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। তাই এ মাসে পবিত্র কুরআন পাঠ করা, কুরআনের অর্থ বুঝা এবং কুরআনের বিশেষ অংশগুলো মুখস্থ করা অনেক পূণ্যের কাজ। রমজানে কমপক্ষে একবার সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করে শেষ করা উচিত। এখনও যদি কেউ কুরআন পাঠ করে শেষ না করে থাকেন নাজাতের এই দশকে তাদের শেষ করা উচিত। এছাড়া যারা একবার খতম দিয়েছেন তাদের উচিত হবে শেষ দশকে আরেকবার পুরো কুরআন পাঠ করা।

কেননা রমজান এবং পবিত্র কুরআন করিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ‘রমজান সেই মাস যাতে নাযেল করা হয়েছে কুরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ রুগ্ন এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ তোমারে জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না, এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াতে দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)।

পবিত্র রমজান মাসেই মহানবি (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত বাণী মহানবির (সা.) কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবির (সা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এছাড়া মহানবির (সা.) জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কুরআনকে মহানবির (সা.) কাছে দু’বার পাঠ করে শুনান’ (বুখারি)। এ থেকে বুঝা যায়, রমজানের সাথে কুরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কুরআন পাঠ এই সব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে।

এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেন, ‘রমজান ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’ (বায়হাকি)।

যেহেতু আমরা রমজানের রোজাগুলো ঠিকভাবেই রাখছি এবং নফল ইবাদতের চেষ্টা করছি তেমনিভাবে যদি কুরআন পাঠের প্রতি এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগী হই তাহলে এ কুরআনই আমাদের সুপারিশের কারণ হবে। এছাড়া রোজা রেখে কুরআন করিম পাঠ করা, এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করা এবং এর অনুশাসনাদি পালন করার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দর্শনশক্তি সতেজ হয়। সে শয়তানি চিন্তাভাবনা ও প্রভাব হতে নিরাপদ থাকে। অধিকন্তু মানুষ এক অনাবিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং পরম সম্পদ লাভ করে, যা শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়, এটি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

এই শেষ দশকে নিজেদের ইবাদত বন্দেগি ও দান খয়রাত, কুরআন পাঠসহ সব কিছুর মাঝে একটি জোশ সৃষ্টি করতে হবে। সাধারণত একজন মুমিন-মুত্তাকি বান্দা এই শেষ দশকে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি দান খয়রাত করে থাকেন এবং গরীব অসহায়দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন।

নাজাতের দশকে ফরজ ইবাদতের পাশা-পাশি আমরা যদি বেশি বেশি নফল ইবাদতে রত হই আর গভীর মনোনিবেশ সহকারে পবিত্র কুরআন পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য যাচনা করি তাহলে ইনশাআল্লাহ তিনি আমাদেরকে শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের স্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য দান করবেন।

আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এই কামনা, তিনি যেন আমাদের এই দান খয়রাত, ইবাদত বন্দেগি, সিয়াম সাধনাকে কবুল করে আমাদেরকে নাজাত দান করেন, আমিন।

এইচআর/এমএস