রমজানের শেষ দশকে মহানবির আমল
আজ পবিত্র জুমার দিন এবং পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের শেষ দিনের রোজা রাখার সৌভাগ্য আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দান করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা যদি রমজানের শুরু থেকেই আল্লাহর প্রাপ্য এবং বান্দার অধিকার প্রদানের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করি এবং পূণ্যকর্ম সম্পাদন করি তাহলে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ হবে ও জান্নাতের দরজাগুলো খুলে যাবে। তাই অবশিষ্ট দিনগুলোকে বৃথা নষ্ট না করে পূণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।
ইতিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলি অতিবাহিত হয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি নাজাতের দশকে। শেষ দশকে মহানবি (সা.) আরো অনেক বেশি ইবাদত করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রমজানের শেষ দশদিনে ইবাদতের ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) এতটা সচেষ্ট হতেন যেমনটি অন্য সময়ে পরিলক্ষিত হতো না। (সহিহ মুসলিম) সাধারণ দিনগুলোতে অর্থাৎ বছরের অন্যসময়ও মহানবির (সা.) ইবাদতের দৃষ্টান্ত এমন ছিল যা কোন সাধারণ মানুষই পালন করতে পারবে না সেখানে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানে এর চিত্রই ভিন্ন হতো। হজরত আয়েশা (রা.) আরো বলেন, মহানবি (সা.) শেষ দশকে প্রবেশ করলে কোমর বেঁধে ইবাদতে লেগে যেতেন এবং রাতগুলোকে জীবিত করতেন আর পরিবারের সদস্যদের জাগাতেন।
হাদিস থেকে এটিও জানা যায় যে, মহানবি (সা.) বলেছেন, আমলের দিক থেকে খোদা তা’লার নিকট এই দিনগুলো অর্থাৎ রমজানের শেষ দশদিনের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রিয় অন্য কোন দিন নেই।
রমজানের এই শেষ দশকে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফে বসতেন এবং লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো কোন স্থানে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া বা অবস্থান করা। ইসলামি পরিভাষায় ‘ইবাদতের সংকল্প নিয়ে রোজা রেখে মসজিদে অবস্থান করার নাম ইতিকাফ’ (হিদায়া, বাবুল ইতিকাফ)।
এই শেষ দশকে একজন ইতিকাফকারী দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়েন, যেন তিনি তার অভীষ্ট মনোবাসনা পূর্ণ করে ইতিকাফ থেকে উঠতে পারেন।
রমজানের এই শেষ দশকের একটি রাতে এসে থাকে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনী লাভ বোধ করি মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারা জীবন কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে শয়তানী প্রবৃত্তিরূপে দৈত্যকে নিধন করার পর মুমিনের কাছে আসে সেই মুহূর্তটি-সেই পাওয়ার মুহূর্তটি যা আল কোরআনের সুরা কাদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ মুহূর্তটি।
লাইলাতুল কদর বলতে আমরা সাধারণত একটি রাতকে মনে করে থাকি। ভৌগোলিক কারণে সারা দুনিয়ায় যেহেতু একই সময়ে রাত থাকে না সেজন্যে লাইলাতুল কদরকে আমাদের গণনার একটি রাত নির্ধারণ করা সঠিক বলে মনে হয় না।
লাইলাতুল কদর এমন একটি সময় মুমিনের ব্যক্তিগত জীবন বা জাতীয় তথা মিল্লাতী জীবনে রাতের ন্যায় কাজ করে থাকে। মুমিন সাধনার শেষ লগ্নে তার প্রভুর দিদার বা দর্শন ও সান্নিধ্য লাভ করে বাক্যালাপে ভূষিত হয়।
এ মুহূর্তটিই আসলে তার জীবনে লাইলাতুল কদর। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ মুহূর্তটি অবশ্যই মুমিনের জীবনে আসে রমজানের কঠোর সাধানার শেষ দশকে। রোজার সাধনার মাধ্যমে মুমিন পানাহার ত্যাগ করে, নিদ্রাকে কম করে দিয়ে এবং নিজের প্রজননকে সাময়িকভাবে হলেও স্বীকার করে আল্লাহর রঙে রঙিন হয়। তাই সে আল্লাহর সাথে নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী বাক্যালাপ করার সৌভাগ্য লাভ করে।
হাদিস পাঠে জানা যায়, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-হজরত রাসুল করিম (সা.) কদরের রাত্রি সম্বন্ধে বলেছেন ‘রমজান মাসের শেষের দশ রাত্রিসমূহে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর’ (বোখরি)। তিনি (সা.) আরো বলেছেন ‘তোমাদের কাছে রমজান এসেছে। রমজান মোবারক মাস। এর রোজা আল্লাহ তোমাদের প্রতি ফরজ করেছেন। এ মাসে বেহেশতের দ্বার সমূহ উন্মুক্ত করা হয়েছে আর দোযখের দ্বারসমূহ বন্ধ করা হয়েছে এবং দুষ্কৃতকারী শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে। এ মাসের একটি রাত্রি যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সে সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত’ (বুখারি)।
হাদিস থেকে আরও জানা যায়, হজরত আয়েশা (রা.) মহানবির (সা.) কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি লাইলাতুল কদর লাভ করলে কি করবো? হজরত রাসুল করিম (সা.) তাকে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতে বললেন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি মার্জনাকারী। মার্জানাকে তুমি ভালোবাস। অতএব তুমি আমাকে মার্জনা কর’ (তিরমিজি)।
আমাদেরকে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের অন্বেষণ করতে হবে। আর রমজান মাসের শেষ দিনগুলোতে আমাদের সবার বেশি বেশি উপরোক্ত দোয়াটিও করা উচিত।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে নাজাতের দশকে বেশি বেশি তার ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
এইচঅার/এমএস