ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শরণার্থীর বোঝা বইবে কে?

ফুরকানুল আলম | প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ১২ মার্চ ২০২২

সময়টা খুব বেশিদিন আগের নয়। কথিত আরব বসন্তের ঢেউয়ে উত্তাল গোটা মধ্যপ্রাচ্য। লিবিয়াসহ সমৃদ্ধ দেশগুলো যুদ্ধের তাণ্ডবে ক্ষত-বিক্ষত। প্রাণ বাঁচাতে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন লাখো মানুষ। কিন্তু তাদের ঠাঁই দিতে গড়িমসি শুরু করে গোটা ইউরোপ।

শুরুতে জার্মানি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আশ্রয় দিলেও ইউরোপের বাকিদের দেখাদেখি তারাও কড়াকড়িতে মত দেয়। ফলে দেশে দেশে সীমান্তে অমানবিক আচরণের শিকার হন ভাগ্যাহত মানুষগুলো। অনেককে কুকুর-বেড়ালের মতো তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কেউ কেউ শিকার হন মারধরের। সমুদ্রতটে আয়লান নামে সিরিয়ার এক শিশুর মরদেহ প্রতীক হয়ে ওঠে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী সমস্যার।

অথচ, পুরো যুদ্ধটাই ছিল পশ্চিমা এজেন্ডার বাস্তবায়ন। এমনই মত, প্রাচ্যতাত্ত্বিক ভিয়াচে স্লাভ মাতুজভের মতো অনেকের। তারা বলছেন, গণতান্ত্রিক মুখোশ পরে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছিল পশ্চিমারা। তাদের এই কাজের প্রাথমিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছেন, ওয়ায়েল ঘানিম, এশরা আব্দেল ফাত্তাহ, ওয়ালিদ রাশেদ, আসমা মাহফুজের মতো তরুণরা।

যারা পড়াশোনা করেছিলেন মার্কিন মুল্লুকে। কীভাবে একটি প্রতিবাদী আন্দোলন তৈরি করতে হয়, সেই নির্দেশনা দিয়ে হ্যান্ডবিল, রুসিয়ার তৈরি করা হয়েছিল। কথিত ওই আরব বসন্ত কোমড় ভেঙে দিয়েছে অধিকাংশ আরব দেশের। সমৃদ্ধ-সম্পদশালী লিবিয়া, ইরাক আজ ধ্বংসস্তূপ। আরও কয়েক দশক হয়তো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না এই দেশগুলো।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত এক দশকে ৪ কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। যাতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি। অর্থাৎ ১০ বছরে শরণার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণে পৌঁছেছে। বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর সমস্যা কেটে যাওয়ায় নিজ ভূমিতে যারা ফেরত গেছেন, এ সংখ্যার মধ্যে তারা বাদ পড়েছেন।

গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি সিরিয়ার শরণার্থী। সংখ্যায় ৬৭ লাখ। এই সময়ে বাস্তুচ্যুতদের ঠাঁই দেওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে তুরস্ক। ৩৭ লাখ বাস্তুচ্যুত ভাগ্যাহত মানুষ রয়েছে দেশটিতে। এ তালিকায় শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশও। মিয়ানমারে নিজ দেশের সেনাবাহিনীর গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা।

“যতদিন ভবে, না হবে না হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।”

কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের এই অমর বাণী হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন ইউক্রেনবাসী। এশিয়া, আফ্রিকার শরণার্থীদের ঢলের কারণে তাদের বোঝা মনে করেন ইউরোপবাসী। এবার এই বোঝা নিজেদেরই লোক। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দুই সপ্তাহে ২১ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী দেশগুলোতে। যার মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ঠাঁই পেয়েছেন পোল্যান্ডে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের গণহত্যা থেকে বাঁচতে এই পোল্যান্ডবাসীও হয়েছিলেন শরণার্থী। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইউক্রেনের শরণার্থী সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়াবে, যা গোটা ইউরোপের জনমিতির ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থীর মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম অবস্থায় পড়তে পারে অনেক দেশ।

পশ্চিমা কোনো কোনো বিশ্লেষকের ধারণা, শুধু ইউক্রেন দিয়ে রুশ আগ্রাসনের সমাপ্তি নাও হতে পারে। প্রতিবেশী অন্যদেশগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। যুদ্ধের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তাতে বড় কোনো মোড় না নিলে এখনই এ সম্ভাবনা কম। যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বলছে, এখন পর্যন্ত শুধু ইউক্রেন দখলেই পূর্ণ মনোযোগ পুতিনের।

একই সাথে সমানতালে আলোচনাও জোরদার হয়েছে। যার মধ্যস্ততায় সবার চেয়ে এগিয়ে আান্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠের অন্যতম খেলোয়াড় তুরস্ক। মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ইসরায়েলও। এসব প্রয়াস হয়তো দুপক্ষকে শান্ত করতে সমর্থ হবে। তবে পর্দার আড়ালে যে সব চুক্তি আর সমঝোতা হবে তা হয়তো জানা যাবে না অনেক দিন পর্যন্ত।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল ২৪।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন