নতুন বছরে খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার
নতুন যে বছর চলছে, এ বছরই দূর হবে কোভিড-১৯। থাকবে না রোগ-বালাই। দূর হবে চলমান মহামারি। এমনটাই প্রত্যাশা সবার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানও বিশ্ব জনগণের সুরে বলেছেন এ কথা। তিনি সাধারণত এমন আশার কথা বলেন না। মহামারি চলাকালীন সম্ভবত এটাই তার বলা অন্যতম আশার কথা, যা তিনি গেলো মাস দু’য়েক আগে থেকে বলছেন। তার দৃঢ়তার পালে আমরাও গা ভাসাতে চাই। কোভিড দুর্যোগ এ বছরই দূর হবে এটাই প্রত্যাশা রাখি। কেবল কোভিড দুর্যোগ নয়, আরও কিছু সমস্যার সমাধান চাই এ বছর।
নতুন বছরে আমাদের শপথ হোক, উদারতার। আমরা দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছি। সংকীর্ণতা পরিহার করলে কি এমন ক্ষতি! এই ধারা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। অসহিষ্ণুতা পরিহার করতে হবে। কোভিড একদিন কেটে যাবে সম্ভবত, কিন্তু যে অস্থিরতার সূচনা আমরা করেছি তা কখনও শেষ হওয়ার নয়। তাই সচেতনভাবে এটাকে দূরে ঠেলতে না পারলে আমাদের জাতীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে তা আরও বেশি জেঁকে বসবে বটে।
আজকাল একটা বিষয় খুব মাথায় আসছে। তা হলো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার ইস্যু, মানবাধিকারের ইস্যু। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ হলো, বছরটি ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের সহ্যসীমা প্রায় অতিক্রম করে যাওয়ার বছর। এমন আমরা দেখতে চাই না ২০২২ সালে। ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা যায়, সংস্থাটি এমনটাই বলছে।
বিচারহীনতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ সমাজে ছিল পানি-ভাতের মতো। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা কারণে গত বছরজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, নারী-অধিকারকর্মী, বিরোধী দল, সমালোচক ও আইনজীবীদের জন্য পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল। আদতে সমাজে এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে, যা ভীতিকর। এটা কেটে যাক দ্রুত। এমন পরিস্থিতি ২০২২ সালে যেন ধীরে ধীরে কমে আসে এটাই চাই।
রাজনীতির জন্যও বছরটি হোক শুভ। একে অন্যকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা হারিয়ে গেছে আমাদের। তাই বলা যাচ্ছে না কতটা শুভ হবে ২০২২। নতুন বছরে সবার চোখ থাকছে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার দিকে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেছেন, একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় এই কমিশন গঠন হোক, অতীতের মতো বিতর্ক না থাকুক এটাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিতর্ক থাকবেই। তাই যত কম বিতর্ক নিয়ে এটি কাজ শুরু করতে পারে সেটাই প্রত্যাশা।
ডিজেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। কিন্তু তার আগে থেকেই বেড়েছে চাল, সয়াবিন তেল, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম। সাধারণ মানুষের আর মাথা তুলে দাঁড়ানোর জো নেই। এমন অবস্থা ২০২২ সালেও বজায় থাকলে গরিব আরও গরিব হবেন আর ধনীরা হতে থাকবেন আরও ধনী। এর একটা সমাধান প্রয়োজন! সরকারের এ বিষয়টি দেখা উচিত সরাসরি। কত শত লেখা হয়েছে এ বিষয়গুলো নিয়ে, কিন্তু আদতে কোনো কাজ হয়েছে কি?
আবার ফিরি কোভিড প্রসঙ্গে। নতুন বছরের মাঝামাঝি কোভিডমুক্ত হোক বিশ্ব। খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার। সাবলিল হোক বিশ্ব সীমান্ত। যে দুয়ার আধো আধো খুলতে শুরু করেছে ধীরে হলেও তা আরও প্রসারিত হোক এটাই চাই। দেশেও সৃষ্টি হোক কর্মসংস্থান, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ুক, যারা বিদেশ যেতে চান তাদের যাত্রা স্বচ্ছন্দ্যের হোক, সৌভাগ্য নেমে আসুক জীবনে এটাই চাওয়া।
সবশেষ যদি বলি, নতুন আরেকটি বছরের আগমন জীবনকে সংকুচিত করে দেয়। কাজেই বিগত বছরের ভুল শুধরে নিয়ে নতুন বছরে উদারনীতির কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করাই শ্রেষ্ঠ। যে যে যার যার জায়গা থেকে, পদ থেকে একটু উদার হলেই কিন্তু একে অন্যের জন্য পথটা সহজ হয়ে যায়। কেটে যায় সব বাধা। আলো ফুটুক প্রত্যেক অন্তরে...।
লেখক : লেখক, টেলিভিশন সাংবাদিক।
এইচআর/এএসএম