নতুন বছরে নতুন আঙ্গিকে গড়ে উঠুক ছাত্রলীগ
ইমরান হুসাইন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঐতিহ্যবাহী সেই সংগঠনের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে উপ-মহাদেশের বৃহৎ ছাত্র সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গৌরবোজ্জ্বল সব অর্জনের সঙ্গে মিশে আছে ছাত্রলীগের নাম। সময়ের পরিক্রমায় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর পার করে ৭৫ বছরে পা রাখছে। যা অতি গর্বের বিষয়। যে প্রিয় সংগঠনটি তিল-তিল করে বেড়ে উঠে উপ-মহাদেশে বৃহৎ আকার ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিল, আছে ও থাকবে এটাই ছাত্রলীগের ঐতিহ্য। সমাজের যেকোনো অন্যায় কাজে বাধা, ভালো কাজে সাহায্য বা প্রেরণা এবং অসহায় মানুষের পাশে ছাত্রলীগ সব সময় ছিল এবং যুগযুগ ধরে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি। যে স্লোগানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের ও দশের কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত। তার কারণ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এত বছরের গৌরব ঐতিহ্য ও সাফল্যেকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ছায়াতলে তারাই থাকবে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করবে,দেশ ও জনগণের কথা ভাববে। যারা স্বার্থবাদী চিন্তা করে বা ছাত্রলীগের নাম ধরে কুকর্ম করে তাদেরকে দল থেকে ছাঁটাই করতে হবে। গুটি কয়েক লোকের জন্য এত বছরের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গায়ে কালিমা মাখতে দেওয়া যাবে না।
আমরা যদি একটু খেয়াল করি তবে দেখতে পাই করোনা মহামারিতে মানুষের কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য অকাতরে পরিশ্রম করে গেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। করোনার এই মহামারিতে নিপীড়িত মানুষদের সুরক্ষিত রাখার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী ছাত্রলীগ প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার বান্ডেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ৬ লাখ ৪৭ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছে। এ ছাড়াও সারা দেশে নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জীবাণুনাশক সামগ্রী (সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ) বিতরণ করেন।
ভাসমান মানুষ, পথ শিশুসহ প্রায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষদের জন্য খাদ্য সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঈদ উপহার হিসেবে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে চালু করা হয় হ্যালো ছাত্রলীগ সেবা অ্যাপ । হ্যালো ছাত্রলীগ সেবার মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রায় ২ লাখ ৯২ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে সহায়তা পেয়েছে। মানবিক সহায়তা হিসেবে শিশুদের মাঝে শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়।
পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে মৌসুমি ফল, খাবার, মাস্ক ও বোতলজাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রায় ১৮ হাজার ৫৫০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করে। প্রায় ২২ হাজার মানুষ টেলিমেডিসিন সেবা পেয়েছে এবং দেশব্যাপী প্রায় ১০০ জনকে প্লাজমা দান করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পাশাপাশি রক্তদান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৫৬টি ডিজইনফেকশন চেম্বার ও ১২০টি বুথ স্থাপন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষদের দাফন করেছে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫টি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ- কালভার্ট মেরামতসহ প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে ছাত্রলীগ। দেশব্যাপী কৃষকের প্রায় ৯৬ হাজার শতাংশ জমির ফসল কাটায় সহযোগিতা করে। সারাদেশে অসহায় কৃষকদের ১ লক্ষ ২৮ হাজার কেজি উন্নত মানের ফসলি বীজ বিতরণ করা হয়। শ্রমিক সংকট থাকা উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ চাষী ও ভুটা চাষীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য- সহযোগিতা করেছে ছাত্রলীগ। করোনায় ছাত্রলীগের ফ্রি সবজি বাজার থেকে অসহায় মানুষ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহের উন্মুক্ত সুযোগ পেয়েছে। ফ্রি সবজি বাজার থেকে দেশব্যাপী প্রায় ৬২ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে।
এইটা তো গেলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান বা সমসাময়িক চিত্র। কিন্তু এই সংগঠনকে কেন্দ্র করে আছে আরো অনেক গুলো ইতিহাস। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকেই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। একটু পিছনের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে পায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফার পক্ষে গণ-অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ছিনতাই হয়ে যায় স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা করেন। ছাত্রলীগ ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পরও অক্ষুণ্ণ রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গতিধারা ও সম্মান। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কৃতিত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে আজীবন। বর্তমান ছাত্রলীগের কান্ডারি আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের দক্ষ নেতৃত্বে দেশ ও জনগণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
দেশ ও জনগণের নিকট আস্থা ভরসা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ফুটে উঠছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর ও ৭৫ এ পদার্পণ শুভ ও সুখকর হোক। নতুন বছরে নতুন আঙ্গিকে গড়ে উঠুক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পূর্বের ন্যায় আগামীতেও দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে সব সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অবদান পরিপূর্ণভাবে থাকুক। দেশ ও জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি এই স্লোগানে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
এইচআর/জেআইএম