ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও প্রত্যাশা

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২২

শুরু হল ২০২২ খ্রিস্টাব্দ। সবাইকে জানাই নতুন বছরের ফুলেল শুভেচ্ছা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন কিছু করার ও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় কার না থাকে। তবে এবার নতুন বছরে প্রায় সবাই করোনামুক্ত বিশ্বের প্রত্যাশা করছেন। নতুন বছর মানেই নতুন পরিকল্পনা, নতুন কিছুর প্রত্যাশা। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার উৎসব নতুন নয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এ রীতির প্রচলন রয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সর্বজনীন উৎসবগুলোর মধ্যে নববর্ষ উদযাপন অন্যতম একটি।

আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে নববর্ষ পালনের রীতি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ সূত্রমতে, মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় নববর্ষ উদযাপনের রীতি শুরু হয়। তবে নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ব্যাবিলনবাসীরা প্রায় ২ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে বিপুল আয়োজনে বর্ষবরণ শুরু করে। প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর শুরু হতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমান সিনেটররা ঘোষণা করেন জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পহেলা দিন।

তার পরও খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। সম্রাট জুলিয়াস সিজার এটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বলা হয়। পরে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নতুন বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। সেই অনুসারে বিশ্বব্যাপী ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে নববর্ষ উদযাপনের নামে আমরা যেন কোন অপসংস্কৃতির স্থান না দেই সে বিষয়টিকেও দৃষ্টিতে রাখতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও করোনা মহামারির কারণে থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নির্দেশনা অনুযায়ী, উন্মুক্ত স্থানে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীতে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি। উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান করা যাবে না। হোটেলগুলোর আয়োজনে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় তেমন অনুষ্ঠানেরই অনুমতি দেওয়া হবে। নাশকতা এড়াতে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া গাড়ি, মোটরসাইকেল চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত দুই বছর ধরে মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাসী মহা আতঙ্কে অতিক্রম করছে। অপর দিকে বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মৃত্যু বরণ করেছেন অর্ধ কোটির অধিক মানুষ। সামনে আরো কি পরিস্থিতি দাঁড়ায় তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। কেননা করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আক্রান্তের সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাইতো নতুন বছরে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রত্যাশা- তিনি যেন বিশ্বকে করোনামুক্ত করেন। বিশ্ববাসী আবার যেন নির্ভয়ে শান্তিতে নি:শ্বাস নিতে পারে আর প্রিয় মানুষটিকে বুকে টেনে নিয়ে স্নেহের পরশে সিক্ত হতে পারে।

তাইতো নতুন বছরে করোনামুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখছেন সবাই। স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে। আমরা আলোড়িত উদ্দীপিত হই। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবনযাপন করতে, নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে।

সুখ-দুঃখ আর সব হারানোর ব্যথাকে ভুলে নতুন কিছুর আশা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতইনা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার কবিতায় ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ ‘দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ/তোমার ফুৎকারলুব্ধ ধুলা-সম উড়ুক গগনে,/ভ’রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধসনে/আকুল আকাশ/দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ।’ রবীন্দ্রনাথের এ কথাগুলোর মতই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। করোনামুক্ত বিশ্বের কামনা করবে।

নতুন বছর শুরুর প্রাক্কালে ফেলে আসা বছরের দিকে তাকালে জনজীবনে আলোড়ন তোলা অনেক ঘটনাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কতক ঘটনা আমাদেরকে লজ্জিত করেছে। দেশ ও জাতির জন্য বদনামের কারণ হয় এমন কোন ঘটনা যেন নতুন বছরে না ঘটে সেই প্রত্যাশাও আমরা করছি।

একটি বিষয় আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মত ও সেই মতের পার্থক্য থাকবে। এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই মতপার্থক্য মানে জাতিতে বিভক্তি নয়। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জনগণের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা জরুরী। আমরা চাই একটা অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে মানুষে মানুষে সংঘাত থাকবে না। দিনদুপুরে কেউ খুন হবে না।

আমাদের বোনরা ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হবে না। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাবে না। ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায়। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠি সব নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার থাকবে। কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে। তাহলেই আমাদের দেশটা সুখী-সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত হবে।

আমাদেরকে অবশ্যই এটি শিকার করতে হবে যে, বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। এখন আর আমাদের কেউ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করার সাহস দেখায় না। আমাদের দেশের উন্নতি দেখে পাকিস্তানীরা এখন এটি বলতে বাধ্য হচ্ছে ‘খোদাকে ওয়াস্তে হামে বাংলাদেশ বানাদো’।

আজ আমরা পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রজেক্ট নিজেদের অর্থায়নে শেষ করতে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই এই কাজ শেষ হবে এবং পদ্মাসেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখতে সক্ষম হবে। নতুন লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে চলবে। নতুন বছরে সবার প্রত্যাশা, সেই চলার পথে যেন সঙ্গী হয় দেশের প্রতিটি মানুষ। কাউকে পেছনে ফেলে কিংবা প্রত্যাখ্যান করে নয়, অগ্রগতির অংশ হোক ঐক্যবদ্ধ জাতি।

আগামী দিনগুলো সমৃদ্ধি বয়ে আনুক জাতির জীবনে। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক নতুনভাবে সরকারের কর্মোদ্দীপনায়, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরও বিস্তার লাভ করুক এ প্রত্যাশা আমাদের।

নতুন বছরটি যেন সমাজ জীবন থেকে, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। রাজনৈতিক হানাহানি থেমে গিয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ যেন সমৃদ্ধির দিকে আরো এগিয়ে যেতে পারে। সেই সাথে প্রার্থনা করি করোনামুক্ত বিশ্বের।

এইচআর/এমএস