ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

প্রকল্প লইয়া টেনশনে আছি

মোকাম্মেল হোসেন | প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১

অফিসে পৌঁছে পিয়ারা বানু দেখল তার বস জুলমত আলী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। জুলমত আলীকে এ অবস্থায় দেখে গলায় বিষাদের ঢেউ তুলে সে জানতে চাইল,
: স্যার, কী হইছে!
: সর্বনাশের ঢোলে হিট করছে। আগামী সপ্তাহে নেদারল্যান্ডস থেইকা মাননীয় ডোনার পার্টি আসতেছে।
: ডোনার আসতেছে, এইটা তো আনন্দের সংবাদ। এতে মাথায় হাত দিয়া বইসা পড়নের কী আছে?
: শুইয়া যে পড়ি নাই, এইটাই আশ্চর্যজনক ম্যাটার।
: ঘটনা কি খুবই সিরিয়াস?
: সিরিয়াসের গ্রান্ড ফাদার। এই ব্যাটারা আমাদের নারী উন্নয়ন, বনায়ন আর গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে ডোনেশন করছে। প্রকল্পে তো ভনভন কইরা মাছি উড়তেছে। আর এদিকে টাকা-পয়সা সব ইটিং করা শেষ।
: এখন তাইলে কী করবেন স্যার?
: কী করব, সেই চিন্তায়ই তো বেহুশ হইয়া যাইতেছি।
: বেহুশ হওনের প্রয়োজন নাই। আমি আপনেরে রাস্তা বাইর কইরা দিতেছি।
: কী রাস্তা!
: আগে বলেন, ম্যাডামের ওজন কতো?
: ম্যাডাম মানে মাই ওয়াইফ?
: জি স্যার।
: তার ওজন পূর্বে ছিল একান্ন কেজি। বর্তমানে হইছে একশ তেইশ কেজি।
: নারী উন্নয়নের মডেল হিসেবে আমরা ম্যাডামরে শো করব। শো করার সময় ডোনারদের ব্রিফ করব- উনার ওজন পূর্বে ছিল একান্ন কেজি আর বর্তমানে হইছে একশ তেইশ কেজি। ডিয়ার ডোনার স্যার, এইটা কি পারফেক্ট উইমেন ডেভেলপমেন্ট নয়?
: মানলাম তোমার কথা; কিন্তু বনায়ন?
: গাজীপুরের গজারি বনে ডোনার পার্টিরে ছাইড়া দিয়া বলব, লুক স্যার! দেখেন, বনায়নের ক্ষেত্রে আমরা কী সাড়া জাগানো ইতিহাস সৃষ্টি করছি। তবে এইখানে একটু হোমওয়ার্ক করার প্রয়োজন আছে।
: কী রকম?
: ডোনারদের বন দেখানোর আগে গাছপালাগুলোরে হালকা মেকআপ মাইরা লওন লাগব।
: মেকআপ?
: হু মেকআপ। এই যেমন ধরেন লাল ফিতা, সবুজ ফিতা দিয়া গাছগুলারে একটু বাইন্ধা দিব। তারপর গোড়ায় একটু চুনা মাইরা দিব...
: মনঃপুত হইল না।
: তাহলে স্যার ডোনারদের লইয়া একটা খোলা মাঠে চইল্যা যাব। ওইখানে যাইয়া বিরান মাঠ দেখাইয়া বলব, এই মাঠে লক্ষ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করছিলাম; কিন্তু ছাগল উন্নয়নের জোয়ারে সবকিছু ভাইসা গেছে।
জুলমত আলী চেচিয়ে বলে উঠলেন,
: মানে?
হাসতে হাসতে পিয়ারা বানু বলল,
: মানে হইল স্যার, ছাগল গাছের বেবাক চারা খাইয়া ফেলছে।
: বুঝলাম; কিন্তু গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের কি উপায় হবে?
: এইটা আরও বেশি ইজি।
: যেমন?
: আমরা ডোনারদের লইয়া সোজা গাবতলীর হাটে যাব। ওইখানে যাইয়া মোটা মোটা ষাঁড় দেখাইয়া বলব, দিস ইজ আওয়ার প্রজেক্ট বোওল। আর পাইকাদের দেখাইয়া বলব, দিস ইজ আওয়ার ফার্মার।
: কিন্তু পাইকার ব্যাটারা যদি বিরিংতাল ঘটায়?
: মাথা খারাপ হইছে আপনের? বিদেশিদের সেখানে লইয়া গেলে দেখবেন বাঙালি পাবলিক মাখনের মতো গইলা পড়তেছে। তারপরও স্পেশাল সিকিউরিটি হিসেবে তাদের বলব, ভিজিট শেষ হইলে তোমাদের ঠান্ডাসহ বিরিয়ানি খাওয়াব উইথ পান-সিগারেট। ডোনাররা তো আর বাংলা বুঝবো না। দেখবেন দুই পক্ষই ফিট। ডোনাররা খুশি জাম্বু সাইজের ষাঁড় দেইখা আর গরুর পাইকাররা খুশি বিরিয়ানি খাইয়া।
: প্রকল্প সমস্যার সমাধান তো দিলা পিয়ারা; কিন্তু ব্যাটাদের থাকতে দিব কোথায়? একটা রেস্টহাউজ করার জন্য তাদের কাছ থেইকা যে ফান্ড পাইছিলাম, সব তো খাইয়া বইসা রইছি।
: এইটাও কোনো বিষয় নয়। ডোনাররা হইল আমাদের মামাশ্বশুর। কাজেই তাদের মামাশ্বশুরের মতোই আদর-যত্মে রাখাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদের সোনারগাঁও হোটেলে তুইলা দিব। পাশাপাশি একটা এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করব। আশা করি, বাংলাদেশ থেইকা তারা বেজার হইয়া যাবে না; আমাদের আতিথেয়তায় সন্তুষ্ট হইয়াই তারা গো টু নেদারল্যান্ডস।
: আমি তো এইটাই চাই। ডোনার বেজার হইলে তো গাট্টি-বোচকা সব গোল কইরা দোকানদারি ক্লোজ করতে হবে।
জুলমত আলীর কথা শুনে পিয়ারা বানু হেসে বলল,
: আশা করি আমাদের বেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না স্যার।

লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক ।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

আরও পড়ুন