ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আবার পেঁয়াজের দোষ: ভারসাম্যের দিন শেষ

মোস্তফা কামাল | প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১

নিত্যপণ্যের দামের চেয়ে বাৎচিত আরো লাগামহীন। বিশেষ করে দায়িত্ববানদের কথা বলার অবারিত স্বাধীনতা। কোনো বাধা বা সেন্সর লাগছে না। যার মন যা চায় তাই বলছেন। বলতে পারছেন। আগের মতো প্রেসরিলিজ লাগছে না, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মন্ত্রীদের বক্তব্য তৎক্ষণাতও (লাইভ) প্রচার হচ্ছে। আলোচিত পণ্যের মধ্যে চালের পর এখনকার সিরিয়ালে পেঁয়াজ। এ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাকের আশ্বাসমূলক বক্তব্যটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হয়েছে। রবিবার ঢাকার বাইরে গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে তার মন্তব্য ছিল-আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। টেনশনের কিছু নেই।

ঘটনা এবং পরিস্থিতির অনিবার্যতায় গণমাধ্যমগুলোর এমন বক্তব্য লুফে নেয়াই তো স্বাভাবিক। যথারীতি তাই হয়েছে। পরদিনই মন্ত্রীর কথাকে একেবারে অসার করে দিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তাও অফ দ্য রেকর্ডে নয়। একেবারে অন রেকর্ডে, আনুষ্ঠানিকভাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এক মাসেও পেঁয়াজের দাম কমবে না। এ মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়েই।

বাস্তবদৃষ্টেই কথা বলেছেন সচিব। যদিও শুনতে ভালো লেগেছে মন্ত্রীরটা। আশা-ভরসা মেশানো কথা মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে বেশি খায়। বাস্তব আর অবাস্তবের তফাৎ এমনই। সত্য বা বাস্তব কথা শুনতে তিতাই লাগে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে সোমবারের বৈঠকে পেঁয়াজ নিয়েই কথা হয়েছে বেশি। ভোজ্যতেল ও চিনির দাম তেমন গুরুত্ব পায়নি। চাল, আটা, ময়দা, মুরগি, গুঁড়া দুধ, সবজি, সাবানও গুরুত্ব পায়নি। তবে, ব্যবসায়ীদের আরো কিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়নি। সিদ্ধান্তও হয়নি। সেগুলো নিয়ে শিগগিরই বৈঠক হবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন-বিটিটিসিতে।

শঙ্কা বা ধারণা হচ্ছে, ওই বৈঠকের আগে-পরে আরো কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। বরাবর অভিজ্ঞতা এমনই। তবে, সরকারের দিক থেকে দাম কমানোর একটি চেষ্টা থাকে। ভোজ্যতেল ও চিনির কর কমানো নিয়ে মাস খানেক আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজের ৫ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগেও এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে সাড়া মেলেনি।

পণ্যমূল্য বৃদ্ধি মুল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতির প্রথম ধাপ। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, চাল, আটা, ময়দা, মুরগি, গুঁড়া দুধ, সবজি, সাবানের মতো নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর বাড়তি। বিশ্ববাজারে গত এক বছরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৭০ ও ৭৬ শতাংশ। বিপরীতে বাংলাদেশে বেড়েছে যথাক্রমে ৪৩ ও ৫৪ শতাংশ। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশের মতো। দেশে বেড়েছে ২৭ শতাংশ। সেই স্রোতে অন্যান্য পণ্যের দামও চড়ছে। রুটি-বিস্কুটের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মহল্লার মুদি বা চা দোকানে গেলেই টের পাওয়া যাচ্ছে। হোটেল- রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বাড়ছে। এরমাঝেই রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে। গত ১২ এপ্রিল ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ৫৯১ টাকা। এখন সেটা ১২৫৯ টাকা। ৬ মাসে বেড়েছে ২১৩%!

এ বাস্তবতায় ব্যবসায়ীদের নতুন করে কিছু দাম বাড়ানোর প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত অগ্রাহ্য করতে পারবে না সরকার। ভোক্তাদের দিকে তেমন খেয়াল না রাখলেও চলে। এরপরও শুল্ক ছাড় দিয়ে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যায় মাত্র। তা যথারীতি রয়েছেই। কিন্তু, ফল কম। শুল্ক কমলেও পণ্যের দাম তেমন কমে না। বিদ্যমান এ বাজার মৌলবাদ ভেঙে বিকল্প বাজার কাঠামো সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সেই চিন্তা করাও যায় না। পেঁয়াজের দোষ ভর করেছে সেখানেও।

সরকারি-বেসরকারি ভেদ টানার বাস্তবতা কমতে-কমতে এখন ‘নাই’ হবার পথে। সম্পর্কটা অঙ্গাঙ্গি-পাল্লাপাল্লি। বেসরকারি খাতের সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারি খাতও সমান আচরণ করে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের রান্নার গ্যাসের দাম বাড়তে না বাড়তেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য বেড়ে দাঁড়ালো ১২৫৯ টাকায়। বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিলে- বা, রাস্তায় হঠাৎ যান চলাচল বন্ধ করে দিলে- সরকারি প্রতিষ্ঠান তখন জনস্বার্থে চেক এন্ড ব্যালান্স করে।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন