সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বৃহত্তর অর্থে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একটি প্রধানতম শর্ত হিসেবে আজ সর্বত্রই স্বীকৃত। সে মতে আর্থিক সেবা দানকারীদের পরিচালিত করার দায়িত্ব বর্তায় প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ওপর। আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবান্ধব সক্রিয়তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ মুদ্রানীতি তৈরি করার সময় কেবল মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, বিনিময় হার, ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে ভাবনার দিন শেষ। নতুন শতাব্দির চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং আয় বৈষম্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম প্রধান। জলবায়ুবান্ধব উন্নয়ন উৎসাহিত করতে সবুজ অর্থায়ন দরকার। কাজেই এখানে আর্থিক খাতের সক্রিয়তা অপরিহার্য। একইভাবে সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা মানুষের কাছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফল পৌঁছে দিতে দরকার ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। এখানেও তাই আর্থিক খাতের তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা প্রধানতম।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়ার অধ্যাপক ব্যারি আইচেনগ্রিন বলেছেন- “নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা আছে। ... মুদ্রানীতিকে কেবল মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিময় হারের মতো বিষয়গুলোতে সীমাবদ্ধ না রেখে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকেও বিবচেনায় নিতে হবে। ... কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোত্তম পথ হতে পারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তাদের ক্ষমতাগুলো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট সমাধানে কাজে লাগানো।”
বোঝাই যাচ্ছে যে প্রথাগত কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং অর্থাৎ ‘ডেভেলপমেন্টাল সেন্ট্রাল ব্যাংকিং’-এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বৈশ্বিক অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞরা। এটি সময়োচিত এবং প্রত্যাশিতও। বলতে দ্বিধা নেই বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ‘ডেভেলপমেন্টাল সেন্ট্রাল ব্যাংকিং’-এর ক্ষেত্রে পাঞ্জেরি অর্থাৎ বাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে হাজির হয়েছে আরও ১০-১২ বছর আগে থেকেই। সেই ২০০৯-১০ থেকেই। সে সময়টা ছিল বৈশ্বিক মন্দার গনগনে দুপুর। সেই চ্যালেঞ্জিং সময়েই নয়া গভর্নরের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। এবং সূচনা করেন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নয়া কৌশল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যথাযথভাবেই ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
সে সময়কার আর্থিক সেবা খাতের নেতৃত্ব সরকারের যথাযথ সহায়তায় সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলো। মূল লক্ষ্য ছিলো ‘রিয়েল ইকোনমি’তে অর্থায়ন। ফলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিলো কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে। কারণ প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছানো গেলে এক দিকে তাদের জীবিকা উন্নয়ন হবে, অন্য দিকে দেশের অভ্যন্তরের বাজারে চাহিদা বাড়ায় অর্থনীতিও বলশালী হয়ে উঠবে। একই ধারায় তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সরবরাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
আর ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক সেবাদানকারিদের সবুজ অর্থায়নে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই এক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করে গেছে একের পর এক। আর দ্রুত এবং কম খরচে নির্ভরযোগ্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছিলো। ফলে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলায় বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো, আর দেশের অর্থনীতি পেয়েছিলো নতুন গতি। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের সুফল পেয়েছে গোটা অর্থনীতি। করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে তুলনামূলক সাফল্য দেখিয়ে চলেছে তার পেছনেও ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এই অভিযান অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রযাত্রায় গোড়া থেকেই ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন তর তর করে এগিয়ে চলার নেপথ্য সত্যি ঘটনা সকলেই অবগত। বেশিদিনের কথা নয়। দিন বদলের শুরু ২০০৯ সাল থেকে। ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠীর রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থার কথা ঘোষণা দেয়। নতুন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ অর্থনীতির কথা বলে। শারীরিক শক্তির বদলে মেধা ও জ্ঞান শক্তিকে অর্থ উপার্জনে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা সম্ভব। এমন সমাজ গঠনের প্রেরণা ও স্বপ্ন দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের পথিকৃৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করার কাজে একযোগে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গ। সে সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যারা কাজ করেছেন, তাদের অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. আতিউর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে আসে গোটা ব্যাংকিং সেক্টর।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রসারে মূল কৌশলের জায়গায় ছিলো ‘ডিজিটাইজেশন’
সে সময় থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক ও মানবিক ব্যাকিং ধারণা প্রবর্তন করে। ব্যাংক ও আর্থিক সেক্টরে ব্যবহারিকভাবে দ্রুত আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রবেশ ঘটে সে সময়ে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে উন্নয়নের বাস্তবভিত্তিক দুরন্ত এবং দুর্দান্ত অভিযান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন সে সময়ের গভর্নর। বিশ্লেষকদের মতে, ‘অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাবেক গভর্নর এমন কিছু নতুন পথ ও বিষয়ের উন্মোচন করেন যেগুলো তখনকার সাধারণ প্রথার মধ্যে পড়ে না। বরং ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’ তিনি অ্যানালগ ব্যাংকিং থেকে একটি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক সেক্টরকে ব্যবহারিকভাবে দ্রুত আধুনিক ডিজিটাল হিসেবে বদল করেন। নিন্ম আয়ের মানুষ বিশেষত রিকশাওয়ালা, মহিলা পোশাক শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেন। ক্ষুদ্র এসএমএস (টেক্সট বার্তা) বা অ্যাপস এর মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন পরিচালনা করতে নির্দেশ দেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ব্যাংকিং সেক্টরে- বিকাশ, ক্রেডিট কার্ড, এটিএম বুথ, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদির সফল রূপান্তর ঘটে। দিনদিন ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে গ্রাম, দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়। যেখানে খুশি সেখানে বসে, ঘরে বসেই নগদ, বিকাশ, ইউক্যাশ, শিউর ক্যাশ নামে টাকা পাওয়ার কার্যক্রম এখন সহজ হয়েছে। মুহূর্তেই আপনজনদের কাছে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা যাচ্ছে সবকিছু।
করোনাকালেও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের জয়জয়কার। কেনাকাটা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সরকার অসহায় মানুষকে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। করোনায় গরীব মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের টাকা পাচ্ছেন হাতে হাতে এবং ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। আগের মতো কয়েক কিলোমিটার দূরে ব্যাংকে যেতে হয় না। তৎকালে প্রবর্তিত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বর্তমান (এপ্রিল ২০২১ মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী) গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লক্ষের অধিক। দৈনিক গড়ে লেনদেন প্রায় ২,১১৫ কোটি টাকা। একইভাবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান ও সেবা প্রাপ্তির এক অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খোলা মোট হিসাব সংখ্যা ১,১৪,৫৩, ১৩৯টি, যার মধ্যে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৩.৬ গুণ বেশি। এমএফএস-এর গ্রাহকগণ প্রায় ৯৬২.৪ কোটি টাকার ইউটিলিটি বিল প্রদান করেছেন এবং প্রায় ২,৭৫৮.৬ কোটি টাকার পণ্য ক্রয় করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দশ লাখেরও বেশি মানুষকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে (ইএফটি) ভাতা প্রদান করছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সবুজ অর্থায়নকে দেয়া হয়েছে সময়োচিত অগ্রাধিকার
বাংলাদেশ ব্যাংক শুধুমাত্র নিম্ন আয়ের মানুষদের আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমই গ্রহণ করেনি, সবুজ বিপ্লব বা গ্রিন ব্যাংকিং, কৃষি, এসএমই ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে অর্থায়ন বাড়িয়েছে। গত দশক জুড়েই বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষক-বান্ধব নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ৩৭ শতাংশ। এসব হিসেবে ৩,৬৭৫ কোটি টাকা জমা পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্রীন ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সাসটেইন্যাবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট’ ও সকল ব্যাংকে ‘গ্রীন ব্যাংকিং ইউনিট’ চালু রয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্য/উদ্যোগের জন্য ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলকে ৪০০ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৫৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপনে এডিবি’র অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকার তহবিল চালু হয়েছে। ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের আওতায় সব টাকা বিতরণ করা হয়ে গেছে। রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল, চামড়া ও পাট শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলারের ‘গ্রীন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড’ গঠন করা হয়েছিল কিন্তু ২০১৯ সালে সকল রপ্তানিমুখী শিল্পকে এই ফান্ডের আওতায় আনা হয়েছে। বলা যায় সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সারা বিশ্বের জন্য ‘পাইওনিয়ার’ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রান্তজনের ব্যাংকিংয়ের প্রসারে সচেষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক
গত এক দশক ধরেই বাংলাদেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক সেবাদাতাদের মানবিক ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে । সিএসআর নামে ব্যাংকিং খাতের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করার কড়াকড়ি নিয়ম চালু হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর স্কলারশীপ নিয়ে গ্রাম-গঞ্জের হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান সূচনা করেন স্কুল ব্যাংকিং। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭,৮৫,৫১৩টি এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ ১,৯৮৬ কোটি টাকা। নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। কুটির শিল্প, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি এসএমই ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এই খাতের বিকাশ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসএমই বিভাগ চালু এবং যুগোপযোগী এসএমই ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। জুন ২০১১ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত ১০,৯৬,৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই ঋণের মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের ৪৫,৮৩৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯২ হাজার নতুন উদ্যোক্তাকে ১,৫৩,৮১৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৭,২২৮ জন নতুন নারী উদ্যোক্তার মাঝে ৫, ১৭৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে অর্থায়নের জন্য ৯টি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু করা রয়েছে এবং এর আওতায় এই পর্যন্ত ৬৫,০১৬টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে ৯,৪৩০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো এভাবে ধীরে ধীরে কম আয়ের মানুষের মধ্যেও আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বিষয়ে আস্থার জায়গা তৈরি করছে। এতে প্রান্তিক মানুষ যেমন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুফল পাচ্ছেন, একইভাবে গোটা অর্থনীতিও ধীরে ধীরে অনানুষ্ঠানিকতা থেকে বেরিয়ে একটি শক্ত সামষ্টিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াচ্ছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে
একথা স্বীকার করতেই হবে, এভাবে শত শত সফল ও সৃজনশীল দেশীয় খাতে অর্থ বিনিয়োগ করায় দেশের আর্থিক সেক্টর সমৃদ্ধ হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চলে আসে ব্যাংকিং সেবায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। ব্যাংকগুলো সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আড়াই হাজার নতুন শাখা খোলে। ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। সার্বিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং সেক্টর, আমানত সংগ্রহ, বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাংলাদেশে নীরব ক্ষুদ্র আর্থিক বিপ্লব ঘটে যায়। যা এর আগে বাংলাদেশে তো নয়ই, বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও ঘটেনি। শুধু কি তাই? সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালি হওয়ায় বাংলাদেম সাবলম্বিতার ক্ষেত্রেও নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অসত্য ধুয়ো তুলে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে অসম্মতি জানানোর পরও নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন তারই প্রমাণ। ফরে বিশ্বব্যাংক সহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিরাও বাংলাদেশকে এখন নতুন ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে।
গল্প-উপকথা নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। মহাকাশে ওড়ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। শিল্প বিপ্লবের দিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো দ্রæত ধাবমান বাংলাদেশ। পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। একদশকে সত্যিই বিস্ময়কর গতিতে বেড়ে চলেছে অর্থনীতির আকার। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫শ কোটি মার্কিন ডলার। বেড়েছে মাথাপিছু আয়ও। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৬৯৩ মার্কিন ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরে হিসেব করলে দেখা যায় ২০০৮-০৯ বছরের ভিত্তিভ‚মিতে তা ছিল ৫.০৫ শতাংশ। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৯২৮ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২২২৭ ডলার। মানুষের প্রকৃত আয়ও বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ করোনা মহামারির মধ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ। সেই বিচারে পৃথিবীর তিনটি দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশের একটির নাম বাংলাদেশ।
নতুন দিনের ঝুঁকি মোকাবেলা করেই এগুতে হবে
আর্থিক সেবা খাতে ডিজিটাইজেশন এবং প্রান্তজনমুখী নীতির ফলে এক দিকে যেমন যুগান্তকারি ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে অন্য দিকে নতুন নতুন ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। সাইবার আক্রমণ এসব নতুন ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান। আন্তর্জাতিক সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ম্যাকাফির জরিপ বলছে ২০২০ সালে বৈশ্বিক জিডিপির ১ শতাংশ (১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) হারিয়েছে সাইবার আক্রমণের কারণে। কাজেই সাইবার আক্রমণ থেকে আর্থিক সেবা খাতকে নিরাপদ রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া চাই। তবে অনলাইন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাইজেশনের পথ থেকে সরে আসা কিংবা এগুলোকে সঙ্কুচিত করা কিন্তু এই সমস্যার সমাধান নয়।
মনে রাখতে হবে ডিজিটাইজেশন প্রান্তিক মানুষের কাছে সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছে তার সুফলের তুলনায় এই সাইবার আক্রমণে হারানো টাকার ক্ষতি অতি সামান্য। কাজেই আমাদেরকে সাইবার আক্রমণ মোকাবেলা করতে হবে যাতে আর্থিক সেবা খাতের ডিজিটাইজেশন বাধাগ্রস্ত না করেই পুরো ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করে তোলা যায়। উন্নত বিশ্ব তাই করছে। সাইবার আক্রমণ মোকাবেলার জন্য ২০২০ সালে ১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। এবং কোথাও ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের গতি কমানো হয়নি। নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, তবে লেনদেন প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশনের গতি অব্যাহত রেখেই তা করা চাই- এই নীতিতেই এগুচ্ছে বর্তমান বিশ্ব।
আশার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকও সে পথেই এগিয়েছে। উত্তর কোরিয়া সমর্থিত হ্যাকার গ্রুপের সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার পরও, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের অন্যান্য কর্তৃপক্ষগুলো ডিজিটাল লেনদেনকে নিরুৎসাহিত করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরং নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ এবং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছে সাইবার অপরাধীদের অর্থ সরানো থামাতে। তাদের সুবিবেচনাভিত্তিক পদক্ষেপের কারণে হ্যাকাররা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। এখন একটি আন্তর্জাতিক মামলা চলছে বাংলাদেশের হারানো টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য (বাংলাদেশ ব্যাংক স্টপ পেমেন্ট অর্ডার দেবার কারণে শুরুতেই ৩৭ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন থেকে ফিরিয়ে আনা গেছে)। ইতিহাস বলে হ্যাক হয়ে যাওয়া টাকার একাংশ কোন দেশই ফেরত আনতে পারেনি। হ্যাক হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারের প্রটোকলটিই এমন যে এ নিয়ে হইচই না করে গোপনীয়তা অবলম্বনকরে সতর্কভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাই করেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলাটি বাংলাদেশের পক্ষেই এগুচ্ছে । তবে দুঃখের বিষয় এই যে, দেশের ভেতরেই কিছু ব্যক্তি বুঝে বা না-বুঝে এই সাইবার আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে তথা পুরো আর্থিক খাতের ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়াকে অযথা দোষারোপ করে যাচ্ছেন। এতে করে এক দিকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চলে যাওয়া টাকা পুনরুদ্ধারে করা মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোবল ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ব্যাংকিং খাতটি পুরোপুরিই বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল একটি খাত। গ্রাহকদের আস্থার জায়গাটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় বিপর্যয় এড়ানো কঠিন। কাজেই ভিত্তিহীন গুজব কিংবা নিছক পাঠকপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ভুল খবর প্রকাশ ও প্রচারে শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীদের পাড় পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। তবে আশার কথা মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণই করছে।
উন্নয়নমুখী ব্যাংকিং এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশকে
মিথ্যা ভিত্তিহীন গুজব, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি মোকাবেলা করেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ ও দেশের ব্যাংকিং খাত। নির্দ্ধিধায় বলা যায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নীতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনেই শুধু নয়, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় নিঃসন্দেহে বড় অবদান রেখে চলেছে। এমন কথাই বলেছেন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক ডেপুটি গভর্নর- হাওয়ার্ড ডেভিস। ‘পুট সেন্ট্রাল ব্যাংকার্স ইন দেয়ার প্লেস’ শিরোনামে সম্প্রতি প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি যথার্থই বলেছেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সমাজ প্রকৌশলীর কাজ করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে টাকা জোগান দেওয়া ছাড়া আর কিছু কি করতে পারে না? কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি আর্থিক রেগুলেটর হয়, তবে তো আর্থিক অন্তর্ভূক্তি এবং আয়বৃদ্ধিমূলক কাজের মাধ্যমে আর্থিক বৈষম্য ঘুচানোর কাজ করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর্থিক শিক্ষা-স্বাক্ষরতা বাড়ানোর কাজে প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও এসব কাজের ফলাফল পেতে এক দশক সময় লেগে যায়।” সত্যিই, মাত্র এক দশক সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতিতে জড়িয়ে রয়েছে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি। উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভূক্তি নামক উন্নয়ন নীতি কৌশল। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতের অর্থনীতি গত বছর বছর ৭.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। পক্ষান্তরে একই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই বছর যখন ভারত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত, তখন (১৮ মে ২০২১) বাংলাদেশ দিল্লিতে হাজার হাজার বাক্স জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী ত্রাণ হিসেবে পাঠিয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ আগে, ভারতে ১০ হাজার রেমডেসিভির ভায়াল ত্রাণ হিসাবে পাঠিয়েছিল ঢাকা। আর্থিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এই করোনা মহামারিকালে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে জায়ান্ট প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ এত দ্রুত আয়ের ব্যবধান কমিয়ে এনেছে, যা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক দক্ষতার এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে উপস্থাপন করেছে।
মহামারিকালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রধানতম অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহন করছে। এমনটি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে বড় আকারের রিজার্ভের কারণেই। শুধু কি তাই? করোনার মধ্যেই গত ২৫ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার জন্য ২০ কোটি ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তি অনুমোদন দেয়। গত মাসে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪শ কোটি ডলারে নেমে যায়। ঋণদাতাদের দেনা পরিশোধ করে এবং করোনাভাইরাসের অভিঘাতে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে দেশটির অর্থনীতি। নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ের সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মহেশখালির মাতারবাড়িতে জাপানি বিনিয়োগ কয়লা বিদ্যুৎ, এলএনজি টার্মিনালসহ মেট্রোরেল এবং ভারত ও অন্যান্য সহায়তায় রেল-নদী-সড়ক প্রকল্পগুলো চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ‘ডাবল ডিজিট’ অতিক্রম করে যাবে। বাংলাদেশ এই শক্তিমত্তা দেখাতে পারছে কারণ আমাদের আছে ব্যাপক ম্যাক্রোঅর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, যার পেছনে কাজ করেছে বিপুল রিজার্ভ, নিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, এবং বিনিময় হারের ভারসাম্য। আর এভাবেই বাংলাদেশে উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকার কারণেই আমাদের টেকসই উন্নয়নের শক্তিশালি ভিত্তি তৈরি হচ্ছে।
ইওরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং আইএমএফ-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড বলেছেন- “আর্থিক খাতকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে করে এর গতিপথের সাথে বৃহত্তর সামাজিক মূল্যবোধের একটি সাজুয্য রক্ষা করা যায় এবং এর মাধ্যমে যেন গ্রাহক, কর্মী, শেয়ারহোল্ডার, স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে পরবর্তি প্রজন্ম পর্যন্ত সকল অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।” গত ১০-১২ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক এ কাজটিই করে দেখিয়েছে। তবে সামনে আরও পথ বাকি। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ও তারপর আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই উন্নয়নমুখী নীতি ও কর্মসূচিগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
লেখক : গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/এএসএম