স্বপ্নচারী জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ জয়
মো. শাহ জালাল মিশুক
ঐতিহাসিকভাবেই যুগে যুগে বাঙালি তারুণ্যের মতো স্বর্ণালি-প্রজন্ম পৃথিবীতে খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক হয়ে আছে আমাদের একেকটি প্রজন্ম। বাংলার সেই তরুণ প্রজন্মের অহঙ্কার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫১তম জন্মদিন আজ।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল, ‘২০২১ সালের মধ্যে দেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ’। আইটি খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই বাক্যের মধ্যেই নির্ধারিত হয়ে যায় ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প। যে রূপকল্প বাস্তবে রূপ দিতে পরবর্তীতে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলার দায়িত্ব নিলেন, তখন দেশের মাত্র ২ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন ছিল। অথচ এখন কমপক্ষে ১২ কোটির বেশি বাংলাদেশির হাতে মোবাইল এবং লাখ লাখ মানুষের কাছে আছে উচ্চগতির ইন্টারনেট, এমনকি রয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। পাশাপাশি সরকার ৮৫০০ ডিজিটাল সেন্টারের একটি নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে, যার মাধ্যমে জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সব ধরনের সেবা অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হলো, সরকারি শতকরা ৮৫ সেবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া। শতকরা ১০ শতাংশ সেবা যাবে তাদের ঘরের দরজায়।
বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক তথ্য সাধারণ নাগরিকদের মোবাইলের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ দেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে বেশ প্রশংসিত। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের তৈরি ডিজিটাল প্লাটফর্ম আলাপ ও বৈঠক, এই করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি মিটিংয়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দাফতরিক কাজ সম্পাদনের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে চালু করা হয়েছে টোল-ফ্রি জাতীয় জরুরি সেবা হেল্পলাইন ৯৯৯ দুর্ঘটনা, সাইবারক্রাইমসহ যেকোনো অপরাধ, নারী সহিংসতা, অগ্নিকাণ্ড এবং জরুরি চিকিৎসা সেবায় নাগরিকরা এটি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে টেলিমেডিসিন এখন শুধু সম্ভবই নয়, মহামারি পরিস্থিতিতে একটি সাধারণ বিষয়, বিশেষ করে অনগ্রসর গ্রামীণ এলাকায়। সব মিলে সরকারি হিসেবে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবা থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছেন। এছাড়া সাশ্রয় হচ্ছে ২০০ কোটি ঘণ্টা সময়, ৮০০ কোটি ডলার এবং সরকারি অফিসে ১০০ কোটি বার যাওয়া আসা।
এসব ডিজিটালাইজেশনের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বাংলার তথ্যপ্রযুক্তির বরপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হব সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয়কে শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার পরই শুরু হয় বাংলাদেশের মহাকাশে পদার্পণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের যাত্রা। জাতির পিতা গাজীপুরের বেতবুনিয়া কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে মহাকাশ গবেষণার যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন তারই সফল বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের এমন অভিজাত ক্লাবের সদস্য যেখানে মাত্র ৫৬টি দেশের অবস্থান। এভাবেই স্বপ্নচারী সজীব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের আদর্শিক প্রতিশ্রুতি আর অদম্য তৎপরতায় ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট -২০১৬’ অর্জন করেন। পাশাপাশি সরকারের ক্রমাগত নীতি সহায়তা ও জনগণের দোরগোড়ায় মোবাইলভিত্তিক প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করার কারণে এম-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে দৃশ্যমান প্রয়াস তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হলো ‘Global Mobile Government Award 2017’.
বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম কীভাবে ডিজিটাল ও গবেষণানির্ভর করা যায়, যা দ্বারা কেন্দ্র থেকে রুট লেভেলের দলীয় কার্যক্রমের সাথে সাথে দেশের মানুষের সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা প্রদান করা যায় সেটা দেখিয়ে দিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। কারণ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান তিনি। তরুণদের নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হল ইয়াং বাংলা। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর বর্তমান সময়ে দেশে তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা। দেশ গঠনে তরুণদের কাজের স্বীকৃতি দিতে ইয়াং বাংলা দিয়ে আসছে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’। পাশাপাশি তার অনুপ্রেরণায় তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্ভূদ্ধ করতে এই ইয়াং বাংলা প্রতি বছর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপনে আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজন করছে জয় বাংলা কনসার্ট।
আমরা প্রত্যেকেই স্বপ্নচারী। আমাদের মতো সজীব ওয়াজেদ জয়ও একজন স্বপ্নচারী মানুষ। তিনি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। আমাদের অনেকের চেয়ে তিনি যে কারণে আলাদা সেটি হলো তিনি শুধু স্বপ্ন দেখেননি, সেই স্বপ্ন অন্যকে দেখাতেও পারেন, সেই স্বপ্নকে আমাদের হাতের মুঠোয় দিয়ে দিতে পারেন। বলা যায়, তিনি একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তার নেতৃত্বে সোনার বাংলা থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ইতিবাচক সব আশাবাদ গভীর আত্মপ্রত্যয় আমাদের স্বপ্নবীজকে মহীরুহতে পরিণত করবে। স্বপ্নচারী এই মানুষটির জন্মদিনে রইলো শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলাম লেখক।
এইচঅার/এমএস