মডেল মসজিদ নির্মাণ : শেখ হাসিনার অনন্য দৃষ্টান্ত
ইমরান হুসাইন
মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর ও মুসলিমদের প্রাণকেন্দ্র এবং তা প্রত্যেক মুসলমানের নিকট অত্যন্ত প্রিয়। ইসলামে মসজিদ নির্মাণ এবং মসজিদ সংরক্ষণের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (স.) এমন কথাও বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর নির্মাণ করে দিবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তথা মসজিদ স্থাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব পরিকল্পনায় এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৫০টি মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যা গত বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এই সুবিশাল মসজিদ তৈরির পিছনে লুকিয়ে আছে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ যা বাংলাদেশ ও মুসলমানদের জন্য অনেক ভালো একটা দিক। একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী, হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর-দালালরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে মহান মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড, জুলুম নির্যাতন অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নির্মমতাকে ইসলামের নামে সমর্থন ও সহযোগিতা করে পবিত্র ইসলামকে তারা বিতর্কিত করে তোলে। শান্তির ধর্ম ইসলামের শাশ্বত রূপ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যথাযথভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরা একান্ত অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় ইসলামের প্রকৃত রূপ জনগণের মাঝে তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনুধাবন করেছিলেন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা, ভ্রাতৃত্ববোধ, পরমতসহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধের মত মৌলিক গুণাবলী ও এর বাণী প্রচার-প্রসার দরকার। তেমনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ইসলামি মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বাস্তবায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়নও প্রয়োজন। আর এজন্য প্রয়োজন একটি অভিন্ন প্লাটফর্ম। যার মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত ইতিহাস, দর্শন, আইন, সংস্কৃতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ সকল মৌলিক উদ্দেশেই বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫-এর মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রতিফলন রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। যার ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মডেল মসজিদ তৈরির পিছে আছে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা। যা ইসলাম বা মুসলিমদের জন্য সুখকর বার্তা বয়ে আনবে।
১. বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫-এর বাস্তবায়ন। দেশব্যাপী মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশে শক্তিশালী ইসলামি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।
২. প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্মাণ করে সারাদেশে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও প্রকৃত মূল্যবোধের প্রচার ও দীক্ষাদান।
৩. সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৪. পুরুষ-নারী মুসল্লিদের জন্য নামাজ, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত সুবিধাদি সৃষ্টি করা।
৫. সর্বোপরি ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসার করা এবং সততা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আনুগত্য সমর্থন সৃষ্টি করা।
সারাদেশে তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এগুলো নির্মাণাধীন রয়েছে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায়। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার। ১৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার আয়তনের ‘বি’ ক্যাটারির মসজিদ হবে ৪৭৫টি। এগুলো নির্মিত হচ্ছে সকল উপজেলায়। আর ২০৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার আয়তনের ‘সি’ ক্যাটাগরির মসজিদ হবে ১৬টি উপকূলীয় এলাকায়।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরদিকে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। এসব মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এছাড়া লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক এক সঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন। মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামি নানা বিষয়সহ প্রতিবছর এক লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। দুই হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।
সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য এতগুলো মডেল মসজিদ এক বিরল ঘটনা। ইতিহাস হয়ে থাকবে শেখ হাসিনার এই কৃতিত্ব ও মুসলমানদের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসার কথা। শুধু এই মসজিদ নির্মাণই শেষ নয়। এর আগেও মুসলমানদের প্রতি ভালোবাসা এবং ইসলামের শান্তির বার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, আলিয়া মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অন্যতম। মুসলমানদের জন্য এই যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করার পর সর্বশেষ বর্তমান সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাহা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ধর্মীয় দিক থেকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। যেখানে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এটি সম্পন্ন করছেন। তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,যিনি সারাক্ষণ দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বদা কাজ করে চলেছেন। করোনার এই মহামারিতেও সকল বাধা অতিক্রম করে মানবতার সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে যিনি ধীরে ধীরে বাস্তবে রুপদান করে চলেছেন। দেশের এই সংকটকালীন সময়েও তার দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে দেশ। একের পর এক উন্নয়নের নতুন চমক আমাদের সামনে আসছে।
ক্ষমতার উচ্চ আসনে অবস্থান করেও যিনি দেশের গরীব-দুখী ও খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবেন ও তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হলেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মানবিকতার ছোয়া দেশ ছাড়িয়ে বৈশ্বিক পর্যায়েও স্থান করে নিয়েছে। এবং সারাদেশে একসাথে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এতগুলো মসজিদ নির্মাণ ও নানা রকম সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্র ইসলামকে আরো এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। ইতিহাস হয়ে থাকবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই মডেল মসজিদ নির্মাণের কৃতিত্ব।
লেখক : শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস