ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ধাপে ধাপে খোলা যেতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ০৫ জুন ২০২১

ড. মো. হাসিনুর রহমান খান

করোনার মত যেকোনো অতি সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকানোর অন্যতম হাতিয়ার হল স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা| কোনো সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা একেবারেই কঠিন একটি কাজ হয়ে দাঁড়ায় বা যেটি পালন করা ক্ষেত্রবিশেষে একেবারেই সম্ভব হয় না| ফলে সংক্রামক রোগের যেকোনো মহামারির সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়| আবার যথাসময়ে বন্ধ করে না দেওয়া হলে এর সুফল একেবারেই আসেনা যেটা ইতিমধ্যে অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে|

যেকোনো মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নতুন কিছু নয়| আমেরিকার ৪৩ টি অঙ্গরাজ্যের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল চার সপ্তাহের জন্য ১৯১৮-১৯১৯ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মোকাবিলার ক্ষেত্রে| ১৯৫৭-১৯৫৮ সালের এশিয়ান ফ্লু মহামারীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়ে প্রায় ৯০% মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল| আমেরিকায় চলমান ২০০৪-২০০৫ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল ৫০%, স্কুল গুলো যথাসময়ে বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে| গবেষণায় দেখা গেছে যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে গড়পরতায় ইনফ্লুয়েঞ্জার ঠেকানো সম্ভব হয় ২৯ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত| এছাড়াও দেরিতে মহামারির পিক পেতে সহায়তা করার জন্য যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বিকল্প নেই| যেমন ২০০৯ সালের এইচ ওয়ান এন ওয়ান মহামারির পিক দেরিতে পাওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজে লেগেছিল| দারুন সংক্রামক করোনা মহামারির ক্ষেত্রে উপরের সব সুফল পেতে মরিয়া হয়ে অধিকাংশ দেশ কোনো না কোনো এক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়|

ভয়াল করোনা অতিমারির প্রভাব জাতি-ধর্ম-বর্ণ স্থান কাল পাত্র ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সর্বক্ষেত্রে পড়েছে| স্বাস্থ্য খাতের পর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীবন-জীবিকা বা অর্থনীতির খাত| এরপরে সবচেয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার যে খাত হয়েছে তা হল শিক্ষা খাত| জাতির ভবিষ্যৎ এর মূল হাতিয়ার আজ সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত দেশে দেশে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে| শিক্ষা খাতের স্থবিরতা যখন ব্যক্তি পরিবার ও রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বকে গ্রাস করেছে, তখন প্রশ্ন আর কতদিন এই রাহুগ্রাসের শৃংখলে আবদ্ধ থাকব আমরা| এ থেকে কি মুক্তির উপায় নেই? মুক্তির উপায় কি শুধুই করোনা মহামারীর অবসান হওয়া বা সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা? নাকি ঝুঁকি নিয়েও করোনা মহামারী প্রকোপের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া? নাকি অন্য কিছু- যা খুঁজে পেতে দরকার গবেষণার দ্বারস্থ হওয়া|

এমন নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের মধ্যে| এসব প্রশ্নের উদ্রেক হলেও কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা না থাকায় জন্ম নিচ্ছে ক্ষোভের, হতাশার, অস্থিরতার আর অসহিষ্ণুতার| দিন দিন তা বেড়েই চলেছে| আমাদের মত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষগুলো কি শিক্ষার এই বেহাল দশার জন্য একই রকমভাবে হতাশায় ভুগছে? তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি আমাদের মত দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ নাকি খোলা রয়েছে? খোলা রাখলে কিভাবে রাখছে? ব্যক্তিগতভাবে আমি এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছি এবং এই লেখায় তার প্রতিফলন দেওয়ার চেষ্টা করেছি|

করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সূচনা হয় চীনের হাত ধরে গত বছরের ২৬ জানুয়ারিতে| এরপর এক মাসেরও বেশি সময় পর চৌঠা মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় প্রায় ২২ টি দেশ| দশই মার্চের মধ্যে আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, যেখানে বিশ্বের প্রতি ৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়| ১৯ শে মার্চের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং ২০ শে মার্চের মধ্যে সেটি ৭০ শতাংশ গিয়ে দাঁড়ায়| মার্চের শেষে সেটি ৯০% গিয়ে উপনীত হয়| মধ্য এপ্রিলের মধ্যে ১৯২ দেশের ১৭৪ কোটি শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৯৯%|

১১ ই মার্চ ২০২০ থেকে দোসরা ফেব্রুয়ারি ২০২১ সময়ে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের প্রাথমিক হতে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ ছিল গড়ে ৯৫ দিন, আংশিকভাবে বন্ধ ছিল ৬২ দিন, আর পুরোপুরি খোলা ছিল ৩৭ দিন| গড়ে সবচেয়ে বেশি ১৫৮ দিন বন্ধ ছিল ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোতে| দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বন্ধ ছিল ১৪৬ দিন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে| নর্থ আমেরিকার দেশগুলিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে খোলা বা বন্ধ ছিল না একদিনও তবে আংশিকভাবে বন্ধ ছিল ১৯২ দিন যা ছিল সর্বোচ্চ এতদ অঞ্চল গুলির মধ্যে| পুরোপুরি খোলার দিক থেকে এগিয়ে ছিল সব সময় পশ্চিম ইউরোপের দেশ গুলি যেখানে গড়ে খোলা ছিল ৮৭ দিন| এরপরে আশ্চর্যজনকভাবে রয়েছে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশ গুলি যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে পুরোপুরি খোলা ছিল ৬৪ দিন| অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলিতে পুরোপুরি খোলা ছিল গড়ে মাত্র ৬ দিন|

এবার আসি দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে কি চিত্র বিদ্যমান ছিল তা বুঝতে| বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে গড়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল ১৪৬ দিন| সম্পূর্ণভাবে খোলা ছিল গড়ে মাত্র ১৯ দিন তবে আংশিকভাবে খোলা ছিল গড়ে ৪৩ দিন| এই অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ১৯৮ দিন বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা সর্বনিম্ন ১১২ দিন ছিল পাকিস্তানে| শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান প্রত্যেকে পুরোপুরি খোলা রাখতে পেরেছিল ৪২ দিন| অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভারত নেপাল এক দিনও খোলা রাখতে পারেনি| এমনকি আংশিকভাবে খোলা রাখতে একদিনও পারেনি বাংলাদেশ যেখানে বাকি দেশগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় (২৫-৮৯ দিন) আংশিকভাবে খোলা রাখতে পেরেছিল|

বাংলাদেশ বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে করোনা হানা দেয় মূলত গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে| বাংলাদেশে যেটি হানা দেয় আরো ২০-২৫ দিন পরে, ৮ ই মার্চে| এতদসত্ত্বেও এই অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা বা আংশিকভাবে খোলা রাখার রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে গেল এ প্রশ্ন সবার| জনসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম সারির ১০ টি দেশের মধ্যে একটি| এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২৫৩ জনেরও বেশি লোক বসবাস করে| জনসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোন দেশ বাংলাদেশের ধারের কাছে নেই| করোনার মত সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তার এর সাথে জনসংখ্যার ঘনত্বের একটা সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে| আর এই সম্পর্কের অজুহাতের কারণে সরকার সম্ভবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কিংবা আংশিক ভাবে হলেও খুলে দিতে পারেনি| তবে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ঘনত্বের দেশ মাল্টা আবার ঠিকই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পেরেছিল|

সর্বশেষ ১৫ ই মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় ১৯৪ টি দেশের মধ্যে স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল ৫৭ টি দেশে, আংশিকভাবে এবং সিজনাল বন্ধের কারণে বন্ধ ছিল ১৬ টি দেশে, সম্পূর্ণভাবে খোলা ছিল ২৬ টি দেশে, এবং আংশিকভাবে খোলা ছিল ৯৫ টি দেশে| যে ২৬ টি দেশ সম্পূর্ণভাবে খোলা রেখেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফিজি, টঙ্গ, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, কেনিয়া, মালটা, হাইতি, বারমুডা, সুইডেন, বাহারাইন এবং উজবেকিস্তান| এই ৯৫ টি দেশের অধিকাংশ দেশ গত বছরের জুলাই হতে নভেম্বরের মধ্যেই তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে খুলতে সক্ষম হয়েছিল| অনেকে আবার পুনরায় স্কুল বন্ধ দিয়ে এরই মধ্যে দ্বিতীয় তৃতীয় বারের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছিল| আংশিকভাবে খোলা রেখেছিল মূলত মধ্য আফ্রিকা, মধ্য ইউরোপ ও মধ্যে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলি|

যে ৫৭ টি দেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফিলিপাইন, বুলগেরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইউক্রেন, গ্রীস, সুদান, সেনেগাল, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, মিশর, জর্ডান, জার্মানি, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, নেপাল, নামিবিয়া, উগান্ডা, যুক্তরাজ্য, ভারত, জিম্বাবুয়ে এবং মিয়ানমার| তবে এরই মধ্যে অনেকগুলো দেশ টিকা দানের মাধ্যমে করোনার প্রকোপ কমে আসায় স্কুলগুলোকে খুলে দিয়েছে যেমন ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য, জার্মানি| অন্যদিকে আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ায় পুনরায় সাময়িকভাবে স্কুলগুলোকে বন্ধ করেছে কিছু কিছু দেশ|

যে দেশ গুলি আংশিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছিল তাদের অধিকাংশ দেশ স্কুলের প্রতিটি স্তরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও আলাদা আলাদা স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য নিয়ম বিধি সম্মিলিত গাইডলাইন বা প্রটোকল তৈরি করেছে| যার মধ্যে রয়েছে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা, টিফিন বা লাঞ্চ কোথায় কিভাবে করবে, সপ্তাহের কোন কোন দিন কোন কোন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হবে, সপ্তাহে কতদিন স্কুলে ও কতদিন অনলাইনে ক্লাস করতে হবে, স্কুলে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবহারের ব্যাপারে নির্দেশনা, কারা কবে কিভাবে টিকা পাবে, কিভাবে লাইব্রেরি ব্যবহার করবে, করোনার লক্ষণ দেখা দিলে কিভাবে কোথায় পরামর্শ, রাপিড টেস্ট বা চিকিৎসা নিতে হবে, কতদিন পর করোনা টেস্ট করাতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শ ও চিকিৎসা কিভাবে নিতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর শারীরিক দূরত্ব কিভাবে এবং কতটুকু বজায় রাখতে হবে ইত্যাদি| শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শিক্ষার সাথে যুক্ত সবাইকে এই প্রটোকল মেনে চলতে হয়|

করোনার প্রকোপ উচ্চ হতে নিম্ন মাত্রা অনুযায়ী ইতালিতে রেড, ইয়েলো এবং অরেঞ্জ অঞ্চলে ভাগ করে ইয়েলো এবং অরেঞ্জ অঞ্চলে স্কুলগুলোকে শর্তহীন বা শর্তসাপেক্ষে খুলে দিয়েছে| এই অঞ্চলগুলো রেড অঞ্চলে পরিণত হলে পরক্ষণেই আবার স্কুল গুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে| যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ এই পদ্ধতিতে স্কুল খুলে দিয়েছে| জার্মানিতে ব্লেন্ডডেট পদ্ধতিতে অর্থাৎ একদিন শ্রেণিকক্ষে পরের দিন অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে| যুক্তরাজ্যে অন্যান্য শ্রেণীর বাইরে শুধুমাত্র নার্সারি এবং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতা মূলক নয়| আউটডোর খেলাধুলার সুযোগও করে দিয়েছে| মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর প্রতি সপ্তাহে দুইবার করোনা টেস্ট করাতে হবে| স্টাফদের কেউ নিয়মমাফিক করোনা টেস্ট করাতে হয়| অস্ট্রেলিয়াতে প্রথমদিকে স্কুল গুলি বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে খুলে দেওয়া হয়| করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলস এর স্কুলে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে স্কুল গুলি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে কিছুদিন পর আবার খুলে যায়|

সুইডেন হল ইউরোপের এমন একটি দেশ যেখানে কখনো করোনা কালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি| পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল শুরু থেকে তবে কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হলে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকত| কাতার কখনোই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি এবছরের ১৫ ই মার্চ পর্যন্ত তবে করোনার প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে গেলে এপ্রিলের ৪ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়| সংযুক্ত আরব আমিরাত করোনা মহামারির কারণে কখনো শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত হতে দেয়নি, করোনা মহামারির বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও ক্লাস অনলাইনে চলেছিল| এরকম ১২১ টি দেশ রয়েছে যাদের করোনা মহামারির অবসান না হলেও কিছুটা ঝুঁকি বা মাঝারি ঝুঁকি কিংবা কখনো কখনো বেশি ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষের ক্লাস চালিয়ে গেছে, বা অনলাইন এবং শ্রেণিকক্ষের ক্লাস যৌথভাবে চালিয়ে গেছে|

জনসংখ্যার ঘনত্বের আধিক্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার চর্চা, স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের টিকার অনিশ্চয়তা থাকা, শিক্ষার সাথে যুক্ত সবাইকে টিকার আওতায় দ্রুত নিয়ে আসার কম বা বিলম্বিত সম্ভাবনা থাকা ইত্যাদি কারণে যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিকভাবে আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে সাহস দেখানো যে কারো পক্ষে কঠিন বৈকি| অদূর ভবিষ্যতে করোনা মহামারির অবসান হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে সাধিত ক্ষতি এবং করোনা মহামারির ঝুঁকি এই দুটোর ট্রেড অফ পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সাহস দেখাতে হবে| করোনা মহামারির প্রকোপ এর ভিত্তিতে বিভিন্ন জোন করে ব্লেন্ডেড বা মিক্সড (শ্রেণিকক্ষ এবং অনলাইন) পদ্ধতিতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ধাপে ধাপে বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া সর্বোচ্চ উত্তম সিদ্ধান্ত হবে|

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান আই এস আর টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, আই এস আর টি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাহী কমিটি।

এইচআর/জেআইএম