ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বজ্রপাতে অকাল মৃত্যু আর নয়

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ২৭ মে ২০২১

গোপাল অধিকারী

যতই দিন যাচ্ছে প্রকৃতি যেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে। বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে লক্ষ্য করা যায় যে, বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অতীতের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই বৃদ্ধি জলবায়ুগত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের ফল তা সহজেই বলা যায়।

১১ মে রাজশাহী বিভাগে বজ্রপাতে পাঁচ কৃষকসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ মে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর ৪ মে সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে বজ্রপাতে একদিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কিন্তু কম শঙ্কার নয়। প্রতিনিয়ত প্রতিবেদন হওয়ার পরও এমন মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। সচেতনতা না বাড়লে বাড়বে মৃত্যুর ঝুঁকি।

গতবছর থেকে দেশে বজ্রপাতের ভয়ঙ্কর রুপ দেখা দিয়েছে। সাধারণত এপ্রিল মাসকে বজ্রপাত শুরুর মাস হিসাবে ধরা হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বজ্রপাত হয়। কিন্তু গতবছর এপ্রিল মাসের ভয়ঙ্কর রুপ নিয়েছিল বজ্রপাত। গতবছর এপ্রিলে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে কমপক্ষে ৮৩ জন। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত এক দশকে (২০১০ থেকে ২০১৯ সাল) দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৮১ জন। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৬ সালে চার দিনে ৮১ জনের প্রাণহানির পর নড়েচড়ে বসে সরকার। সে বছরই বজ্রপাতকে দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। তাপমাত্রা গড়ে এক ডিগ্রি বেড়ে গেলে বজ্রপাত ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বজ্রপাত বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো নিরাপদ জায়গায় থাকতে হবে। বজ্রপাতে মুত্যুর প্রতিবেদনে দেখা যায় অনিরাপদ স্থানে থাকার কারণেই অকালে প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। বজ্রপাতকে গুরুত্বহীন মনে করার কোন কারণ নেই। কারণ দিনের পর দিন প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এই বজ্রপাত। বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের সম্যকজ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থান অর্থাৎ উঁচু গাছ, ইলেকট্রিক পোল, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি এরূপ বস্তুর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা যে স্থান বা বস্তু যত উঁচু সে স্থান মেঘের তত সন্নিকটে থাকায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা তত বেশি। মৌসুমে ঘনকালো (ঝড়মেঘ) মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনো ধাতববস্তুর স্পর্শ থেকে বিরত থাকা বেশি নিরাপদ।

এককথায় বিদ্যুৎ পরিবাহী যে কোনো বস্তুর স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় থাকলে বজ্রপাত হওয়ার সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে বসে থাকতে হবে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে গাড়ির ধাতব কোনো অংশের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। বজ্রপাতপৃষ্ট আহত ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণে বিচলিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

বজ্রপাতে মৃত্যু একটি পরিবারের স্বপ্নকে অকালেই ভেঙে দিচ্ছে। তাই সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা চালনার মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে পঠিত বিষয় হিসেবে সংযুক্ত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়। কারণ বজ্রপাত সম্পর্কে জানা এবং করণীয় সম্পর্কে সচেতনতাই পারে বজ্রপাতের হাত থেকে জানমাল রক্ষা করতে। বজ্রপাতে অকাল মৃত্যু বন্ধ হোক। সচেতন হই শ্লোগান ধরি, “বজ্রপাতে অকাল মৃত্যু আর নয়, আর নয়।”

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/এএসএম