ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

স্বাস্থ্যসেবায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে

অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ | প্রকাশিত: ০৯:২০ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০২১

আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আন্তজার্তিকভাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে দেশে দেশে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হবে দিনটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়, এর কারণ হচ্ছে জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’’ এর জন্মদিন ৭ এপ্রিল ১৯৪৮। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার ২ মাস পর ২৪ জুন ১৯৪৮ সালে এই সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। সেই সময় সারা বিশ্বের ৪৬ টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল“নো ইউর হেলথ সার্ভিসেস” যার অর্থ “নিজের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন হোন”। এভাবে ৭০ বছর ধরে ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে “বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস” । প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় উক্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজের সাথে সম্পৃক্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

এবারের বিশ্ব গত এক বছরের ও বেশি সময় ধরে কোভিড-১৯ নামক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে সকল সেক্টরেই কঠোরভাবে আঘাত করেছে এই প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১২ কোটি ৪৫ লক্ষাধিক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২৭ লক্ষাধিক মানুষ এই প্রাণঘাতি ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন।

২০২১ সালের ৭ এপ্রিল এবারের প্রতিপাদ্য “একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়”। আমরা বর্তমানে একটি অসম পৃথিবীতে বসবাস করছি। যেখানে কিছু লোক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছে, অন্যদের তুলনায় মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবায় বেশি সুযোগ পাচ্ছে, কাজের ক্ষেত্রে- বসবাসের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। অপরদিকে সারা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দৈনিক আয়ের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছে জীবনের সাথে, আবাসন সংকট প্রকট এবং সুশিক্ষার ক্ষেত্রে সীমিত সুযোগ পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব, বৃহত্তর লিঙ্গ বৈষম্য, নিরাপদ পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানি- নির্মল বায়ু ও নিরাপদ খাদ্য সংকট এবং সংকটাপন্ন স্বাস্থ্য পরিসেবা। এই সকল বিষয়গুলো আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতিকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই সমস্যা গুলোর প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রার মান উন্নতকরণে, সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব নেতাদেরকে বদ্ধপরিকর হতে হবে।

কোভিড-১৯ এ বিগত সারা বছরে বিপর্যস্ত বিশ্বে আমরা প্রকট শ্রেণি বৈষম্য দেখছি। কোভিড-১৯ থেকে মুক্তির জন্য যেখানে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হয়ে কাজ করার কথা ছিল সেখানে আমরা দেখেছি পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্যদেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কতটা সংকীর্ণ আচরণ করতে পারে যা মানবজাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর এবং দুঃখজনক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রম সমান গুরুত্ব দিয়ে সকলের জন্য সমান সুযোগ রেখে পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। আমাদের বিশ্ব নেতাদের এখন সময় এসেছে অতীতকে নিয়ে ভাবার এবং একত্রে কাজ করার।

একসাথে কাজ করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবার অসম্পূর্ণ দিক গুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে। সমাধানগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় এবং মানুষের সাথে একত্রে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে নির্ভরযোগ্য তথ্য/ডাটা সংগ্রহ করা। সময়োপযোগী এবং নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য এমনভাবে সংগ্রহ করতে হবে যেন লিঙ্গ, বয়স, উপার্জন, শিক্ষা, মাইগ্রেশনের স্থিতিশীলতা, অক্ষমতা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতীয় প্রসঙ্গ ইত্যাদি পৃথকভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রাধান্য পায়। কেবলমাত্র তখনই বিশ্ব জনসংখ্যার উপগোষ্ঠীগুলোতে অসম্পূর্ণতাগুলো মূল্যায়ন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

অসমতার মূল কারণগুলো মোকাবেলায় এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি সাহায্য সহযোগিতার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সবার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং আগামকালীন স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য আজকের দিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা খুবই জরুরি।

জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে স্বাস্থ্য সেবায় আইনের প্রয়োগ হতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কেবলমাত্র যখন আমরা দেশের সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বব্যাপী সুরক্ষা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারবো তখনই কেবলমাত্র কোভিড-১৯ মহামারিকে শেষ করা সম্ভব হবে। ভ্যাকসিন, পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ন্যায়সঙ্গত সরবরাহের আশ্বাস প্রদানের পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রত্রিæয়াগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবায় সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।

“করোনা মুক্ত বিশ্ব, অসমতা বিহীন মানবিক সমাজ আমরা গড়বো” এই হোক ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/জেআইএম