ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিশেষ সম্পর্কের সবুজায়ন

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২১

র‌্যাচেল কেট, এনা টনি, বার্নিস লি

কপ-২৬, জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন যা চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের জন্য এ সম্মেলন একটা সুযোগ হিসেবেই দেখছেন তারা। এ সম্মেলন ব্রেক্সিটের পর বিশ্বের কাছে ব্রিটেনের অবস্থান প্রদর্শনের সুযোগ। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য এটা প্রাথমিক পরীক্ষা যে তার প্রশাসনের জলবায়ু ইস্যুতে দেশ এবং দেশের বাইরে তাদের দক্ষতা কতটুকু। যদিও এর মাধ্যমে উচ্চতর অংশীদার হওয়া সম্ভব নয়।

২০২১ সালেই বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক নানা সমস্যা নিয়ে অন্তত সাতবার মিলিত হবেন। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারির ফলে আর্থিক ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি। সব আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে একটাই প্রশ্ন। কীভাবে আমরা একজন আরেকজন থেকে অর্থনীতি এবং সমাজকে রক্ষা করতে পারি। এই গ্রহকে কীভাবে সুরক্ষা দিতে পারি।

যদিও ওভাল অফিসে উইনস্টন চার্চিলের আবক্ষ মূর্তি আর প্রদর্শিত হচ্ছে না, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিকে পুনরায় সচল করতে যৌথ নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবি। চার বছর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে, এখন বাইডেন প্রশাসন দেশকে সেই পুরোনো জায়গায় ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু ঐক্য ফিরিয়ে আনা ছিল খুবই সহজ। কার্বন নিরসনের জন্য এই মধ্য শতাব্দীতে কোনো পরিকল্পনা দেওয়াটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সৌভাগ্যক্রমে জো বাইডেন এবং তার জলবায়ু প্রধান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি অনুধাবন করেছেন যে, বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অবশ্যই ঘরোয়াভাবে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। কেরির উচ্চ মানসিক গুণমান, দায়িত্বের ক্ষেত্র এবং হোয়াইট হাউসে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপস্থিতিতে বোঝা যায় জলবায়ু ইস্যুতে প্রশাসন কতটা আন্তরিক। তিনি ২২ এপ্রিলের মধ্যে একটি নতুন জলবায়ু পরিকল্পনা প্রদান করতে প্রতিজ্ঞতাবদ্ধ।

জলবায়ু নিয়ে কাজের এ গুরুত্বপূর্ণ বছরে বিশ্ব নেতারা তাকিয়ে থাকবেন এই দেখতে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কী লক্ষ্য নির্ধারণ করছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটা নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ প্রয়োজন। গ্রিন হাউস গ্যাস অন্তত ৫০ শতাংশ নিরসনের (২০০৫ এর লেভেল হতে) পরিকল্পনার জানান দেবে যা বর্তমানে খোদ ওয়াশিংটনেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের জন্য কপ-২৬ এর আয়োজক এবং বর্তমানে জি-৭ এর প্রেসিডেন্ট থাকায় বৈশ্বিক আবহাওয়ার গতি নির্ধারণের হাল তাদের হাতে রয়েছে। সম্মেলন কী আকস্মিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হবে। এজন্য মৃদু সন্দেহ আছে যে এর সব দোষ গিয়ে পড়বে জনসন এবং বাইডেনের ওপর। যদিও চীনের ২০২০ সালের অঙ্গীকার যে তারা ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নিয়ে আসবে এর ওপর সবার নজর ছিল।

যদিও এর ফলে জলবায়ু ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়া থেকে ওই সময় নিজেকে রক্ষা করেছে চীন। (এ বছর ভারতও এমন একটা ঘোষণা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে)।

প্রভাবশালী দেশগুলো ইতোমধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গ্লাসগো সম্মেলনে অগ্রাধিকার পাবে দূষণের জন্য দায়ীদের সামনে নিয়ে আসা। কিন্তু এখানে অসংখ্য ছোট উন্নয়নশীল দেশকে ব্যাপক সমর্থন দেওয়া হবে। এসব দেশের সরকার কার্বন নিঃসরণ অর্থনীতিতে আগ্রহী কিন্তু তারা অনর্থক ঋণের পাহাড়সম বোঝার দিকে তাকিয়ে আছে। এরপরও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসে বৈশ্বিক ঋণ মওকুফের একটা বৈশ্বিক পরিকল্পনা এবং জলবায়ু-আর্থিক প্যাকেজে জোর দিচ্ছেন যা কপ-২৬ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সবুজ বিনিয়োগে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রকেই নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

কপ-২৬ এর যে চুক্তিগুলো আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর সেখানে প্রবেশটাই বৃথা হয়ে যাবে। যদিও কোনো কোনো দেশ তাদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিকল্পনার কথা জানান, অঙ্গীকার পূরণে তাদের সম্পদের জোগান প্রয়োজন। বিশ্ব মোড়লেরা যদি যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক প্যাকেজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। এখনও জীবাশ্ব জ্বালানির কাঠামো থেকে বের হয়ে আসা দুশ্চিন্তার জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাঝে।

jagonews24

অনেকক্ষেত্রে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যুক্তরাজ্যের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই সহজ হবে, যা সম্প্রতি তার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বাজেট কমিয়েছে এবং বিশ্ব মোড়লিপনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এর সঙ্গে গ্রিন ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ২ বিলিয়ন ইউএস ডলার পরিশোধে যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারে। এখনই এর উপযুক্ত সময়।

বিশ্বকে কার্বন নিঃসরণে ছোট দেশগুলোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। যারা কেবল শুরু করলো যেমন বর্তমান ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়া সরকারকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অঙ্গন থেকে পৃথক রাখাই ভালো। বিগত চার বছরের জলবায়ু চুক্তি অস্বীকারকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্টদের ধরে রাখলে সাফল্যে ব্যাঘাতের সম্ভাবনা থাকবে।

কার্বন নিগর্মন শূন্যের কোটায় নামাতে আমাদের প্রকৃতিনির্ভর সমাধান সেই সঙ্গে বিজ্ঞাননির্ভরতাও থাকতে হবে। আঞ্চলিক সম্প্রদায়গুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন দূষিত গ্রহকে নিজের গৃহদূষণই মনে করে। বিশ্বের বন ভূমিগুলোও অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে পুনরুদ্ধার এবং পুনরায় সচল করলেই সাফল্য অবধারিত।

অদ্ভুতভাবে বাইডেন এবং জনসন একই পথের পথিক। তাদের একজনের প্রয়োজন অপরকে। ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা ভালোবাসেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ উন্নয়নে। যদিও এ ধারণা সর্বদা বাস্তবের চেয়ে বেশি কল্পনাই। আজকাল উভয় দেশই একই ধরনের সংকটে পড়েছে। খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই তাদের সম্পর্কের সবুজায়নের দিকেও যেতে হবে। নিজেদের ভালো তথা এই গ্রহের কল্যাণের জন্যও জলবায়ুর উদ্দেশ্য পূরণে জন্য তাদের নেতৃত্ব সরবরাহ করতে হবে।

লেখক

র‌্যাচেল কেট

জাতিসংঘের সাবেক জলবায়ু দূত, টুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাচার স্কুলের ডিন।

এনা টনি

ইনস্টিটিউট ক্লাইমা ই সোসিয়েডের নির্বাহী পরিচালক।

বার্নিস লি

গবেষণা পরিচালক, ফিউচার্স, চাথাম হাউস।

প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনূদিত
অনুবাদ : সাখাওয়াত হোসেন সুজন

এসএইচএস/এইচআর/জেআইএম