মাতৃভাষার শত্রু-মিত্র
একটি ছোট্ট ঘটনা বলি। আমাদের এক কবি বন্ধু ভাগ্যান্বেষণে বিদেশে গেছেন। নতুন দেশ। নতুন ভাষা। মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেলেন তিনি। মাতৃভাষা কী জিনিস সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। দেশের নাম জার্মানি। বন্ধু জার্মান ভাষা জানেন না। ভেবেছিলেন, ইংরেজি ভাষা চালিয়ে দিবেন। সমস্যা দেখা দিল সেখানেই। বন্ধু ‘সেভ’ করবেন। কিন্তু সরঞ্জাম নেই। ব্লেড ও সেভিং ক্রিম কেনার জন্য একটি দোকানে গেলেন। দোকানাদারকে যাতে বুঝাতে সহজ হয় এই ভেবে পুরনো ব্লেড সাথে নিয়ে গেলেন। দোকানদারকে ব্লেড দেখাতেই সে বুঝে নিল ক্রেতা কি চায়। দোকানদার বেশ খুশি। বন্ধু দোকানদারের সাথে ভাব জমানোর কথা ভেবে ইংরেজিতে কথা বলতে শুরু করতেই দোকানদার হঠাৎ ক্ষেপে গেল! বলল, শোনো আমি তোমার কাছে কিছুই বিক্রি করবো না। কেন করবো না জানো? তুমি আমার মাতৃভাষাকে অপমান করেছো! আগে আমার মাতৃভাষা শেখো তারপর আমি তোমার কাছে পণ্য বিক্রি করবো!
আমাদের দেশে কী এটা সম্ভব? আমরা কি কোনো বিদেশীকে একথা বলার সাহস দেখাতে পারব? আমরা মাতৃভাষার জন্য লড়াই করেছি। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দিয়েছে এই দেশের মানুষ। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। অথচ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর সেই গণদাবি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। কোনো বিদেশীকে তো দূরের কথা দেশের মানুষকেও কি বলার সাহস আছেÑ দয়া করে আপনি বাংলায় কথা বলুন।
বরং এই কথা বললে হিতে বিপরীত হতে পারে। যাকে এই কথা বলবেন তিনিই হয়তো আপনাকে ধমক অথবা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শুরু করবেন। অথচ ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই এই দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবার কথা। জার্মানিতে তো মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্ত দিতে হয়নি। অথচ তাদের নিজেদের ভাষার জন্য কী দরদ! সামান্য এক দোকানদার শর্ত দেয় ‘আগে আমার দেশের ভাষা শিখে আসো। তারপর তোমার সাথে কথা বলব।’
অথচ এই সাহসটা আমাদেরই করার কথা ছিল। আগে বাংলা শেখো, তারপর আমার সাথে কথা বল! কিন্তু কে কাকে কথাটা বলবে? অথবা কে কার কথা শুনবে? বাংলাদেশকে বলা হয় ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র। অথচ এইদেশেই মাতৃভাষার মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। বছরের একটি মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে উঠি। মাতৃভাষার জন্য দরদ দেখাই। আহারে, উহুরে করি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এটা করতে হবে ওটা করতে হবে... নানান পরিকল্পনা সাজাই। কোনো মতে ফেব্রুয়ারি মাসটা পার করতে পারলেই হল। ভুলে যাই মার্তৃভাষার মর্যাদা রক্ষার নানান প্রতিশ্রুতির কথা। আদালতের ভাষা বাংলা চাই।
এই দাবিতো অনেক দিনের। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। প্রতি বছরই মনে হয় এবার বুঝি কিছু একটা হবে। কিন্তু শেষ মেষ কাজের কাজ কিছুই হয় না। তবে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে লোক দেখানো একটি কার্যক্রম প্রতি বছরই নেয়া হয়। অনেকটা রুটিন ওয়ার্কের মতো। শুধু ঢাকা শহর নয় দেশের ছোট বড় সব শহরের রাস্তাঘাটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখলে বোঝার উপায় নেই এই দেশের মানুষ প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় রক্ত দিয়েছিল।
অধিকাংশ সাইনবোর্ডের ভাষা ইংরেজি। যদিও বা কোথাও বাংলা ভাষার স্থান হয়েছে তবে সেটা দায়সারা গোছের। ইংরেজির পাশে কোনো মতে মাথা উচু করে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশের বৃথা চেষ্টায় রত প্রিয় মাতৃভাষা। মজার ব্যাপার হলো ঢাকা সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই হঠাৎ করে ইংরেজী সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেরার ‘চোর-পুলিশ’ খেলার মেতে ওঠে। দুই একটি সাইনবোর্ড বুলডেজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। ব্যস ওই পর্যন্তই। ফেব্রুয়ারি মাসের পর মার্তৃভাষার মর্যদার রক্ষার কথা কারও মনেই থাকে না।
এমনই অবহেলিত আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা। একথা সত্য, চর্চার ওপর যে কোনো ভাষা টিকে থাকে। অথচ আমাদের প্রিয় মাতৃভাষার চর্চা ব্যহত হচ্ছে। এমনিতে আমাদের মাতৃভাষায় কিছু বিদেশী শব্দ ঢুকে গেছে। যেমন চেয়ার, টেবিল, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি। ইদানিং আমাদের মার্তৃভাষার শরীরে বিদেশী ভাষার পেরেক ঠুকে প্রতিদিন মাতৃভাষাকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। ভাষা টিকে থাকে পারিবারিক চর্চার মাধ্যমে। অথচ দেশের অধিকাংশ পরিবারে মাতৃভাষার বিকৃত চর্চা হচ্ছে প্রতিদিন। কেউবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে, কেউবা টিভি সিরিয়াল দেখে দেখে ভাষার বিকৃত চর্চায় আগ্রহী হচ্ছে। বেশ কিছু এফএম রেডিও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় রত। ‘ভাই’ বাংলা ভাষার মধুর শব্দ। অথচ ভাইকে ‘ব্রো’ সম্মোধনের হিড়িক শুরু হয়েছে। বাবা তো অনেক আগেই ড্যাডিতে রুপান্তারিত হয়েছে। আর ‘মা’ হয়েছেন মম। একটি এফএম রেডিওর উপস্থাপকের ঘোষণা শুনলেই সহজে বুঝতে পারবন আমাদের মাতৃভাষা কতটা কদর পাচ্ছে। ‘‘হাই লিসেনার আমরা এখন একটা সং প্লে করছি”। ইংরেজি বাংলা মিলিয়ে এই যে কদাকার বাক্য প্রয়োগ করা হলো এর পেছনে যুক্তি কি?
প্রায়শই দেখা যায় কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে। দর্শক সারিতে বসা সবাই বাঙালি। বাংলা তাদের মাতৃভাষা। অথচ অনুষ্ঠান ঘোষণা থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বক্তৃতা পর্যন্ত ইংরেজিতে হচ্ছে। কেন এই প্রবণতা? যে অনুষ্ঠানে বিদেশী একজন দর্শকও নাই সেই অনুষ্ঠানে কেন বলতে হবে ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান... এই কথাটা বাংলায় বললে ক্ষতিটা কোথায়? বিদেশী দেখলেই আমরা অনেকে ‘ভুলভাল’ ইংরেজি বলা শুরু করে দেই। রাজধানীর একটি অভিজাত রেস্তোরায় এক পার্টিতে একজন বাঙ্গালী একজন বিদেশীর সঙ্গে ‘ভুলভাল’ ইংরেজিতে কথা বলছিলেন। এক পর্যায়ে বিদেশী ভদ্রলোক মৃদু হেসে বাঙ্গালী ভদ্রলোককে বললেন, আমি বাংলা জানি। আপনি আমার সাথে বাংলায় কথা বলতে পারেন। সেটাই বরং ভালো হবে! পরে দেখা গেল বাঙালি ভদ্রলোক ভালো করে অর্থাৎ শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলতে পারছেন না। তার চেয়ে বরং বিদেশী ভদ্রলোকই ভালো বাংলা বলছেন।
আবার অনেকে আছেন বাক্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে অহেতুক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন। ইনফ্যাক্ট আমি তোমার কথায় মাইন্ড করেছি। এ ধরনের ‘বাংরিজ’ শব্দ যোগে বাক্য তৈরি করলে নাকি ব্যক্তির মর্যাদা বাড়ে। ফলে বাংলা ভাষার শরীরে বিদেশী ভাষার প্রলেপ মাখার মহৎ প্রবণতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে অযতœ অবহেলার নজির অনেক। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কথাই বলি। মহান একুশে এলেই এই শহীদ মিনারের যতœ করার জন্য আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই। একুশের পরের দিনই শহীদ মিনারের প্রতি আর কারও নজর থাকে না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এব্যাপারে হাইকোর্টের রায়ও আছে। অথচ মহাপরিকল্পনার মধ্যেই আটকে আছে ভাষা জাদুঘর। ঢাকায় মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট নামে জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠান আছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই প্রতিষ্ঠানের আদর্শ-উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাধারণ-অসাধারণ সকল পর্যায়ের মানুষের ধারণা কম। ফেব্রুয়ারি এলেই মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট কিছুটা হলেও নড়ে চড়ে বসে। ফেব্রুয়ারি শেষ ইনসটিটিউটের কোনো কার্যক্রমই আর আলোচনার মধ্যে থাকে না। এই ইন্সটিটিউটে প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা ভ্রমণের সুযোগ আছে। কিন্তু এই সংবাদ অনেকেই জানেন না।
এই যে জানা, না জানার বিষয়। এক্ষেত্রে দায় কার? নিশ্চয়ই প্রথম দায়টা মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের। কথায় আছে নিজের ঢোল নিজে পিটাতে হয়। অন্যে পিটালে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস নয় বছরজুড়ে আরও কিছু সমন্বিত কর্মসূচি হাতে নিতে পারে মার্তৃভাষা ইন্সটিটিউট। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে নানান ধরনের প্রতিযোগিতা অথবা কার্যক্রম হাতে নিতে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা মাতৃভাষা টিকে থাকে পারিবারিক চর্চার মাধ্যমে। এই কথা আগেই বলেছি। কিন্তু পারিবারিক ক্ষেত্রেও কি আমরা মাতৃভাষার সঠিক চর্চা করছি। কেউ বেড়াতে এলে বাংলার চেয়ে ভুলভাল ইংরেজি বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই। আকাশ সংস্কৃতির কারণে হিন্দী ভাষার দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে অনেক পরিবারে। বস্তা পচা টিভি সিরিয়াল দেখে দেখে অনেক পরিবারে হিন্দি, উর্দু ভাষায় কথা বলার ক্ষতিকর চর্চা শুরু হয়েছে। এটা অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করার এক ধরনের অশোভন প্রবণতা।
তার মানে এই নয় আমি অন্য ভাষার চর্চার বিরুদ্ধে বলছি। আজকের এই আধুনিক বিশ্বে একাধিক ভাষার প্রতি নজর রাখা জরুরি। এজন্য কী আমরা প্রিয় মাতৃভাষাকে ভুলে যাব। একথা তো সত্য যে গোটা বিশ্বে ইংরেজি ভাষা রাজত্ব করছে। এজন্য ইংরেজির পাশাপাশি অন্য ভাষাও শেখা সময়ের দাবি। কিন্তু সেটা মাতৃভাষাকে অগ্রাহ্য করে নয়। গবেষণায় দেখা গেছে মাতৃভাষায় যার যত বেশি দখল অন্য ভাষার ক্ষেত্রেও তিনি সমান পারদর্শী। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ তুলে ধরতে চাই। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইংরেজির শিক্ষক। তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলে দেখবেন কী সুন্দর বাংলায় কথা বলেন তিনি। একটা ইংরেজি শব্দ পাবেন না তার মুখে। আর কী সুন্দর বাংলায় যে লেখেন... পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধ, কলাম গুলোই শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হতে পারে।
যারা কষ্ট করে আমার এই লেখাটি পড়ছেন তাদের প্রতি একটা অনুরোধ রাখতে চাই। স্বীকার করছি আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে হলে শুধু মাতৃভাষাকে নিয়ে মেতে থাকলে চলবে না। আন্তর্জাতিক মানের অন্যান্য ভাষা বিশেষ করে ইংরেজির প্রতিও জোর দিতে হবে। তবে সেটা মাতৃভাষাকে অগ্রাহ্য করে নয়। সমাজের সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলার সঠিক চর্চা ও প্রয়োগ জরুরি। এক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মেরও একটা দায় আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে প্রিয় তরুণেরা ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে একটু যেন বিভ্রান্ত। আইছস, গেছোস, খাইছস, লোল, উরাধুরা জাতীয় শব্দের প্রতি অনেকের ব্যাপক আগ্রহ। শব্দ চর্চায় ক্ষতি নাই। কিন্তু সেটা যেন প্রিয় মাতৃভাষার উন্মেষ ধারায় প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়ায়।
মাতৃভাষা একটি মানুষের পরিচয়ও বহন করে। আমরা বাঙালি এই পরিচয়ের মূল ভিত্তি হল মাতৃভাষা বাংলা! আমরা বাংলায় কথা বলি বলেই বিশ্বে আমাদের গর্বিত পরিচয় বাঙালি। কাজেই প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকেই সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।
এবার ভাষার মাস উপলক্ষে প্রচার মাধ্যমে একটি বিজ্ঞাপন চিত্র বোধকরি অনেকেরই নজরে এসেছে। বিজ্ঞাপচিত্রের শুরুতেই দেখা যায় একটি ছোট্ট বাচ্চা দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে বলছে- টুডে আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাব। বাবা উত্তর দিলোÑ যাবো তো বাবা.... মা তখন ছেলেকে বলল, ফুল নয় বাবা সে ফ্লাওয়ার। ছেলে এবার মায়ের কাছে জানতে চাইল আচ্ছা মম এভরি ইয়ার আমরা ফ্লাওয়ার দিতে যাই কেন? মা তখন বলল, ‘বিকজ এই ডেতে আমাদের ব্রেভ হিরোরা আমাদের মনস্টারদেরকে ডিফিট করেছিল। ছোট্ট ছেলে তখন মাকে বলল, ‘ও ইয়ে বাত হে...’
পরিবার তৈরি হচ্ছিলো শহীদ মিনারের দিকে যাবার জন্য। এক পর্যায়ে বাসা থেকে বের হলো। গাড়িতে যাচ্ছে পরিবারের তিন সদস্য। বাবা মা আর শিশুপুত্র। গাড়িতে যেতে যেতে শিশুপুত্র হঠাৎ তার মাকে জিজ্ঞেস করলোÑ ‘বাট মম সেদিন মনস্টাররা আমাদেরকে এটাক করেছিল কেন? মা তখন বলল, মনস্টারদের যে বড় লিডার ছিল সে হঠাৎ একদিন ঢাকায় এসে ডিক্লিয়ার করলোÑ অল বাংলাদেশী স্পিক অ্যান্ড রাইট অনলি উর্দু। দেন আমরা প্রটেস্ট করলাম। বাংলা আমাদের মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ.... দেন ওরা আমাদের উপরে এটাক করলো। অ্যান্ড ফাইন্যালি উই ওন.... ছোট্ট শিশুটি তখন ভেবে নিয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা মম, হোয়াট ইজ মাই মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ? মা উত্তর দিলÑ বাংলা। ছেলে তখন ভেবে নিয়ে বলল বাট তুমিও তো আমাকে বাংলা বলতে.... ওয়েট... তুমিও কি তাহলে মনস্টার?
এবার বাবা-মা দু’জনই অবাক। অপরাধীর মতো ছেলের কাছ থেকে মুখ লুকাতে শুরু করলো। একটি বিস্কুট কোম্পানি এই বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেছে। ধন্যবাদ সময়ের সাহসী চিত্র তুলে ধরার জন্য।
লেখাটি শেষ করি জাগো নিউজে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে। ‘শহীদ মিনার কী জানেনা ঠাকুরগাঁওয়ের অধিকাংশ স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। কী ভয়বহ তথ্য। বাস্তবতা হলো, এটা শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের চিত্র নয়। গোটা দেশের চিত্র।
তার মানে আমাদের শিশুদের কাছে শহীদ মিনার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কেও তারা কোনো ধারণা পাচ্ছে না! এই দায় কার? কার কাছে জবাব খুঁজবো?
লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো।
এইচআর/জেআইএম