ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বসন্ত আসুক একুশে

তুষার আবদুল্লাহ | প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২১

২০২১ এর ভোরের আলো চোখে পড়তেই প্রিয় কবি নেরুদার কথা মনে পড়লো। তিনি প্রায়ই চলে আসেন পাশে। আমার নিঃসঙ্গ ভাবনার সহচর নেরুদা এবং আবুল হাসান। অন্য কবিরাও আসেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ুন আজাদ, শহীদ কাদরী এমনকি ত্রিদিব দস্তিদারও এসে আড্ডা দিয়ে যান। উনারা নিজেদের সময় নিয়ে বলেন। সকলের কাছেই নিজের সময় উপভোগ্য। নানা গতিরোধক তাদের জীবনকে কোথাও বাঁধতে পারেনি। বরং উসকে দিয়েছে জীবনকে উপভোগে।

কবিদের জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিক হচ্ছে- নিজের জীবনের চেয়ে সে, অন্যের জীবনকে দেখে বেশি। অন্য ব্যক্তি, রাষ্ট্র এবং ভূগোলককে। তাদের একটি প্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে, ঠিক গ্রামের নারীদের মতো। তারা বুঝতে পারেন জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ কেমন করে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। নদী দূরে চলে যাচ্ছে। ফসলের ক্ষেতের পুষ্টিহীনতা নারীরাই টের পান আগে। যেমন পান কবিরা। সমাজের মধ্যে যে ক্ষয়রোগ শুরু হয়েছে। সেই কথা কবিরাই আগে জানান দেন। শুধু জানান দিয়ে বা সতর্ক করেই তারা ক্ষান্ত থাকেন না। ব্যবস্থাপত্রও দেন। দুঃখজনক হলো সেই ওষুধ কেউ ব্যবহার করেন না। উল্টো কবিকে হতে হয় নিগৃহীত, যেতে হয় নির্বাসনে।

যে কবিদের সঙ্গে আড্ডা হয়, তাদের কাছে জানতে চেয়েছি বহুবার, তাদের কালে স্তবক কবি ছিল কিনা? এ প্রশ্নে কেউ কেউ চুপ করে থেকেছেন। কারণ পরিবেশ পরিস্থিতি ও তাৎক্ষণিক লাভ-লোকসানের হিসাবে স্তূতিময় কাব্য তারা লিখেছেন। সুতরাং সরব হবার মানসিক মুরোদ নেই। অন্যের বলেছেন- কবিতা বা কবির বেঁচে থাকার ইতিহাসে দেখা যায় গড়পড়তা কবিরা সকলেই শাসক বা রাজসভার কুশীলব ছিলেন। তাদের কাব্য চর্চার বন্দনার। সেই বলয়ে প্রবেশ করেননি যারা, তারাই পৃথিবীর বদলে যাওয়ার সারথী।

এখনও যারা পৃথিবীকে বদলে দিতে চান, তাদের বাতিঘর কিন্তু কবি বা গীতিকবিরাই। উনারাই বললেন, দেখো সুমন, নচিকেতা যেমন করে রাষ্ট্রকে দেখে, পৃথিবীতে দেখিয়েছে তোমাকে, এমন আর কতজন আছে? জীবনের পতন ডিঙিয়ে লড়াইর মঞ্চে ফিরে যাওয়া। প্রতিবাদ করার শক্তি। পৃথিবীতে বদলে দিতে ওরা কি ক্যাস্ট্রো বা চে’র ভূমিকায় নেই? তোমার দেশের বাউলদের কাছে আসো দেখো জীবন কত সহজ। জীবন বদলে দেয়া, সে আরও সহজ।

আজ নেরুদাকে বললাম, ২০২০ কে দেখলেন তো? তার কথা- এ আর নতুন কী? পণ্যের সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে আছো। ভাইরাসও এখন পণ্য। ভাইরাস দিয়ে পণ্যের বাজার দখলের চেষ্টা চলছে। নতুন নতুন পণ্যের আবির্ভাব হচ্ছে, হবে। পণ্যের রাজ্য জয় অভিযানে মানুষ অসহায় সৈনিক। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের তাতে কী? আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের দিন বুঝি ফুরলো। প্রযুক্তি এসেছে মানুষের মস্তিষ্ককে জড় করে দিতে। তাকিয়ে দেখ চারদিক, জ্ঞানের কোনো অনুশীলন নেই, আদর নেই। জ্ঞানের স্ফূরণে জল ঢেলে দেয়া হচ্ছে। জ্ঞানহীন মানুষ, পৃথিবীর শীতল থাকার কথা নয়।

নিজেকে শান্ত-শীতল রাখার নকশা জানবে না জ্ঞানশূন্য মানুষ। তাই পৃথিবীজুড়েই বাড়ছে অস্থিরতা। এর ধারাবাহিকতা হঠাৎ ২০২১ এ ফুরোবে, এমন ভাবা নির্বোধের কাজ হবে। এমনও হতে পারে ২০২১ আরও অস্থিরতা নিয়ে অপেক্ষা করছে। ভাইরাসের লড়াইয়ের আরও মর্মান্তিক দিকটি এখনও দেখা হয়নি। সামনের দিনগুলো অজ্ঞাত। এখানেই জীবনের রহস্য। সেই রহস্যের বাক্সটা দিনে দিনে কী ভয়ঙ্কর বাস্তবতা নিয়ে অপেক্ষা করছে আমরা জানি না।

তাহলে এই যে আমরা শুভকামনা বিতরণ করে চলছি? ত্রিদিব দা হুট করে এসে বললেন, ওই যে আমি বলতাম, ভালো কিছু আসবে এই বলে নিজেকে প্রবোধ দিয়ে মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, জীবনকে ধরে রাখে। নেরুদা বললেন- হুম। সব শেষ সত্য হলো তুমি যতই ফুল ছিঁড়ে ফেল না কেন, বসন্তকে আটকাতে পারবে না। সকল গতিরোধক ও ষড়যন্ত্রের কাঁটাতার ডিঙিয়ে বসন্ত আসবেই। ২০২১ ও হতে পারে সেই বসন্ত!

এইচআর/বিএ/এমএস