ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, আইনগত বাধ্যবাধকতা ও রাজনীতি

ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার | প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

সকল কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়াতের ওপর। ভাস্কর্য শিল্পকলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও চেতনার প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করা হলেও তা পূজার দোষে দায়ী করা হচ্ছে। এটি একটি প্রাচীনতম সমস্যা যা ইসলামিক জাগরণের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকেও জানা যায়।
ফতোয়া দিলাম- কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!
‘আমপারা’-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!

বিশেষভাবে লক্ষণীয় মদিনার গ্র্যান্ড মুফতি ও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আল-আজহারের ইসলামিক স্কলাররা এ বিষয়ে কোনো ধরনের ফতোয়া জারি করেননি বা ভাস্কর্যকে অবৈধ ঘোষণা করেননি। সারাবিশ্বের ন্যায় সকল মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। কিন্তু কোনো দেশে ভাস্কর্য ভাঙা দূরের কথা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন দেখা যায়নি। কেবল ২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের সময় বামিয়ান প্রদেশে দেড় হাজার বছরের পুরোনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুটি বৌদ্ধমূর্তি ডিনামাইট দিয়ে ধংস করা হয়। বাংলাদেশে যারা ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করছে ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে তারা কি তাহলে তালেবানি উগ্রপন্থী জঙ্গিবাদের অনুসারী এবং দেশকে আফগানিস্তানে মতো প্রগতিশীল রাষ্ট্র থেকে তালেবানি রাষ্ট্র কায়েম করার অপচেষ্টায় লিপ্ত!

আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও উদারগণতান্ত্রিক চেতনায়। তৎকালীন গোড়া মুসলিম সমাজে আওয়ামী মুসলিম লীগ জন্মের অব্যাহতি পর মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সার্বজনীন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সত্তরের নির্বাচনে মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববাংলায় আওয়ামী লীগ তার প্রচার-প্রচারণায় পোস্টার-লিফলেট ব্যানারে কোথাও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম’ বা ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ শব্দ ব্যবহার না করেই সব আসনে জয়লাভ করে। ইহাই প্রতীয়মান হয় যে শুধু ধর্মের দোহাই নয়, কোনো রাজনৈতিক দল দেশ ও দশের জন্য কাজ করলে জনগণ ভোট দেয়। তাই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ১৮ অনুচ্ছেদে গণিকাবৃত্তি জুয়া খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে জায়গা বরাদ্দ করেন এবং ইসলামের চর্চা ও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঠিক প্রশিক্ষণের প্রদানের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে রাজাকারদের পুনর্বাসন করেন এবং ধর্মান্ধ ধর্মব্যবসায়ীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ান। তিনি কলমের খোঁচায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে শুরু করে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করে স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মীয় উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে খুশি করেন। ফলশ্রুতিতে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জনের পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যেহেতু বাংলাদেশে ধর্মীয় উদ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কখনো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারবে না তাই তারা বিএনপির ওপর আরও বেশি করে ভর করে এবং অংশীদারিত্ব অর্জন করে। পরিণতিতে বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রাণভোমরায় পরিণত হয়।

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের পর জামায়াতে ইসলামী সাংগাঠনিকভাবে পঙ্গুত্ববরণ করলে বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে অবস্থানের শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলে। আমাদের মনে রাখতে হবে ধর্মের ভিত্তিতে জঙ্গিবাদ একটি রাজনৈতিক আাদর্শিক বিষয়। যুদ্ধাপরাধীদের দায়ে যাদের ফাঁসি হলো তাদের সন্তানরা কোনো অনুতাপ করেনি বরং তাদের পিতার অপকর্মকে সমর্থন করছে এবং রাজাকারদের শহীদ বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু হলি আর্টিজনসহ জঙ্গি তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নিহতদের পরিবার তাদের মরদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি জঙ্গিরা বংশপরম্পরায় এই দেশের স্বাধীনতা চেতনার পরিপন্থী এবং তাদের উত্তরসূরীরা একই আদর্শ ধারণ করছে। নীলনকশা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাথে এদেশের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে।

আমাদের দেশে ইসলামিক দলগুলোর নামে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের অতীত ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয। তারা নিজে বা তাদের বাপ-দাদারা ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার ছিলেন এবং আমাদের মা-বোনদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। হেফাজত ইসলামের ৫৫ জনের অধিক সদস্য সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। অনেকই বিভিন্ন উগ্রসাম্প্রদায়িক সংগঠনের পদধারী নেতা এবং বিএনপি জোটের শরিক।

বিএনপি ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের মিটিংয়ে সরাসরি অংশ নিয়ে সমগ্র ঢাকা শহরকে অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হেফাজত ইসলামের সদস্যরা ঈমানি দায়িত্ব ফেলে লেজগুটিয়ে পলায়ন করে। পরে বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসা করা হলে অকপটে স্বীকার করে যে ‘মন্ত্রিত্বের’ লোভে সে এসব করেছে। মূলকথা এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে সহজ-সরল সাধারণ মানুষের আবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতিকে উসকে দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায়।

দেশে বহুদিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতির নিদর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক হিসেবে বহু ভাস্কর্য ও ইমারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে জিয়াউর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাস্কর্য থাকলেও এই উগ্রসাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধগোষ্ঠী কখনো উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্বের বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং করোনাকালেও স্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে, জাতি যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে ঠিক সেই মুহূর্তে চিহ্নিত কিছু ধর্মব্যবসায়ী ধ্বংসাত্মক খেলায় মেতে উঠেছে।

এই উগ্রসাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী প্রথমে লালনের ভাস্কর্য, পরে হাইকোর্টে থেমিসের ভাস্কর্য অপসরণের দাবি মেনে নেয়ায় প্রশ্রয় পেয়েছে, আর আজ তারা খোদ জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেয়েছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ। আমাদের সংবিধানের ৪ক অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি যথাযথ মর্যাদায় প্রর্দ্শন ও সংরক্ষণ করতে বাধ্য যা সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ৭ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধানের কোনো অংশ লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনে সহায়তা করা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই মুহূর্তেই যদি তাদের স্তব্ধ করা না যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল ভাস্কর্য ও স্থাপনা অপসারণের দুঃসাহস দেখাবে। অবশ্যই এই ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর আইনানুগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রেট বৃটেনের দুইবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন দিসরায়েলি যেমনটি বলেছেন, Action may not always bring happiness; but there is no happiness without action.

আওয়ামী লীগ তার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ পার করছে এবং ধারাবাহিকভাবে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে। আওয়ামী লীগের একক আধিপত্যের মধ্যে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আর দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এছাড়াও বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি করেও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েেছে ও জনসমর্থন হারিয়েছে।

এমনই চরম প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী অস্তিত্ব ধরে রাখতে লড়াই করছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বদলা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক এই শূন্যতাকে সম্পূর্ণভাবে সদ্ব্যবহার করে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হতে চায় হেফাজতে ইসলাম। আর জামায়াতে ইসলামী অন্তরালে থেকে হেফাজতের আবরণে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ফুঁসে উঠেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ায় স্থবিরতা লক্ষণীয়, যা দলটির সাংগঠনিক অগোছালো দিককে স্পষ্ট করে।

অনস্বীকার্য যে আওয়ামী লীগ একযুগেরও অধিক ক্ষমতায় থাকায় দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসরিত ভালোবাসা সবসময় রয়েছে। দেশের যে কেউ পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রদান করতেই পারে কিন্তু সাংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার অংশ হিসেবে অন্যের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও অপর সকল ব্যক্তি ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষে মতামত দেয়ার অধিকারও রাখে।

শুধু কোমলমতি মাদরাসার ছাত্র ও ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত সাধারণ মানুষদের দোষারোপ করলে হবে না। অধিকাংশ সময় অভিভাবকহীন এতিম শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনগ্রসর অসহায় শিশুদের বিনাবেতনে থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনার জন্য মাদরাসায় পাঠানো হয়। তাদের আর্থিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে সম্পূর্ণ নির্ভর থাকতে হয় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ওপর। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থেকে কঠোর অনুশাসন ও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মধ্যে দিয়ে তাদের মেধা ও মননের খুব একটা বিকাশ ঘটে না। তাই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থীদের সাথে পরবর্তীতে প্রতিযোগিতায় তারা টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত প্রতিটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে থাকা মানুষ নিজেদের বঞ্চিত মনে করে এবং এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দায়ী করতে থাকে।

এটাও সত্য যে দেশের উল্লেখযোগ্য মাদরাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া দূরে থাক, জাতীয় পতাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয় না বিধায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম সঞ্চারিত না হওয়াই স্বাভাবিক। অনেক আগে থেকে ইসলামিক শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার সুযোগ প্রদান করলে, তাদের পাঠ্যসূচি পরিবর্তন ও পর্যবেক্ষণ করলে তারাও সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারত। দুর্বল অবস্থানে থাকা মানুষদের যখন রাষ্ট্রক্ষমতার লোভ দেখানো হয় তখন তারা অনিয়ন্ত্রিত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। বঙ্গবন্ধু এই বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতির জন্য কওমি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ভাগ্য উন্নয়নের জন্য আর্থিক তহবিলও গঠন করে দিয়েছেন। কিন্তু এই মহান অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞ না থেকে গুটিকয়েক চিহ্নিত স্বার্থন্বেষী মহলের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে তারা আজ পথভ্রষ্ট হয়েছেন।

দেশের সকল নাগরিককে মনে রাখতে হবে যে আমাদের সংবিধানের ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, ২ক রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, ৩ রাষ্ট্রভাষা বাংলা, ৪(১) জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, ৪(২) জাতীয় পতাকা, ৪(৩) জাতীয় প্রতীক, ৪ক জাতির পিতার প্রতিকৃতিসহ প্রত্যেকটি বিধান মানতে বাধ্য। আর কেবল পবিত্র সংবিধান ও উপরোক্ত সাংবিধানিক বিধানাবলি মানলেই এই সংবিধানের অধীন আইনগত অধিকার ও প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় রাষ্ট্র অমান্যকারীদের সাংবিধানিক অধিকার এমনকি নাগরিক অধিকার রহিতকরনের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।

উদারধর্ম উগ্রসাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠেীর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধে নতুন আইন প্রণয়ন ও কঠোর প্রয়োজন। ২০০১ সালে আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে বোমা হামলার পর বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও নাগরিকের আইনগত অধিকার সম্পূর্ণ বদলে যায়। ২০০৪ সালে লন্ডনে পাতালরেলে বোমা বিস্ফোরণের পর Anti-Terrorism Crime and Security Act 2001 এর অধীন কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে অত্র আইনের ৫ধারা অনুয়ায়ী গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির জন্য The Human Rights Act-1998 প্রযোজ্য হয় না। এমনকি সমগ্র ইউরোপের মানুষের মানবাধিকারের রক্ষাকবজ The European Convention on Human Rights এর কোনো সুবিধা পাবেন না। শুধু জঙ্গি অপরাধীরাই নন উপরন্তু যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করেন অথবা কোনো কাজ বা বক্তব্যের মাধ্যমে যদি জঙ্গিবাদকে উৎসাহ প্রদান করেন তিনিও একই আইনে অভিযুক্ত হবেন। আমাদেরও সময় এসেছে রাজনীতির নামে যে ব্যক্তি বা দল জঙ্গিবাদকে উৎসাহ প্রদান করেন তাদেরও একই আইনে অভিযুক্ত হবেন। আমাদের সময় এসেছে রাজনীতির নামে যেসব ব্যক্তি বা দল জঙ্গিবাদ উসকে দেয় তাদেরও আইনে আওতায় আনার।

মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও প্রশাসননির্ভর কোনো সাংগঠনিক দল নয়। আওয়ামী লীগের শিকড় এদেশের মাটির গভীরে এবং মানুষের মনের ভেতর থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক সংগঠন। শুধু পাক-সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম নয় অস্ত্রসজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও সমর সম্মুখে বিজয়ী দল। উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর স্বৈরাচার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করে জনগণের আস্থা অর্জন করে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল। তাই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সংগঠনের পক্ষে সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজপথে নামিয়ে আওয়ামী লীগকে পরাহত করা সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব।

তথাপি সরকারকেও বিবেচনা করতে হবে সংখ্যালঘিষ্ঠ চিহ্নিত ব্যক্তিদের কুকর্মের দায়ভার যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সহজ-সরল ছাত্র ও সাধারণ জনতার ওপর না যায়। কারণ তারা এ দেশেরই নাগরিক এই সমাজেরই অংশ, তাদের কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না, তাদের সাথে নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছেন তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? কালোর মাঝে আলো ছড়াতে হবে আর ঘৃণাকে ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হবে। যেমনটি কিংবদন্তি Martin Luther King, Jr. বলেছেন ‘Darkness cannot drive out darkness; only light can do that. Hate cannot drive out hate; only love can do that.’

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

এইচআর/বিএ/এমএস