ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অটিজম সমস্যা এবং একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

সিলভিয়া পারভিন লেনি | প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২০

অটিজম। শব্দটির সঙ্গে আমাদের প্রায় সবারই পরিচয় রয়েছে। এ সমাজে আমরা অনেক অটিজম শিশু দেখতে পাই। এটি মূলত কোন রোগ নয়। অটিজম বা অটিস্টিক একটি মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা। যারা এ সমস্যায় ভোগে তাদের মূলত প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় সামাজিক কার্যকলাপ বা কথা বার্তায়। জন্মের দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই এ সমস্যা বুঝতে পারা যায়। বাংলাদেশের প্রতি ১০ হাজার শিশুর মাঝে ১৭ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ।

অটিজমকে অনেকেই রোগ বলে অভিহিত করেন। অনেকেই এখনও অটিস্টিক শিশু দেখলে তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকেন, তাদের বাবা-মাকে নিয়ে নানাভাবে কুসংস্কারের কবলে পড়তে হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রকোপ বেশি! কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্তমানে অটিজম নিয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বজুড়েই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সবার মধ্যে ওবড়েছে সচেতনতা। বাংলাদেশেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, অটিজম আক্রান্তরা নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের প্রথম দুই-তিন বছরের মধ্যেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা, যা হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য মানুষ বা বিষয়ের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না। এছাড়া সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া, ভাষা, আবেগীয় বিষয়গুলোও পরিলক্ষিত হয় না।

অটিস্টিক শিশুরা স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করে সফলতা পেয়েছেন। কেউ কম্পিউটার প্রেগ্রামিংয়েও ভালো করছেন। এছাড়া তারা বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটার, ইন্টারনেটেও অন্য সবার মতোই সমান পারদর্শিতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম।

বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে দেশের অনেক সচেতন মানুষ কাজ করছে। তাদের মধ্যে প্রথমে এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি তার কাজ শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বিশ্বের যেকোন অটিজম শিশুর অধিকার আদায়ে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন তিনি। বিশেষত বাংলাদেশের মানুষকে পুতুল তার কাজের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তিনি এখন পর্যন্ত এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে অটিজম কোন জিন পরীর আছর না। অথবা এটি কোন ব্যক্তির অপরাধও না। জেনেটিক বা পরিবেশগত কারণে এমনটি হয়ে থাকে। সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে এর প্রতিকার সম্ভব।

অটিজম নিয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বাবা-মা সহজে মেনে নিতে চান না যে সন্তানের অটিজম রয়েছে। ফলে দীর্ঘসময় একটা বিভ্রান্তিতে থাকতে থাকতে উপযুক্ত পরিচর্যা আর প্রশিক্ষণের সময় নষ্ট হয়ে যায়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ঠিক এ বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপক আকারে কাজ করতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

পুতুল ব্যক্তি জীবনে ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। সারাবিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। তিনি একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী।

২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করেছেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকায় অটিজম বিষয়ক প্রথম দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। ২০১৬ সালে সায়মা ওয়াজেদ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডেও সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস’র পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়া সায়মা ওয়াজেদ গত ৯ ডিসেম্বর ৪৯ বছর বয়সে পা দিলেন। তাকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

এইচআর/জেআইএম