শিশু শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের অবস্থান
মাছুম বিল্লাহ
কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু এগিয়েছে কিংবা পিছিয়েছে এবং বৈশ্বিক মণ্ডলে ঐ দেশের অবস্থান কোথায় সেটি প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসেসমেন্ট বা পিসা পরিমাপ করে থাকে। অন্য কথায় বলতে পারে পিসা-দ্বারা আমরা বিষয়টিকে বুঝতে পারি। বিশ্বের উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশেগুলোর শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিমাপের জন্য গৃহীত একটি পরীক্ষা যেখানে অংশ নিয়ে থাকে ১৫বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা। যেমন ২০১৮ সালে সর্বশেষ গ্রহীত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৭৯টি দেশ ও অঞ্চলের ১৫ বছর বয়সী মোট ৬ লক্ষ শিক্ষার্থী, যারা সেসব দেশে ও অঞ্চলের মোট ৩ কোটি ২০লক্ষ ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিত্ব করে।
কম্পিউটারের মাধ্যমে দুই ঘন্টায় গ্রহীত এই পরীক্ষার মূল বিষয় তিনটি-গণিত, পঠন দক্ষতা ও বিজ্ঞান। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যাচেছ যে, সিঙ্গাপুরের ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা আমেরিকার সমবয়সী শিক্ষার্থীদের চেয়ে গণিতে প্রায় তিন বছর এগিয়ে আছে এবং সিঙ্গাপুরের একজন গড়পড়তা শিক্ষার্থী অন্যান্য অধিকাংশ প্রথম বিশ্বের অধীনস্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের চেয়ে ইংরেজি পাঠে দশমাস এবং গণিতে বিশ মাস এগিয়ে রয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন বুদ্ধিবৃত্তিয় ক্ষেত্রের পাশাপাশি অবুদ্ধিবৃত্তিয় ও মনোপেশিজ ক্ষেত্রকে মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত করা ও সমান গুরুত্ব দেয়া। শিশুর জ্ঞান, আবেগ, অনুভূতি, সামাজিক ও মনোপেশিজ দক্ষতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটিয়ে একজন আদর্শ পরিপূর্ণ মানুষ তৈরিতে সহায়তা করার জন ̈ এই মনোপেশিজ ও অবুদ্ধিবৃত্তিয় ক্ষেত্রগুলো মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। অবুদ্ধিবৃত্তিয় দক্ষতা গুলো প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা ও পাঠপুস্তকে প্রত্যযাক্ষ ও পরোক্ষভাবে উল্লেখ রয়েছে যা শিশুর অবুদ্ধিবৃত্তিয় বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। তাই বিদ্যালয় থেকেই সহমর্মিতা, সহানুভূতি, মূল্যযাবোধ, পরমতসহিষ্ণুতা, নৈতিকতা, দেশাত্মবোধ, কর্তব্যযানিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো যাতে শিশুর মনে ও অনুভূতিতে জাগ্রত হয় এবং শিশুর আবেগ তৈরিতে সহায়ক হয় সে উদ্দেশে ̈ এ বিষয়গুলো মূল্যায়নের আওতায় আনা প্রয়োজন যা দু’একটি বেসরকারি সংস্থা করছে কিন্তু এটি হতে হবে জাতীয় পর্যায়ে।
অবুদ্ধিবৃত্তিয় দক্ষতা গুলো ছাড়া শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ যেমন সম্ভব নয় তেমনি মানসম্মত শিক্ষাও সম্ভব নয়। তাই শিশুর সুকোমল প্রবৃত্তি গুলো যাতে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায় সে বিষয়গুলো বিবেচনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন জাতীয় পাঠ্যক্রমকে ভিত্তি করে চারটি অবুদ্ধিবৃত্তিয় দক্ষতা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মূল্যায়নে ব্যবহার করছে। নির্বাচিত চারটি অবুদ্ধিবৃত্তিয় দক্ষতা গুলো হচ্ছে সহমর্মিতা, নৈতিকতা, পরমতসহিষ্ণুতা ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। এ চারটি দক্ষতা বাংলা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়ের পাঠগুলোতে গল্পাকারে আছে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির আগে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে।
২০২১ সাল থেকে চালু হতে যাচেছ দ্ইু বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা।ফলে সরকারি প্রাথমিকেও এখন থেকে চার বছরে ভর্তি হতে হবে। এই শ্রেণির নাম হবে ’ শিশু শ্রেণি’। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামী বছর দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট পাঁচ হাজার বিদ্যালয়ে চালূ করা হবে এই শিশু শ্রেণি।এরপর ২০২২ সালের মধ্যে সব স্কুলে তা কার্যকরী করার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ’ আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা আছে। সে কারণে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাক প্রাথমিকে দু’টি ক্লাস চালু হলে প্রথমটিতে মূলত খেলাধুলাই থাকবে। খেলার ছলে শিশু যা শিখতে পারে সেটাই যথেষ্ট হবে। ফলে পরের শ্রেণিতে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে স্কুলে আসবে। তবে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত একটি শ্রেণি যুক্ত হলে এগার ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে নিরীক্ষা জরিপে চিহ্নিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের ৬৫ হজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে একটি করে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ চার বছরের শিশুদের উপযোগী হতে হবে। সব বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কোমলমতি শিশুদের দেখভাল করার জন্য নিয়োগ করতে হবে একজন করে যত্নকারী বা কেয়ারগিভার।
২০১০ সাল থেকে সীমিত আকারে এবং ২০১৩ সাল থেকে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালূ করায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। ২০১৩সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯.৫শতাংশ যা ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৯ শতাংশ। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পর প্রথম শ্রেণিতে নিট ভর্তির হার , শিক্ষাচক্র সমাপনীর হার, উপস্থিতির হার, সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে।
অন্যদিকে অনুপস্থিতির হার, পুনরাবৃত্তির হার কমেছে। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, জাপান, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি। ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উন্নত বিশ্বের দেশসহ ১০শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি এবং ৪৯ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদি চালু রয়েছে। আমাদের দেশেও বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটছে। এসব স্কুলেও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি।
এগুলো হচেছ প্লে গ্রুপ, কেজি ওয়ান, কেজি টু ইত্যাদি নামে। কিন্ডারগার্টেনগুলো বেসরকারি হওয়ায় সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায়না। মন্ত্রণালয়ের এটিও একটি কৌশল যাতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকে ঢুকতে পারে। তাই তারা সব সরকারি প্রাথমিকের সাথে প্রাক-প্রাথমিক যোগ করেছে। তবে, এসব শিশুশ্রেণিগুলোতে সত্যিকার অর্থে কি ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে পরবর্তী শ্রেণিতে যাওয়ার জন্য তার কোন প্রমাণ বা ডকুমেন্ট আমরা দেখতে পাইনা। যতটা জানা যায়, এসব শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রেই সেই খাতা-কলম ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সামেটিভ অ্যাসেসমেন্টই ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
জন্ম থেকে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ কিভাবে হয়, কিভাবে সে চারপাশের প্রকৃতি থেকে জ্ঞান লাভ করে, সেই জ্ঞানের সাথে বড়দের জ্ঞানের পার্থক্য কী, আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ায় এই জ্ঞানীয় উপাদানগুলো কিভাবে প্রভাব ফেলে-তা নিয়েই গবেষণা করেছেন সুইজারল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী জ্যাঁ পিঁয়াজে । ১৯৩০ সালে তিনি International Bureau of education এর ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। তাঁর কালজয়ী মতবাদ Piaget’s theory of cognitive development এখনও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। খেয়াল করলে দেখা যায়, সব শিশু বুঝতে শেখার পর থেকেই যৌক্তিক চিন্তা করা শুরু করে।
তারা বুঝতে পারে, পা দিয়ে মানুষ হাঁটে, হাত দিয়ে খাবার খায়, শার্ট পরতে হয় শরীরের উপরে, আর নীচে পড়তে হয় প্যান্ট। এ থেকেই পিঁয়াজে মনে করতেন, মানুষের মন একটি শক্তিশালী একক, এটি সবার মধ্যে সব সময় সমানভাবে থাকে। শিশু অবস্থায় এই মনের প্রকাশ এক ধরনের, আবার প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় অন্যরকম। শিশুদের মূল্যায়ন পদ্ধতি আমাদের দেশে যেভাবে আছে সেটি যে, বিজ্ঞানসম্মত নয় তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের দেশে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ফরমাল কোন পরীক্ষা না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু তার বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে সেটি দেখার বিষয়। সিঙ্গাপুর ২০১৯ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিং ও গ্রেডিংয়ের বদলে আলোচনা, হোমওয়ার্ক ও কুইজ নিয়ে আসা হয়েছে।
অর্থাৎ এই দুই বছর শিক্ষার্থীরা কোন রকম পরীক্ষার চাপ ছাড়াই হাসি-আনন্দে শিক্ষালাভ করতে পারবে। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষাকে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা হয়েছে। যেমন কেউ ভাগ্নাংশের নম্বর পেলে, ডেসিমালের স্থলে তাকে নিকটতম পূর্নসংখ্যার নম্বরটি দেযা হয়। ফলে আগে যেমন এক নম্বরের এদিক ও দিক হওয়াও শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল এবং পরীক্ষার সাফল্যকে খুবই গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে হতো, সে ধরনের মাসসিকতা আর থাকবে না। আমাদের এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
একটি বড় শ্রেণিকক্ষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও উঁচুমানের একজন শিক্ষককে দিয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হলে তার ইমপ্যাক্ট বেশ বড় কারণ সর্বত্র তো উন্নতমানের শিক্ষক পাওয়া যায়না। সিঙ্গাপুর এই থিউরিতে বিশ্বাস করে আর তাই এখাকার শ্রেণিকক্ষে ৩৬জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী একত্রে পাঠগ্রহণ করে থাকে যদিও অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর হিসাব অনুযায়ী একটি আদর্শ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হওয়া উচিত ২৪।
আমাদের দেশে তো একটি শ্রেণিকক্ষে ষাট/সত্তর বা ততোধিক শিক্ষার্থী এমনিতেই বসে। তবে, তাদেরকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হবে, কিভাবে এতবড় ক্লাসে ফলপ্রসূ শিক্ষাদান করতে হবে সেটি নিয়ে কিন্তু কোন গবেষণা কিংবা কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হচেছনা। এই বড় শ্রেণিকক্ষ আমাদের দেশের একটি বাস্তবতা। এটিকে স্বীকার করে পদ্ধতি বের করতে হবে যে, কিভাবে ফলপ্রসূ শিক্ষাদান করা যায় এবং এর মধ্যেই তাদেরকে কিভাবে মূল্যায়ন করা যায়। অধিকাংশ শিক্ষাবিদরাই বলে থাকেন, শ্রেণিকক্ষে বিশ/পঁচিশ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকলে সেখানে ফলপ্রসূ শিক্ষাদান সম্ভব নয়। কিন্তু আমরাতো বাস্তবতা অস্বীকার করতে পারিনা। কবে, বিশ/পচিশজন শিক্ষার্থী ক্লাসে হবে তখন আমরা ভালভাবে শিক্ষাদান করব, তাহলে গবেষণা কেন? আর বাকি সময়টিতে আমরা কি করব?
শিশু শিক্ষার্থী ভর্তির সময়ই আমরা যে অদ্ভুত মূল্যায়ন করে থাকি সেটি সেটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যাচেছ। আমাদের বর্তমান শিক্ষা সচিব তাঁর ছেলেকে ঢাকার একটি নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে তাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। এবং সেখানে সেই ছোট বাচ্চাকে প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল-- বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর কে? ’ আর একটি প্রশ্ন ছিল ’ বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পথচলা কবে শুরু হয়।’ সচিব মহোদয়ের ছেলে পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো ’ বাবা, গভর্নর কি? বিচার ব্যবস্থা কী? আমরা শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য কত কথা বলছি, কত সভা সেমিনার করছি কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে কি?
লেখক : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক।
এইচআর/এমএস