গ্রাহকদের সতর্কতা জরুরি
ঈদের আগে সাধারণভাবেই ব্যাংকে গ্রাহকদের ভীড় বেড়ে যায়। কারণ অনেকের নগদ টাকার প্রয়োজন হয়। অনেকেই হাতে থাকা অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যান। এই ভীড়ের মধ্যেই অনেক সময় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র লুকিয়ে থাকে। এদের থেকে অতি সতর্ক থাকতে হবে। প্রতারণা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এজন্য কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করা উচিত।
এক. ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর সময় নিজের কাউকে সাথে রাখার চেষ্টা করুন। বয়স্ক মানুষ অবশ্যই আত্মীয় স্বজন সাথে রাখবেন। তবে সাথে কাউকে রাখতে গিয়ে ৭/৮ বছরের নাতি/নাতনি’কে নিয়ে যদি ব্যাংকে যান, তবে সাথে না নেওয়াই ভালো। কারণ তখন আপনাকে আপনার সেই অবুঝ নাতি/নাতনির দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।
দুই. ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা নেওয়ার পর প্রয়োজনে কাউন্টারের সামনেই টাকা গুনে নিন। একই টাকা বিভিন্ন জায়গায় বসে গোনার দরকার নেই। এতে আপনার নোটের সংখ্যা বাড়বে কিংবা কমবেও না। ক্যাশ কর্মকর্তারা আপনার সামনেই সাধারণত একবার হাতে টাকা গুনে দেখার পর কাউন্টার মেশিন দিয়ে টাকা চেক করে নেন।
তিন. অনেকেই থাকেন টাকা গুনে দেখার পর আবার কাউন্টারে গিয়ে ১০০০ টাকার নোট খুচরা করে দেন, এই নোট পরিবর্তন করে দেন, জাল টাকা কিনা পরীক্ষা করে দেন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। টাকা ভাঙ্গিয়ে নেবার পর কিংবা অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পর আবার সব টাকা গণনা শুরু করেন। এতে আপনি প্রতারক চক্রের চোখে পড়ে যেতে পারেন। কারণ এই ধরনের প্রতারক দ্বিধাগ্রস্থ কিংবা বয়স্ক মানুষকে বেশি টার্গেট করে।
চার. যতদূর সম্ভব ভীড়ের মধ্যে থাকবেন না। আপনাকে কেউ খেয়াল করছে কিনা কিংবা নিজে থেকে কেউ এসে পরিচিত হতে চাচ্ছে কিনা, লক্ষ্য রাখুন। ঠিক মত কথার উত্তর না দিলে কে কি মনে করবে, এসব পাত্তা দেবেন না।
পাঁচ. ব্যাংকের ভেতর বিভিন্ন মানুষের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠা থেকে বিরত থাকুন। এই বাতিক কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
ছয়. টাকা-পয়সা নিয়ে ব্যাংকের ভিতর সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার উপর যারা নজর রাখছে কিংবা ব্যাংকের ভিতর আপনার সাথে যারা কথা বলেছে, তাদের মধ্যে কেউ অপরাধী হলে পরবর্তীতে তাদের শনাক্ত করা সহজ হবে।
সাত. যদি প্রয়োজন মনে করে করেন, টাকা উঠানোর পর কিভাবে বাসায়/নির্দিষ্ট স্থানে যাবেন, তবে তার জন্য আগে থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করে রাখতে পারেন।
আট. ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর আশেপাশে চা-বিস্কুট, নাস্তা খাওয়া, ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন। সোজা নিজের গন্তব্যে চলে যান। এতে করে প্রতারক চক্র সহজে আপনাকে টার্গেট করতে পারবে না।
নয়. টাকার পরিমাণ বেশি হলে পুলিশি সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
প্রতারণার যে কত রকমফের হতে পারে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সহজ সরল মানুষগুলোই বিপদে পড়ে বেশি। কারণ তারা সাবধান থাকে না। একটা মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য একজন অন্যজনকে খুন/জখম করছে। মানিব্যাগে সর্বোচ্চ কত টাকা থাকতে পারে? ৩,০০০/৫,০০০/১০,০০০ টাকা। সামান্য এই টাকার জন্য ছিনতাইকারী যখন আহত কিংবা হত্যা করে, তখন ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ বা ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যখন আপনি বের হবেন, তখন সাবধানতা জরুরি। আর ঈদের সময় যেহেতু ব্যাংকে অন্য সময় থেকে ভীড় বেশি থাকে, তাই সাবধানতা আরো বেশি জরুরি।
লেখক : যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
এইচআর/জেআইএম