করোনা ভ্যাকসিন : প্রতিরোধের একমাত্র আশার আলো
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা বেড়েই চলেছে। একের পর এক সংক্রমিত হচ্ছে দেশ-অঞ্চল। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অসহায় মানবসমাজ তাকিয়ে আছে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চূড়ান্ত খবরের অপেক্ষায়।
১১ জুলাই পত্রিকার পাতায় যে আশার খবরটি পেলাম- ‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অক্টোবরে, দাম থাকবে নাগালে’। খবরটি অবশ্যই আমাদের কিছুটা আশ্বস্ত করছে।
ভ্যাকসিনের ইতিহাস
বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে ভ্যাকসিন যা মানুষকে দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য দিয়েছে। ভ্যাকসিন মূলত ভাইরাসের প্রতিরূপ বা ভাইরাসের অংশ যা সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় । এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগিয়ে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। তবে ভ্যাকসিন তৈরিতে অন্য ওষুধের চেয়ে উন্নত নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে হয়। কারণ এটি লাখো মানুষের শরীরে দেয়া হয়ে থাকে। রোগ প্রতিষেধক (টিকার) ব্যবহারের চর্চা কয়েকশো বছর আগের। বৌদ্ধভিক্ষুরা সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাবার জন্য সাপের বিষ পান করতেন। গুটিবসন্তকে প্রতিরোধ করার জন্য চামড়া কেটে কাউপক্সের ঘায়ের পূঁজ ঢুকিয়ে দিতেন।
১৭৯৬ সনে এডওয়ার্ড জেনার কাউপক্সের উপাদান ব্যবহার করে গুটিবসন্তের (স্মলপক্স) প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন যা খুব দ্রুত প্রসার লাভ করে। এ জন্য জেনারকে ভ্যাকসিনেশন বা ইমিউনোলজির প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ভ্যাকসিন শব্দটি ভ্যাকা (Vacca) মানে গরু থেকে আসে। তাঁর উদ্ভাবন পরবর্তী দুইশো বছর ধরে চিকিৎসা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করে যার ফলে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়। লুইস পাস্তুরের পরবর্তীতে ১৯৮৫ সনে কুকুর কামড়ানোর প্রতিষেধক (রাবিস ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে । তখন অনুজীব বিজ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে ১৯৩০ সনের মধ্যে দ্রুত ডিপথেরিয়া, টিটেনাসস, এনথ্রাক্স, কলেরা, প্লেগ, টাইফয়েড, যক্ষা সহ অনেক প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটা উর্বর সময় হয়ে ওঠে। পরীক্ষাগারে ভাইরাস বৃদ্ধির জন্য পদ্ধতিগুলো পোলিও ভ্যাকসিন দ্রুত আবিষ্কারে ব্যবহ্রত হয়। গবেষকরা তখন শিশুদের সাধারণ রোগ যেমন হাম, মাম্পস এবং রুবেলার ভ্যাকসিন তৈরিতে মনোযোগী হয় এবং সফলতা অর্জন করে। এতে শিশুরা এ সমস্ত রোগের কষ্ট থেকে মুক্তি পায়। উদ্ভাবনী কৌশলগুলো এখন রিকম্বিনেট ডিএনএ প্রযুক্তি এবং নতুন বিতরণ কৌশল বিজ্ঞানীদের নতুন দিকে নিয়ে যাওয়ায় ভ্যাকসিন গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে। এখন রোগের লক্ষ্যমাত্রা অনেক প্রসারিত হয়েছে। এডওয়ার্ড জেনার, লুইস পাস্তুর এবং ম্যাক্স হিলম্যান ভ্যাকসিন বিকাশের অগ্রগামী হিসেবে বিশেষভাবে সম্মানিত হন।
ভ্যাকসিন উন্নয়ন ও পরীক্ষার ধাপসমূহ
একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে সাধারণত ৫থেকে ১০ বছর সময় লাগে, কখনো ১২-২৪ মাস লেগেছে আবার কখনো সফলভাবে তৈরিই করা যায়নি। তবে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে মাত্র ৩ মাসে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে জরুরি প্রয়োজন ও বিশ্বব্যাপী এর মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে। সব দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরিতে মোটামুটি এক ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে । সাধারণত ধাপগুলো নিম্নরূপ :
ক) প্রথম ধাপ : ল্যাবরেটরি ও অ্যানিমেল পরীক্ষা
১) গবেষণামূলক (Exploratory):
এ সময় মৌলিক ল্যাব গবেষণা করা হয়। গবেষকরা নির্দিষ্ট রোগের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম অ্যান্টিজেন প্রস্তুত করে। এর জন্য সাধারণত ২-৪ বছর সময় লাগে।
২) প্রিক্লিনিক্যাল (Preclinical) : এ সময়ে প্রার্থী ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরোধ সৃষ্টির ক্ষমতা দেখার জন্য টিসস্যু কালচার এবং পশুর উপর পরীক্ষা করা হয়। পশু হিসেবে ইঁদুর বা বানর পরীক্ষা করে মানবদেহে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে রকম একটি ধারণা নেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে এ ধাপেই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এ ধাপে সাধারণত ১-২ বছর সময় লাগে।
৩) পরীক্ষামূলক নতুন ওষুধের (IND) এর জন্য আবেদন : যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ এর কাছে একটি স্পন্সরের মাধ্যমে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার রিপোর্টসহ সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে প্রস্তাবিত গবেষণার একটি প্রটোকল জমা দিতে হবে। যেখানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে সেই প্রতিষ্ঠানের রিভিউ বোর্ডের অনুমোদন পরবর্তী ধাপের জন্য বাধ্যতামূলক। এফডিএ সাধারণত ৩০ দিনে অনুমোদন দিয়ে থাকে।
খ) মানবদেহে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা : এটি সাধারণত তিন পর্যায়ে (Phase) হয়।
১) ফেইজ -১ : ভ্যাকসিন ট্রায়াল
প্রথমে প্রাপ্তবয়ষ্ক ২০-৮০ জনের একটি ছোট গ্রুপে প্রার্থী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। শিশুদের জন্য হলেও প্রথমে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পরীক্ষা করতে হবে। এ পর্যায়ে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরোধ ধরন ও সক্ষমতা দেখা হয়। প্রথম পর্য়ায় সফল হলে পরবর্তী পর্যায়ে যাবে।
২) ফেইজ-২ :
ঝুঁকিপূর্ণ মানুষসহ কয়েকশো মানুষের একটি বড় গ্রুপে এ পর্যায়ে পরীক্ষা চালানো হয়। কন্ট্রোল গ্রুপ থাকবে এখানে। এ সময় ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা, প্রস্তাবিত ডোজ, সিডিউল এবং ব্যবহারের পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৩) ফেইজ-৩ :
ফেইজ-২ সফল হলে এ পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষের উপর পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে । এ পর্যায়ে বড় গ্রুপে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা , নিরাপত্তা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৪) ফেইজ -৪: অনুমোদনের পরও ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা , কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গ) অনুমোদন এবং বিশেষ অনুমতিপত্র গ্রহণ (Licensure): মানবদেহে সফল পরীক্ষার পর ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা এফডিএর কাছে বায়োলজিকস্ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। এফডিএ সমস্ত কিছু সরেজমিনে যাচাই-বাছাই, ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে যোগ্য হলে অনুমতি প্রদান করে। পাশাপাশি এফডিএ ভ্যাকসিন প্রস্তুতির সকল প্রক্রিয়া ও মান সকল সময় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।
ঘ) লাইসেন্স পরবর্তী পর্যবেক্ষণ : ভ্যাকসিন অনুমোদিত হওয়ার পরে তাদের নানা ধরনের পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি রয়েছে। সব দেশেই এ ধরনের পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে হয়।
করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি
করোনা মহামারির ছয় মাস অতিক্রম করেছে বিশ্ব। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে শনাক্ত হয়েছিলো করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী। এরপর সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী । সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভয়ানক পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় অধিকাংশ দেশ। এখনো দিন দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে । সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে বেড়ে চলেছে মৃত্যু। ভ্যাকসিন ছাড়া এই ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এহেন নাজুক পরিস্থিতিতে মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কার্যকর ভ্যাকসিনে জন্য। আশার আলোও দেখছে বিশ্ববাসী- হয়তো এ বছরের শেষ নাগাদ মিলতে পারে বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিনের আগমন। দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সকল কার্যক্রম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী এখন বিশ্বে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে ১৫৫টি উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে ১৩৫টি প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আছে, মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ১ম ধাপে আছে ১৫টি, ২য় ধাপে ১১টি এবং ৩য় ধাপে ৪টি যার মধ্যে একটি চীনে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।
সকল বিবেচনায় অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা এগিয়ে রয়েছে। মার্কিন সংস্থা মডার্না আইএনসির তৈরি এমআরএনএ-১২৩৩ ভ্যাকসিনও দৌড়ে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস জিনোম অন্য ফ্লুর মতো দ্রুত পরিবর্তন হয় না, যার মানে মিউটেশন ভ্যাকসিনের বিকাশের গতি কমানোর আশঙ্কা কম।
উল্লেখযোগ্য ভ্যাকসিনের পরিস্থিতি
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন : অক্সফোর্ড ও এস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এতে আরো ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ব্রাজিলে পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। দুটি ধাপ সফল হওয়ার পর এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে মানবদেহে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১০টি সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার চুক্তি সই হয়েছে। জুনের শুরুতে এস্ট্রাজেনেকার সিইও বলেছেন, এই টিকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে এক বছরের জন্য। তারা আরো বলেছেন, ইতোমধ্যে ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির ফরমাশ পেয়েছেন। প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম এক কাপ কফির দাম হতে পারে। ভ্যাকসিনের ফলের অপেক্ষার পাশাপাশি ভ্যাকসিন উৎপাদন চলছে। তারা দাবি করছে সব কিছু ঠিকঠাকই থাকলে অক্টোবরেই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা যাবে।
চীনের ক্যানসিনোর ভ্যাকসিন : চীনে মোট আটটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। চীন ও চীনের বাইরে ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর অ্যাড ৫- এনকোভ নামের এ ভ্যাকসিন নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। এ ভ্যাকসিনটি কানাডাতেও মানবপরীক্ষার জন্য অনুমতি পেয়েছে। চীনের সেনাবাহিনী পরিক্ষামূলকভাবে এ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। ব্যাপক ব্যবহারের আগে ভ্যাকসিনটির আরো কিছু অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী সংস্থা ক্যানসিনো।
চূড়ান্ত ধাপে মডার্নার ভ্যাকসিন : যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন জুলাই মাসে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদের প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। মডার্নার এমআরএনএ-১২৩৩ ভ্যাকসিন তৈরি প্রতিযোগিতায় অক্সফোর্ডের পরের অবস্থানেই আছে। ইতোমধ্যে এই সংস্থা উৎপাদনের চুক্তিও করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রেরই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ক্যাটালেন্টের সঙ্গে। প্রথম ব্যাচেই ক্যাটালেন্ট ১০ কোটি টিকার উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি মডার্নার সিইও স্টিফেনন বানসেল বলেছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল আগামী নভেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
দ্বিতীয় ধাপে ফাইজার : আমেরিকার ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিএনটি-১৬২ ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক চলছে। ফাইজার আশা করছে, ট্রায়ালে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শরতে জরুরি ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
এছাড়াও প্রতিযোগিতায় রয়েছে চীনের সিনোফার্ম, সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের ভ্যাকসিন, ফ্রান্সের সানোফির ভ্যাকসিন, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, জনসন অ্যান্ড জনসনসহ বেশকিছু বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠান।
ভারতীয় ভ্যাকসিন : ভারতের হায়দরাবাদভিত্তিক ভারত বায়োটক ' কোভ্যাক্সিন' নামের একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সফল হওয়ার দাবি করেছে। এ ভ্যাকসিন তৈরিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) ও ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) একত্রে কাজ করছে। তাঁরা একটি বিস্ফোরক ঘোষণা দিয়েছেন যে, ভারতের 'আগামী স্বাধীনতা দিবস মানে ১৫ আগষ্ট কোভ্যাক্সিন বাজারে আনবেন'।
বাংলাদেশের ভ্যাকসিন : গত ২ জুলাই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে এবং দাবি করেছে তাদের প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হয়েছে। এতে দেশের মানুষ আনন্দিত ও আশান্বিত হয়েছে। গ্লোবের গবেষকদের খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে।
এছাড়া চলতি মাসে চীনের করোনার টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে শুরু হতে পারে। চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবির পরীক্ষা চালানোর কথা রয়েছে।
রাশিয়ার ভ্যাকসিন : রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগস্টের মাঝামাঝি বাজারে আসবে তাদের ভ্যাকসিন। সে জন্য প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। গত রবিবার রাশিয়ার সেচেনোভ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে দাবি করা হয়, করোনা ভ্যাকসিনের সফল মানব পরীক্ষা শেষ করেছে তারা।
১৫ জুলাই পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৬৭ জন আর মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৬৩ জন। বাংলাদেশে সংক্রমনের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৭ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৪২৪ জন ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে , ‘করোনার নতুন ও বিপদজনক ধাপে আমরা’। তাই, ভাইরাসের বিস্তার থামাতে লকডাউন ব্যবস্থা এখনো প্রয়োজন।
বিশ্ব করোনা আগ্রাসনের ছয় মাস অতিক্রম করেছে আর আমরা বাংলাদেশে করেছি ১৩০তম দিন। এতদিন মানুষকে আটকে রাখা কঠিন এক কাজ- কোনো দেশই পারছে না। বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। জীবন-জীবিকা মুখোমুখি- একটি ছাড়া আরেকটি চলে না।
সব তথ্য-উপাত্ত-আলোচনায় উঠে আসে- আগামী বছরের শুরুর আগে বাজারে ভ্যাকসিন আসবে না । এর আগে চলে আসলে সবাই খুশি। এছাড়া করোনা অ্যান্টিবডির ধরন-কার্যকাল নিয়েও চলছে নানা গবেষণা। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন ১ বছরের বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা দেবে না। আবার আরেক গবেষণায় এসেছে তিন মাসে অ্যান্টিবডি কমে যায় , ২৩ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসে।
চলছে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথম সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতা, চলছে বাজারে প্রথম নিয়ে আসার মানবিক-ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুব তাড়াহুড়োর সুযোগ নেই। আমরা চাই মানসম্পন্ন করোনা ভ্যাকসিন যা আমাদের করোনা ভাইরাসের হিংস্রথাবা থেকে মুক্তি দেবে। যারাই প্রথম বাজারজাত করুক বাংলাদেশ প্রথম ধাপেই পেয়ে যাবে এ ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন দেশের সরকার সরব রয়েছে যেন স্বল্প আয়ের দেশের মানুষ সময়মতো এ ভ্যকসিন পেতে বঞ্চিত না হয়।
যাই হোক, আমাদের সুস্থ জীবন নিয়ে বাঁচতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবিকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি আর করোনাভাইরাস সঙ্গে নিয়েই হয়তো চলতে হবে অনাদিকাল তাতে যদি পাল্টে যায় অতীত জীবনের সকল অভ্যাস-বদঅভ্যাস, যাক না- নতুন করে শুরু হোক জীবন-যাপন।
অপেক্ষায় আছি-থাকব যদি করোনা ভ্যাকসিন পাশে এসে নবশক্তি জোগায়।
লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/পিআর