শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন দিন
সীমিত আকারে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে সম্প্রতি বক্তব্যও পেশ করেছেন। মন্ত্রী পরবর্তীতে এও বলেছেন- “পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষাই শেষ কথা নয়। এক বছরে সব শেষ হয়ে যাবে তাও নয়” শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য বেশ ভালো লেগেছে আমাদের। তবে সরকারের ভাবনায় আনা সীমিত পরীক্ষার বিষয়টি আতংকেরই বটে!
এচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কম সংখ্যক পরীক্ষা নেওয়া, পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়িয়ে পরীক্ষা নেয়া হলে কি দাঁড়াবে? প্রায় ১৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নিচ্ছে। যেভাবেই পরীক্ষা হোক এই সংখ্যক পরীক্ষারর্থীকে পরীক্ষা দিতে একই সাথে বের হতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকবেন আরও ১/২ জন করে অভিভাবক। পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, কেন্দ্রের শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী এ নিয়ে প্রায় কম করে পরীক্ষার দিন অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হবে। প্রশ্ন হলো ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থী কিভাবে কেন্দ্রে যাবে? কোন পরিবহন যোগে অবশ্যই। পরিবহনের চড়তে গিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের করোনা আক্রান্তের আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। এরপর শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অধিকাংশই কিন্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসচেতন ধরে নিতেই হবে। তারা পরীক্ষা দিতে এসে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সামাজিক দুরত্ব কতটা বজায় রাখতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। অভিভাবকরাও কি এসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারবেন? প্রশ্নই আসেনা। তাহলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অসংখ্য পরীক্ষার্থী যারা এতদিন ঘরেই নিরাপত্তা বজায় রেখে চলেছে তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এটাই কিন্তু স্বাভাবিক।
শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকগণ করোনা আক্রান্ত হলে এর দায় কে নেবে? জনগণ কিন্তু নিশ্চিৎ সরকারকেই এজন্য দায়ী করবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়াও হবে তখন। তাতে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হবে বৈকি! আমাদের দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচার অপপ্রচার কিভাবে হয় তা কিন্তু আমরা বেশ জানি। গুটিকয়েক চালচোরা, ত্রাণচোরার কারণে দেশের সকল জনপ্রতিনিধিদের ঢালাওভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় করার ঘটনা অতীত নিকটেরণে মারা গেলেও এটাকে এক শ্রেণির মানুষ ভিন্নখাতে নিয়ে সরকারকে নাজেহাল করতে চাইবে। তাছাড়া এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী অভিভাবক, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের সমাগমে করোনা ছড়াবেই এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। প্রশ্ন হলো নিশ্চিৎ বিষয়টিতে সরকার কেন ঝুঁকি নিতে যাবে। তা যদি হয় তাতে সরকারকে অনেক বেশিই খেসারত দিতে হতে পারে।
এজন্য কি করা দরকার? উন্নত বিশ্বে করোনাকালীন সময়ে অটোপ্রমশন দিচ্ছে এমন খবর আমরা পাচ্ছি। এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়া এমন কি পার্শ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারতও স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অটোপ্রমশোনের ঘোষণা দিয়েছে। সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ বহু দেশ অটোপ্রমশোন দিয়ে সামনের শিক্ষাকে গতি দেয়ার চেষ্টা করছে। চলতি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভারতের এনডিটিভি, আনন্দবাজারসহ বেশ ক’টি পত্রিকায় দেখলাম, করোনা পরিস্থিতিতে এ বছরের জন্য সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রাজস্থান সরকার। তবে এসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ধাপে উত্তীর্ণ করা হবে বলে জানানো হয়। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, করোনা মহামারির কারণে রাজ্য সরকার এ বছরের জন্য সব পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা ছাড়াই পাস করানো হবে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসারে তাদের স্কোর করা হবে বলে তিনি জানান।
এ ক্ষেত্রে অটোপ্রমোশনে আমাদের দেশে সমস্যা কোথায়? এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে এইচএসসিতে অটোপ্রমোশন হতেই পারে। তা না হলে পিএসসি, জেএসসির ফলাফলও বিবেচনায় আনা যায়। অটোপ্রমোশন হলে লাভ কিংবা লোকসান কি? এতে ৮ থেকে ১০% শিক্ষার্থী ফলাফলে কেবল খুব সামান্য লাভ-লস হতে পারে। কোন প্রকার ক্ষতি নয়। যেমন, পরীক্ষা হলে যারা এ গ্রেডের নিচে ফলাফল করতো তারা হয়তো এ গ্রেড পেয়ে যাবে আগের ফলাফলের কারণে। এছাড়া যাদের এসএসসিতে এ গ্রেড ছিলো কিন্তু তারা এ+ পেতে পারতো এ ক্ষেত্রে এমন শিক্ষার্থীর কিছুটা ক্ষতি হয়তো হবে। তবে এর পরিমাণ হবে খবই কম। এটা অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থী কিছুটা লাভ লেকসানে পড়তে পারে। সংকটকালীন সময়ে এমন একটুআধটু সমস্যা কিন্তু মেনে নিতেই হয়। তাছাড়া কোভিট করোনা মহামারি সংকট কিন্তু বিশ্বজুড়ে এক মহাসংকট। অনেক দেশই যখন এমনটা ভাবছে তখন বাংলাদেশেরও তা ভাবা উচিৎ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলাফলে খুব একটা তারতম্য হবে না। পরীক্ষা দিতে না পেরে এচএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম ভাবনার মধ্যে পরেছে। একদিকে পরীক্ষা অন্যদিকে ভর্তিও প্রস্তুতি সব যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তাদের।
অটোপ্রমোশন হলে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভাবনা কমবে। মানসিক অশান্তি দূর হবে। সব চেয়ে বেশি লাভের বিষয় হচ্ছে তারা সামনের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।
লেখক : সাংবাদিক।
এইচআর/জেআইএম